ময়মনসিংহে চব্বিশের জুলাই আন্দোলনে আহত যুবকের সঙ্গে বাস শ্রমিকের বাগবিতণ্ডার জেরে শনিবার সন্ধ্যা থেকে ময়মনসিংহ-ঢাকা বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মী ও পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে দাঁড়ালেও বাস মালিকরা ঢাকাগামী বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অভ্যন্তরীণ সড়কের বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
চার দফা দাবিতে এনসিপি নেতারা শহরের মাসকান্দা বাস টার্মিনালে অবস্থান এবং শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ রেখে এনসিপি নেতাদের বিচার চেয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে দীঘারকান্দা বাইপাস এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি নেয়। এমন অবস্থায় ময়মনসিংহ থেকে সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।
শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুর ১২টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে কয়েক কিলোমিটার সড়কজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।
পরে বিকেলে শ্রমিক নেতা ও এনসিপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় বসে জেলা প্রশাসন। এনসিপি নেতারা অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে যাবে এবং বাস চলাচলে কেউ বাধা দেবে না, এমন আশ্বাস পেয়ে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যায়। কিছু বাস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়েও যায়। কিন্তু বিকেল ৫টা থেকে ফের ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে মাসকান্দা বাস টার্মিনাল থেকে ইউনাইটেড ও সৌখিন এক্সপ্রেসের সব বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়। ঢাকার মালিকদের নির্দেশে বাসচালক-শ্রমিকরা বাস চালানো বন্ধ রাখে বলে জানায় তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যায় জুলাই আন্দোলনে আহত ঢাকাগামী এক যুবকের সঙ্গে ইউনাইটেড বাসের এক শ্রমিকের বাগবিতণ্ডা হয়। এ নিয়ে রাত ৮টা থেকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে এনসিপি ও জুলাই আন্দোলনকারীরা। তারা ইউনাইটেড গাড়ির কাউন্টারে তালা দিয়ে অবস্থান শুরু করলে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ গিয়ে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে।
এ সময় জুলাই আন্দোলনে আহত ব্যক্তির সঙ্গে খারাপ আচরণের অভিযোগে অরুন চন্দ্র দাস নামে এক শ্রমিককে পুলিশ আটক করে। তারপর চার দফা দাবি তুলে অবস্থান অব্যাহত রাখে এনসিপি নেতা ও জুলাই আন্দোলনকারীরা।
ভুক্তভোগী আবু রায়হান বলেন, দুটি টিকিট কেটে বাসে উঠতে গেলে ইউনাইটেড বাসের স্টাফরা আমার সঙ্গে ঝামেলা করে। পরে সিটে বসার ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর বাসের স্টাফ আমার কলার চেপে ধরে অকথ্য গালাগাল করে বুকে ধাক্কা দেয়। আমি কাউন্টারে গিয়ে অভিযোগ করতে করতে বাসটি আমাদের ছেড়ে চলে যায়।
জেলা এনসিপির সদস্য মাহমুদুল হাসান বলেন, আমাদের যে চার দফা দাবি ছিল, প্রশাসন তা মেনে নিয়েছে। একই সঙ্গে ফ্যাসিস্টদের গাড়িগুলোর বিষয়ে কীভাবে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর মাহমুদ আলম বলেন, এনসিপির লোকজন যে দাবিগুলো দিয়েছে, তার সবই মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা চায় বাস জব্দ করে ডাম্পিংয়ে পাঠাতে হবে। এর এখতিয়ার তো আমাদের নেই। শ্রমিক গ্রেপ্তার হওয়ায় অন্য শ্রমিকরা বিষয়টি মানতে পারছে না। আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এসব অন্যায়ের নেপথ্যে যারা, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, আইনের বাইরে তো আমাদের কিছু করার নেই। তারা (এনসিপি) দাবিগুলো না বুঝে করছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ রোডে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ইউনাইটেড ও সৌখিন পরিবহন মালিকরা বন্ধ রেখেছে। তবে অভ্যন্তরীণ বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম কালবেলাকে জানান, পরিবহন মালিক সমিতি এনসিপির দাবি মেনে নিতে রাজি হয়েছিল। তারা ১৬টি বাস ময়মনসিংহ রোডে চলাচল বন্ধ রাখবে। যেসব ফ্যাসিস্ট কর্মচারী রয়েছে, তাদের সরিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এরই মধ্যে এনসিপি ইউনাইটেডের ১৬টি গাড়ি জব্দ করার দাবি জানিয়েছে। কিন্তু এই দাবি পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষে মানা সম্ভব হচ্ছে না। আদালতের হুকুম ছাড়া জেলা প্রশাসক গাড়ি জব্দ করতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, ময়মনসিংহ পরিবহন মালিক সমিতির সিদ্ধান্ত ঢাকার পরিবহন মালিক সমিত মেনে নিতে পারছে না, এ কারণে তারা হয়তো মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড থেকে ইউনাইটেড ও সৌখিন পরিবহন বন্ধ করেছে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছি। এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাব।
মন্তব্য করুন