এই উদ্ভিদ থেকে ওই উদ্ভিদে উড়ে উড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরুদেহী কয়েকটি ফড়িং। এদের নাম মার্শ ডার্ট। এদের এ খুনসুটিতে প্রকৃতি মেতে উঠেছে। অনিন্দ্যসুন্দর ফড়িংয়ের মোহনীয় সৌন্দর্যে সুন্দর প্রকৃতি যেন আরও বেশি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। এমনই দৃশ্য দেখা গেছে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আঙিনায়।
জানা গেছে, মার্শ ডার্ট-এর বৈজ্ঞানিক নাম সেরিয়াগ্রিওন সেরিনোরুবেলাম। এরা সিনাগ্রিওনিডি গোত্রের মাঝারি আকারের ড্যামসেলফ্লাই। এটি এশিয়ার ড্যামসেলফ্লাইয়ের একটি খুব সাধারণ প্রজাতি। এটি ওডোনাটা বর্গের একটি পতঙ্গ। এদের বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশসহ চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ানে সচরাচর দেখা যায়। মার্শ ডার্ট সাধারণত কমলা লেজযুক্ত দ্বি-রঙের ড্যামসেলফ্লাই। এর কোনো বাংলা নাম না থাকায় এটি সুচের মতো সরুদেহী হওয়ায় এটিকে অনেকেই সুচফড়িং নামে ডাকে। এ ছাড়া এটিকে ব্লু স্প্রাইট, ব্লু রিভার ড্যামসেল, ব্লু গ্রাস ডার্ট বলা হয়। ইংরেজি নামের অনুবাদ অনুসারে এটিকে নীলপরি, নীল নদীর মেয়ে নামে ডাকা হয়। তবে সুচফড়িং নামটাই বেশ পছন্দসই মনে হয়।
মার্শ ডার্ট সাধারণত বিভিন্ন জলাশয়ে, জলাশয়ের পাড়ে, বিভিন্ন ফসলি জমিতে, বিভিন্ন উদ্ভিদের ওপর বসে, ওড়াউড়ি করে ও বিশ্রাম নেয় এবং বসবাস করে। এরা ছোট পোকামাকড়, মশা, মশার লার্ভা, ফ্লাইস ও অন্যান্য উড়ন্ত বা জলজ ছোট কীট খেয়ে জীবনধারণ করে। এদেরকে সাধারণত এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত প্রকৃতিতে ওড়াউড়ি করতে দেখা যায়। মার্শ ডার্ট জলাশয়, পুকুর, খাল বা ডোবায় জীবনচক্র সম্পন্ন করে।
মার্শ ডার্ট কেবল সৌন্দর্যই প্রকাশ করে না, এরা প্রকৃতির বন্ধু। এরা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও ভূমিকা রাখে। জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বাস্তুতন্ত্রেও যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। এরা কৃষকদের কল্যাণেও ভূমিকা রাখে। ফসলের ক্ষতিকর ছোট পোকামাকড় খেয়ে কীটনাশকের প্রয়োগ হ্রাস করে। এ ছাড়া মশা ও মশার লার্ভা খেয়ে মানুষের উপকারেও আসে এই অনন্য সৌন্দর্যের মার্শ ডার্ট।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফারজানা বাহার বলেন, মার্শ ডার্ট খুব সুন্দর প্রজাতির ছোট আকারের ফড়িং। স্রষ্টার প্রতিটি সৃষ্টির পেছনে মানুষ ও পরিবেশের কল্যাণ নিহিত। মার্শ ডার্ট বা ড্যামসেলফ্লাই মানুষ ও পরিবেশের জন্য উপকারী পতঙ্গ। তবে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে এ ধরনের উপকারী পতঙ্গগুলো দিন দিন পরিবেশ থেকে বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এজন্য স্রষ্টার প্রতিটি সৃষ্টি সংরক্ষণে সমানভাবে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, ড্যামসেলফ্লাই বা মার্শ ডার্ট একটি ছোট আকারের ফড়িং। এ ফড়িং দেখতে বেশ সুন্দর। এরা প্রকৃতির জন্য বেশ উপকারী। এ ছাড়া ফড়িং মশা ও মশার লার্ভা খেয়ে বাস্তুতন্ত্র নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মানুষের উপকার করে থাকে। এজন্য প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় ফড়িংয়ের বাস উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। এতে পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্ভব হবে।
মন্তব্য করুন