কোমল ডানার বর্ণচ্ছটায় প্রকৃতির ওপর মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে একই প্রজাতির কয়েকটি প্রজাপতি। এরা উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে এ ফুল থেকে ও ফুলে। বিরামহীন বসছে এ গাছের পাতা থেকে ও গাছের পাতায়। এদের স্পন্দনশীল উপস্থিতি যেন প্রকৃতিকে রঙময় ও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। এরা যেন অলংকার হয়ে শোভা বাড়াচ্ছে প্রকৃতির।
এমনই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা গেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার এক নার্সারিতে। মনোমুগ্ধকর এ দৃশ্য সহজেই নজর কাড়বে যে কারও। চোখজুড়ানো অনিন্দ্যসুন্দর এ প্রজাপতির নাম সাতডোরা। অঞ্চলভেদে এটি রুরু বা দোলবাসন্তী নামেও পরিচিত। তবে সাতডোরা নামটিই বেশি প্রচলিত।
সাতডোরা প্রজাপতির একটি প্রজাতি। সবচেয়ে সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন প্রজাপতিগুলোর মধ্যে সাতডোরা অন্যতম। এটির বৈজ্ঞানিক নাম প্যাপিলিও ডেমোলিয়াস। ইংরেজি নাম লাইম সোয়ালোটেইল বা সাইট্রাস বাটারফ্লাই। এরা প্যাপিলিওনিডি পরিবারের এবং প্যাপিলিওনিনি উপগোত্রের সদস্য।
সাতডোরা লেজবিহীন হলুদ ফুটকিযুক্ত কালো রঙের প্রজাপতি। এ প্রজাতির প্রজাপতির দেহের রং কালচে খয়েরি। এদের ডানায় উজ্জ্বল হলুদ রঙের কারুকার্যময় নকশা রয়েছে। এদের সামনের ডানার ওপরে ও নিচে অনিয়ত হলুদ ডোরার নকশা রয়েছে। পেছনের ডানায় ভূমিকোণপ্রান্তে লাল গোলাকার ও শীর্ষপ্রান্তে কালোর ওপর নীল ফুটকি রয়েছে। সাতডোরা প্রজাতির প্রজাপতি বেশ চঞ্চল। এরা স্থির হয় খুব কম। প্রজাপতিরা ৩ থেকে ৬ দিন বাঁচে। অতিমাত্রায় কীটনাশক ব্যবহারের ফলে সাতডোরাসহ অন্যান্য প্রজাতির প্রজাপতি অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে।
সাতডোরা প্রজাতির প্রজাপতিরা ঝোপঝাড়, গাছপালা বেষ্টিত স্থান, ফুলবাগান ঘিরে বিচরণ করে। এরা লেবুগাছের পাতায় ডিম পাড়ে। ডিম থেকে এদের লার্ভা (শুঁয়াপোকা) জন্ম নেয়। এদের লার্ভা (শুঁয়োপোকা) লেবু পাতা খেয়ে জীবনধারণ করে। তবে এরা পূর্ণাঙ্গ প্রজাপতিতে রূপান্তরিত হয়ে পরাগায়নের মাধ্যমে ফসল ও প্রকৃতির উপকার করে।
সাতডোরা প্রজাপতিসহ অন্যসব প্রজাপতি খাদ্যের স্বাদ পরীক্ষা করতে পা ব্যবহার করে থাকে। এরা ফুল থেকে মিষ্টি তরল (মধু), শর্করা ও খনিজ পদার্থ গ্রহণ করে। প্রজাপতি স্যাঁতসেঁতে জায়গা থেকে পানি পান করে পানিশূন্যতা মেটায়। প্রজাপতি খাদ্যশৃঙ্খলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য নির্দেশক হিসেবে কাজ করে।
সাতডোরা প্রজাতির প্রজাপতি বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে কমবেশি রয়েছে। প্রকৃতির সবখানে এদের দেখা গেলেও বেশি দেখা যায় লেবুবাগান, লেবুগাছ বা লেবুগোত্রীয় গাছের আশপাশে। কারণ এরা লেবুগাছের মাধ্যমেই বংশবিস্তার করে থাকে। এজন্য এদেরকে লেবু প্রজাতিও বলা হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মায়ানমার, শ্রীলংকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এদের উপস্থিতি রয়েছে। এরা ক্লান্তিহীনভাবে উড়তে সক্ষম। এরা উড়তে উড়তে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় অনায়াসেই চলে যেতে পারে। এরা খুব দ্রুত উড়তে সক্ষম।
নার্সারির মালিক কামরুল ইসলাম বলেন, কাজের ফাঁকে ফাঁকে প্রজাপতিদের ওড়াউড়ির সুন্দর দৃশ্য দেখি। এদের ওড়াউড়ির সুন্দর দৃশ্যে মন ভরে যায়। তবে এদের ডিম থেকে জন্মানো বাচ্চারা গাছের পাতা খেয়ে নার্সারির ক্ষতি করে। তবুও প্রজাপতির সৌন্দর্য উপভোগ করার মধ্যে আলাদা তৃপ্তি আছে।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, প্রজাপতির চোখজুড়ানো উড়ন্ত নৃত্যে আকৃষ্ট হবে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া ভার। সাতডোরা প্রজাপতি সুন্দর প্রজাতিরগুলোর একটি। চোখ আটকে যাওয়ার মতো এদের সৌন্দর্য।
তিনি আরও বলেন, সাতডোরা প্রজাপতিসহ অন্য প্রজাপতিরা পরাগায়নে সাহায্য করে, যা ফল ও বীজ উৎপাদনে সহায়ক। অন্যদিকে তাদের বাচ্চা (শুঁয়োপোকা বা লার্ভা ) পাতা ও ফুল খেয়ে ফসল নষ্ট করে। অধিকাংশ প্রজাপতির লার্ভা বা শুঁয়োপোকা ফসলের জন্য ক্ষতিকর।
মন্তব্য করুন