লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

যুবদল কর্মীর শরীরে ৪২ কোপ, চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন এ্যানি

যুবদল কর্মী আব্দুল মান্নান ছুট্টুর সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। ছবি : সংগৃহীত
যুবদল কর্মী আব্দুল মান্নান ছুট্টুর সঙ্গে দেখা করেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। ছবি : সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সানারপাড় এলাকায় আন্দোলনের সময় বিএনপির মিছিলে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের বর্বর হামলার শিকার হন লক্ষ্মীপুরের যুবদল কর্মী আব্দুল মান্নান ছুট্টু। সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন মিয়াসহ তার লোকজনের ৪২ কোপে ছুট্টু মৃত্যুশয্যায় পতিত হয়। তার বাঁ হাতের একটি আঙুল কেটে দেয়। কেটে দেওয়া হয়েছিল ডান পায়ের রগ। মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে সেই কোপের চিহ্নই প্রমাণ করে ঘটনার ভয়াবহতা।

সম্প্রতি স্থানীয় একটি অনলাইন গণমাধ্যমে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে থাকা ছুট্টুকে নিয়ে ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে ছুট্টু নিজেই বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির কাছে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া দাবি জানান। ভিডিওটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপি নেতা এ্যানির নজরে পড়েন। এতে তারেক রহমানের নির্দেশে ছুট্টুর চিকিৎসার দায়িত্বভার নেন এ্যানি। প্রথমে তিনি মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বলে এই আশ্বাস দিয়েছিলেন।

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ্যানি চৌধুরী লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার হাজিরপাড়া ইউনিয়নের মুসলিমাবাদ গ্রামে ছুট্টুর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি ছুট্টুর চিকিৎসার দায়িত্ব, ঘর নির্মাণসহ তার ছেলের পড়ালেখার দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এ সময় ছুট্টুর সকল কথা শোনেন এবং তার ভাই ইব্রাহিম ও গিয়াস উদ্দিনসহ স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এ্যানি চৌধুরী। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন মিয়াসহ অন্যদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য পরমর্শ দেন তিনি।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি ওয়াহিদ উদ্দিন চৌধুরী হ্যাপি, চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি এম বেল্লাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক এম ইউছুফ ভূঁইয়া, জেলা কৃষক দলের সিনিয়র সহসভাপতি বদরুল ইসলাম শ্যামল, সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেল প্রমুখ।

এদিকে এ্যানি চৌধুরীকে কাছ পেয়ে ছুট্টু নিজেই স্লোগান তোলেন। তার দাবি, আওয়ামী লীগ নেতা ইয়াছিন মিয়াসহ তার লোকজন তাকে (ছুট্টু) কুপিয়েছে। শেখ হাসিনা ভারত পালিয়েছে। ইয়াছিন দেশেই পালিয়ে আছে, তার বিচার নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপির জন্য রক্ত দিয়েছে, প্রয়োজনে আরও রক্ত দেবে। শেখ হাসিনারও বিচার হতে হবে। এ ছাড়া তারেক রহমান ও এ্যানি চৌধুরীর কাছে উন্নত চিকিৎসা, ছেলে সাইমুনের (১২) পড়লেখার দায়িত্ব, ঘর নির্মাণ এবং বাড়িতে প্রবেশের রাস্তা নির্মাণের দাবি জানিয়েছে।

এ্যানি চৌধুরীকে ছুট্টু জানান, হাজিরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের রাজনীতিতে তিনি সক্রিয় ছিলেন। এলাকায় থাকতে না পেরে সিদ্ধিরগঞ্জে সানারপাড় এলাকায় ভাইয়ের বাসায় গিয়ে অবস্থান নেন। ২০১৬ সালে বিএনপির মিছিলে গেলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়াসহ তার লোকজন তাকে আটক করে। সেখানে প্রথমে তার হাতের আঙুল কেটে দেয়। একে একে তার শরীরে উপর্যুপরি কুপিয়ে মৃত ভেবে তাকে ফেলে রাখে।

শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে ছুট্টুর চিকিৎসার ভার আমি নিয়েছি। ইতিমধ্যে পিজি হাসপাতাল ও সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে কথা বলেছি। তাকে উন্নত চিকিৎসার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করা হবে। তাকে একটি ঘর করে দেওয়া হবে। তার ছেলের পড়ালেখার দায়িত্বও আমি নিয়েছি। তার আর আমাদের একই দাবি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

স্থানীয়রা জানায়, ছুট্টু মুসলিমাবাদ গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে। তার একটি সুন্দর সংসার ছিল। হামলার পর তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়ে। প্রথমদিকে তার স্ত্রী ও একমাত্র সন্তান পাশে থাকলেও পরবর্তীতে স্ত্রী অন্যত্র চলে যায়। সন্তানের দায়িত্বও আর নেননি। সন্তান এখন এতিমখানায় বড় হচ্ছে। পরে তাকে দেখাশোনার জন্য গ্রামের এক প্রবীণ ব্যক্তি ও এক চাচাতো ভাইকে মাসিক ১০ হাজার টাকা বেতনে রেখেছে তার ভাইয়েরা। তিনি এখনো নিজে খাবার খেতে পারেন না, হাতে তুলে দিতে হয়। কারণ হাতের আঙুলগুলে মুষ্ঠিবদ্ধ করার শক্তি তার নেই। একা উঠে দাঁড়াতেও পারেন না তিনি।

ছুুট্টুর ভাই বিল্লাল হোসেন বলেন, ছুট্টু তিন মাস ইউরোপ বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন মাস লাইফ সাপোর্টে ছিল। ৬ মাস ওই হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছে। তার চিকিৎসায় ৪২ লাখ টাকা খরচ করেছি। এরপর বাড়িতে এনেও তাকে বেডে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ্যানি চৌধুরী বাড়িতে এসে ছুট্টুর চিকিৎসার বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন। ছুট্টু আবারও চিকিৎসা পাবে, এতে আমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি তারেক রহমান ও এ্যানি চৌধুরীর প্রতি।

ছুট্টুর ভাই গিয়াস উদ্দিন বলেন, মস্তিষ্কে আঘাতের কারণে ছুট্টু স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারবে না। তখন চিকিৎসকরা বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন। আর্থিক সংকট আর আওয়ামী লীগের লোকজনের কারণে আমরা তা পারিনি। মামলা করতে গেলেও আওয়ামী লীগের লোকজনের ভয়ে পুলিশ মামলা নেয়নি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মুক্তিযোদ্ধাকে নানা সাজিয়ে ‘ভুয়া তথ্যে’ পুলিশে চাকরি

‘গুলি করে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ শেষ করে দেওয়া উচিত’

হাসিমুখে কারাগারে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা জুবায়ের, জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ

অভ্যুত্থানের পর নির্বাচনের তারিখ জানাল সিরিয়া

‘৭৩ বছর বয়সে ২০ বার নদীগর্ভে চলে গেছে বসতভিটা’

যুক্তরাজ্যের সরকারি মানচিত্রে ফিলিস্তিনের নাম

রংপুর পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের সম্মেলনে জাতীয় উন্নয়নে কাজ করার অঙ্গীকার

বিশ্বের শীর্ষ ২ শতাংশ গবেষকদের তালিকায় রাবির প্রাক্তন শিক্ষার্থী ড. মুছা

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পর নতুন যে সমীকরণ বাংলাদেশের সামনে

৩০-এর পর মা হতে চাইলে জেনে নিন গাইনির এই ৫ সতর্কতা

১০

কমপ্লিট শাটডাউনে ফাঁকা রাবি ক্যাম্পাস

১১

নোয়াখালী জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ঢাকায় গ্রেপ্তার

১২

আরেক হত্যা মামলায় সালমান-আনিসুল-আতিক গ্রেপ্তার

১৩

জনগণ ট্যাক্স দেয় কিন্তু সেবা পায় না, গোস্‌সা তো করবেই : অর্থ উপদেষ্টা

১৪

মধুচন্দ্রিমায় মালদ্বীপ যাচ্ছেন শবনম ফারিয়া

১৫

গায়ানাকে হারিয়ে ৫ বছর পর সিপিএলের শিরোপা নাইট রাইডার্সের

১৬

পুকুর থেকে ২ কোটি টাকা মূল্যের বিষ্ণুমূর্তি উদ্ধার

১৭

গবেষণা / কেন পুরুষদের তুলনায় নারীদের মাইগ্রেন বেশি হয়

১৮

প্রাক্তনের কাছে ফেরার আগে নিজেকে করুন এই ৫ প্রশ্ন

১৯

কেন বাড়ছে তেলের দাম

২০
X