ঢাকার নবাবগঞ্জ আইডিয়াল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. আলীর বিরুদ্ধে আনীত ছাত্রী হয়রানির অভিযোগকে ‘মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ, মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুণ্ন ও রাজনৈতিক হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে ঘটনার ৮ দিন পর ছাত্রীর মা মোসা. শিল্পী প্রথমে সংবাদ সম্মেলন এবং পরে মামলা করেছেন।
শুক্রবার (৩ অক্টোবর) আইডিয়াল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা তাজুল ইসলাম এবং মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এ দাবি করেন। এ সময় তারা অধ্যক্ষ মো. আলী উল্লিখিত ঘটনার দিন মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকার পক্ষে কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করেন।
ঘটনার দিন অধ্যক্ষ ছিলেন নির্বাচনী গণসংযোগে উল্লেখ করে শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলেন, উল্লিখিত ঘটনার দিন ২৩ সেপ্টেম্বর যে সময়ের উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সময় অধ্যক্ষ মো. আলী মাদ্রাসাতেই ছিলেন না। তিনি তখন পাশের উপজেলা দোহার উপজেলার সুতারপাড়া ইউনিয়নে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা-১ আসনের এমপি প্রার্থীর নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যস্ত ছিলেন। তারা জানান, এই গণসংযোগের চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ প্রচারিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার আমরা গভীর দুঃখ ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুণ্ন করার জন্য আমাদের মাদ্রাসার এক শিক্ষার্থীর মা মোসা. শিল্পী আমাদের প্রিন্সিপাল, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, শিক্ষার্থীদের পিতৃ সমতুল্য অভিভাবক এবং বরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ, রাজনৈতিক হিংসা চরিতার্থ করতে মিথ্যা, বানোয়াট এবং বিভ্রান্তিকর অভিযোগ এনে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।
তারা প্রশ্ন তোলেন, ঘটনার দিন অভিযোগ না করে সরকারি একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কীভাবে সংবাদ সম্মেলন করা হলো, তা তাদের কাছে বোধগম্য নয়। পরবর্তীতে ঘৃণ্য রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের অংশ হিসেবে উল্লিখিত ঘটনার ৮ দিন পর বৃহস্পতিবার রাতে মামলা করা হয়েছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।
মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি ও প্রমাণ অধ্যক্ষের অনুপস্থিতি : অভিযোগকারী ২৩ সেপ্টেম্বর তারিখ উল্লেখ করেছেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই দিন অধ্যক্ষ মো. আলী দোহারের সুতারপাড়ায় জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী গণসংযোগে ব্যস্ত ছিলেন। ফেসবুকে লাইভ প্রচারিত ভিডিওতে সুস্পষ্টভাবে দেখা যায়, তিনি সুতার পাড়ায় গণসংযোগে ব্যস্ত এবং সেখানে জোহরের আজান শোনা যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীর নিয়মিত উপস্থিতি : উল্লিখিত মিথ্যা ঘটনার পরও মাদ্রাসা খোলা ছিল ছয় কার্যদিবস। এর মধ্যে এক দিন বাদে বাকি পাঁচ কার্যদিবস অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাসে এসেছে। শিক্ষক ও অভিভাবকরা প্রশ্ন তোলেন, যদি এমন কোনো ঘটনা ঘটত, তাহলে কি ওই শিক্ষার্থী নিয়মিত মাদ্রাসায় যেত? সে কি এই ঘটনা তার কোনো ক্লাসমেট বা শিক্ষক বা অভিভাবকের সঙ্গে শেয়ার করত না? তারা জোর দিয়ে বলেন, এটি একটি সুগভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
অধ্যক্ষের কোনো আলাদা রুম নেই : সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীর মা উল্লেখ করেছেন, তার মেয়েকে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী তার আলাদা রুমে ডেকেছিলেন। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এর প্রতিবাদ করে বলেন, এই মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের জন্য কোনো আলাদা রুম নেই। অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী যে রুমে বসেন, সেখানে শিক্ষক ও অফিস সহকারীরাও বসেন এবং অধ্যক্ষের পাশেই অভিভাবকদের বসার রুম। এ থেকেই পরিষ্কার, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ কল্পিত ও বানোয়াট।
সুষ্ঠু তদন্তের দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলেন, এই ঘটনার মাধ্যমে মাদ্রাসার সুনামসহ একজন সম্ভাবনাময়ী সৎ, চরিত্রবান, দেশপ্রেমিক আলেম ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।
তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী ও সাংবাদিকদের প্রতি অনুরোধ করেন, এ জঘন্য মিথ্যাচারের ঘটনা তদন্ত করে সত্য উন্মোচিত করবেন। কারও চাপে প্রভাবিত না হয়ে জনগণের নিকট দায়বদ্ধতা থেকে সমাজে ন্যায়, ইনসাফ ও সত্য প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবেন।
সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসার সব শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী, পরিচালক, শুভাকাঙ্ক্ষী এবং এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন