শখ ছিল চোখের সামনে ছুটে বেড়াবে রঙিন মাছ, দেখে চোখ জুড়াবে! ১ হাজার ৩০০ টাকা ব্যয় করে দুটি পানিভর্তি ড্রামে ছাড়া হয় অল্প কিছু রঙিন মলি ও গাপ্পি মাছ। সেই শখ দিনে দিনে মনের ভেতর যেভাবে ডালপালা ছড়িয়েছে, তেমনি দুটি ড্রামের বদলে এখন তিনটি খামার ও ৯০ প্রজাতির ২০ লাখের বেশি রঙিন মাছের ছোটাছুটি, আছে লবস্টারও। সেসবের কেনাবেচায় এখন প্রতি মাসে আয় লাখ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
এ গল্প কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার প্রজেশ্বর চন্দ্র জয় নামের এক সফল উদ্যোক্তার। নাঙ্গলকোট ও বুড়িচং উপজেলায় ‘আর বি ফিশ ফার্ম’ নামে তিনটি আধুনিক মাছের খামারের স্বত্বাধিকারী তিনি।
সরেজমিন দেখা যায়, শতাধিক চৌবাচ্চায় রঙিন মাছের ছোটাছুটি। লাল, নীল, হলুদ, সাদা, কালো, কমলাসহ বাহারি রং। খামারে এসব মাছ দেখতে প্রায় প্রতিদিনই ভিড় করেন শৌখিন মানুষজন। চলে কেনাবেচাও।
কালবেলার প্রতিনিধির সঙ্গে কথা হয় এই সফল উদ্যোক্তার। তিনি জানান, ২০১৯ সালে মাত্র ১ হাজার ৩০০ টাকায় শুরু হয়ে খামারগুলোতে তার বর্তমান বিনিয়োগ প্রায় ২৫ লাখ টাকা। তার খামারে বর্তমানে মলি, গাপ্পি, প্লাটি, গোল্ডফিশ, অ্যাঞ্জেল ফিশ, রেইনবো ফিশ, ফাইটার ফিশ, টেট্রা, ক্যাট ফিশসহ প্রায় ৯০ প্রজাতির রঙিন মাছ রয়েছে।
প্রতিটি প্রজাতির মাছের জন্য আলাদা পরিচর্যা প্রয়োজন হয়। ডিম ছাড়ানো থেকে শুরু করে বাচ্চা ফোটানো, প্রতিদিন খাবার দেওয়া, পানি পরিবর্তন, অক্সিজেনের ভারসাম্য রাখা এবং রোগবালাই প্রতিরোধ করা প্রতিটি ধাপেই দিতে হয় বাড়তি শ্রম। এ কারণে ভোর থেকে রাত অবধি খামারের কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় তাকে।
প্রজেশ্বর চন্দ্র জয় বলেন, ‘শুরুতে পরিবার ও আশপাশের লোকজন হাসাহাসি করলেও এখন সবাই অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। প্রতি মাসে দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করতে পারছি। স্বপ্ন এখন আরও বড়।’
তিনি জানান, তার খামারের মাছ শুধু কুমিল্লা ও ঢাকায় নয়; নেওয়া হয় চট্টগ্রাম, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর ও বগুড়ায়ও। অনলাইনের মাধ্যমেও নিয়মিত অর্ডার পান। তার এই সফলতা দেখে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যক্তির অনেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন।
কুমিল্লা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন বলেন, দেশে মৎস্য উৎপাদনে কুমিল্লার অবস্থান দ্বিতীয়। দেশে রঙিন মাছের চাহিদা বেশ দ্রুত বাড়ছে। প্রজেশ্বর চন্দ্র জয়ের মতো তরুণ উদ্যোক্তারা রঙিন মাছ চাষে এগিয়ে আসায় নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে এটি রপ্তানি শিল্প হিসেবেও গড়ে উঠতে পারে। মৎস্য দপ্তর থেকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন