ধর্ষণের অভিযোগে আদালতে মামলা করতে যাচ্ছিলেন কিন্তু অভিযুক্তদের হামলার ভয়ে পথ থেকেই ফিরে আসতে হয়। পরে বিষয়টি জানান সাংবাদিকদের। এতেই কপাল পুড়েছে ভুক্তভোগী এক তরুণীর। তাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা শহরের এক কণ্ঠশিল্পীর সঙ্গে এমন ঘটনা ঘটেছে।
ভুক্তভোগী এ কণ্ঠশিল্পীর পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ভুক্তভোগীর সঙ্গে দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক করেছেন। কিন্তু বিয়ের জন্য ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে চাপ দিলে তা অস্বীকার করেন শরীফুজ্জামান শরীফ। ফলে আদালতে মামলার জন্য যাচ্ছিলেন ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু পথিমধ্যে শরীফুজ্জামানের লোকজন তাদের ওপর হামলার প্রস্তুতি নেয়। ফলে পথ থেকে পালিয়ে বাড়িতে ফিরে আসতে বাধ্য হন তারা।
এ ঘটনার পর ধর্ষণের অভিযোগ করে এক প্রবাসী সাংবাদিকের কাছে সাক্ষাৎকার দেন ভুক্তভোগী। সেখানে শরীফুজ্জামানের সঙ্গে তার সম্পর্কের বিষয় প্রকাশ করেন। ওই সাংবাদিকের কাছে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরদিন মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) সকাল ৭টার দিকে নিজ বাড়ি থেকে পুলিশ ভুক্তভোগীকে গ্রেপ্তার করে।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, গ্রেপ্তারের সময় তাদের বাড়ির তিনটি রুমের মধ্যে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয় এবং খাবারের চাল মাটিতে ফেলে দেয়। এটি রাজনৈতিক প্রভাব দেখানোর উদ্দেশে পরিকল্পিত হামলা বলে জানান ভুক্তভোগী।
ওই ভুক্তভোগীকে গ্রেপ্তারের সত্যতা নিশ্চিত করে দর্শনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদ তিতুমীর বলেন, তাকে গ্রেপ্তারে আমি নিজেই নেতৃত্ব দিয়েছি। তার বাড়িতে ভাঙচুরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ নভেম্বর ভারত সীমান্ত থেকে ৩৫০ দশমিক ১২ গ্রাম ওজনের তিনটি স্বর্ণের বার আটক করে বিজিবি। এ সময় আসমা নামে গ্রেপ্তারকৃত এক নারী স্বীকারোক্তিতে এ ভুক্তভোগীসহ চারজনের নাম উল্লেখ করেছেন। এরপরই পুলিশ তাকে (ভুক্তভোগী কণ্ঠশিল্পীকে) গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে।
ভুক্তভোগীর মা জানান, শরিফুজ্জামান শরীফ আমার মেয়েকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দীর্ঘদিন শারীরিক সম্পর্ক করেছে। আমরা যখন চুয়াডাঙ্গা আদালতে ধর্ষণের অভিযোগের জন্য যাচ্ছিলাম, তখন তার লোকজন আমাদের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ফলে আমরা পালিয়ে আসতে বাধ্য হই।
ভুক্তভোগীর বড় ভাই বলেন, আমার বোন সাহসিকতার সঙ্গে সত্য কথা বলেছে। তার এই সাহসিকতার কারণে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে পুলিশ জেল হাজতে দিয়েছে। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় তিনি ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন এবং আমাদের পরিবারের ওপর এ ধরনের আচরণ চালিয়েছেন।
ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, শরীফুজ্জামান শরীফের সঙ্গে আমার দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এক সময় তিনি শারীরিক সম্পর্কেও জড়ায়। বিয়ের কথা বললে তিনি সবসময় এড়িয়ে যেতেন। এ বিষয়ে আমি গণমাধ্যমে মুখ খুললে পুলিশের সঙ্গে আঁতাত করে আমাকে স্বর্ণ চোরাচালান মামলায় জড়িয়ে গ্রেপ্তার করানো হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, আমি সারাদিন মহিলা দলের প্রোগ্রাম ও ভোটের জনসংযোগে ব্যস্ত ছিলাম। তার (ভুক্তভোগী কণ্ঠশিল্পী) গ্রেপ্তারের বিষয়টি পুলিশের বিষয়।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদুল হাসান খাঁন বাবু বলেন, আমি ঘটনাটি আংশিক শুনেছি। আইন সবার জন্য সমান। কেউ যদি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এর দায়ভার তার।
এ বিষয়ে ওসি শহিদ তিতুমীর কালবেলাকে বলেন, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টার দিকে দর্শনা থানার সীমান্তবর্তী কামারপাড়া গ্রাম থেকে ওয়াসিমের স্ত্রী আসমাকে ৩টি স্বর্ণের বারসহ আটক করে চুয়াডাঙ্গা বিজিবি-৬ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা। এ ঘটনায় দর্শনা থানায় বিজিবি একটি মামলা দায়ের করে। এ মামলায় আসমা আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে স্বর্ণ চোরাচালানে তার সঙ্গে জড়িত তার (ভুক্তভোগী কণ্ঠশিল্পীর) নাম উল্লেখ করে।
ওসি জানান, আসমার ১৬৪ ধারার জবানবন্দি থানায় পৌঁছে ৬ অক্টোবর। পূজার ছুটি, শুক্র ও শনিবার ছুটি ছিল এজন্য জবানবন্দি থানায় আসতে দেরি হয়েছে। এরপর ৭ অক্টোবর তাকে (ভুক্তভোগীকে) গ্রেপ্তার করার পর আদালতে প্রেরণ করা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
তবে গ্রেপ্তার আসমা কারও নাম বলেননি বলে জানিয়েছেন চুয়াডাঙ্গার বিজিবি-৬ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লে. কর্নেল নাজমুল হাসান। তিনি বলেন, আমরা যখন আসমাকে আটক করি তখন বিজিবির জিজ্ঞাসাবাদে সে কারও নাম বলেনি। তখন ঘটনার বিস্তারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি মিডিয়াকে আমরা জানিয়েছি।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা কালবেলাকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন