মাস্টাররোলে নাম রয়েছে, রয়েছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডও। তারপরও এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ১৫ টাকা কেজি খাদ্যবান্ধবের চাল পায়নি সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার যমুনাপারের হতদরিদ্র একাধিক উপকারভোগী।
বিষয়টি জেনে তদারকি (ট্যাগ) অফিসারের কাছে ভিড় জমিয়েছেন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডধারী একাধিক হতদরিদ্র মানুষ। তাদের দাবি, ২০২৪ সালের ৫ আগষ্টের পর তারা কোনো চাল পাননি। তবে বিগত দিনে চাল বিতরণের মাস্টাররোলে এসব কার্ডধারীদের নাম রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদারকি কর্মকর্তা মামুন সিরাজ।
অভিযোগ উঠেছে চৌহালীর দুর্গম চরাঞ্চল স্থল ইউনিয়নে ডিলার মো. হাসান আলী খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস ও তদারকি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে হতদরিদ্রদের বরাদ্দকৃত চাল কালোবাজারে বিক্রি করে আসছেন।
অভিযোগে জানা যায়, ৫৮৭ কার্ডধারী উপকারভোগী সদস্যের জন্য ৫৮৭ বস্তা চাল বরাদ্দ পান ডিলার হাসান আলী। প্রতিজন কার্ডধারীকে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেওয়ার কথা। কিন্তু তিনি কিছু চাল বিতরণ করে বাকিগুলো কালোবাজারে বিক্রি করে দেন।
হতদরিদ্র উপকারভোগীরা বলেন, আমরা অনেক কার্ডধারীরা জানি না আমাদের নামে কার্ড আছে। কথা হয়, হাটার চর এলাকার মোছা. হাসিনা খাতুন, নওহাটার রশিদুল কাজী, নয়াপাড়া সাথী খাতুনের সাথে। তারা বলেন, আমাদের কার্ড আছে। কিন্তু এক বছর ধরে আমাদের কোনো চাল দেওয়া হয়নি। সন্তোষা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম, দিঘলবাড়ি গ্রামের আলেক চান, ফলসাটিয়া গ্রামের আব্দুল্লাহ, নওহাটা গ্রামের কোরবান আলীও এক বছরে কোনো চাল পাননি বলে জানান।
নওহাটার গোলজার শেখ বেশ কয়েক মাস আগে মারা গেছেন, মাস্টাররোলে তার নামেও চাল উত্তোলন দেখানো হয়েছে। তার ছেলের বউ রুমা খাতুন বলেন, আমার মৃত শ্বশুরের নামে চাল কে উত্তোলন করছে আমরা জানি না।
নয়াপাড়া গ্রামের মোছা. শাফি খাতুন তিন বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ থাকলেও তার নামে কার্ড করা হয়েছে এবং চাল উত্তোলন করা হচ্ছে।
এদিকে গত ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট ৫৮৭ বস্তার মধ্যে ২৯০ বস্তা চাল বিতরণ করেছেন হাসান আলী। বাকি চাল বিতরণ না করেই মাস্টার রোল তৈরি করেছেন।
দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি (ট্যাগ) অফিসার মামুন সিরাজ জানান, ১১ আগস্ট ট্যাগ অফিসার হিসেবে আমাকে নিযুক্ত করা হয়। আমি ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত নিজে উপস্থিত থেকে ২৯০ বস্তা চাল বিতরণ করেছি। দ্বিতীয় চালানে অবশিষ্ট চাল উত্তোলনের পর বিতরণের কথা থাকলেও আমাকে কিছুই জানানো হয়নি। পরে ডিলার মাস্টাররোলে স্বাক্ষর চাইলে আমি আপত্তি জানাই এবং বিষয়টি ইউএনওকে অবগত করি।
তবে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে ডিলার হাসান আলী বলেন, আমি নিয়ম অনুযায়ী যাদের কার্ড আছে তাদের চাল দিয়েছি।
চৌহালী উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (অ.দা.) আনোয়ার হোসেন বলেন, চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে তদারকি অফিসার অভিযোগ করেছেন। ইউএনও তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন।
তবে এ বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সাংবাদিক ফোন দিয়েছিলেন, তবে অন্য কাজে ব্যস্ত ছিলাম।
সাংবাদিকের মাধ্যমে জেনে বিষয়টি খোঁজ নিয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তাহলে পেট ব্যথা যার, সে খোঁজ না নিয়ে ডাক্তারই খোঁজ নেওয়ার মতো বিষয় হলো না? এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তিনি বলেন, ‘কার বাড়ি কোন সমস্যা সেটা ইউএনও দেখবে নাকি? আপনি তো একটি নিয়ে থাকেন আমি হাজারও সমস্যা নিয়ে থাকি।’
মন্তব্য করুন