চাঁদপুরের শাহরাস্তি পৌর শহরে ৩৬০ শতক জায়গার মালিক সামছুল হক ওরফে সামু মাস্টার। যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। কিন্তু সংসার, স্ত্রী, সন্তান সবকিছু ফেলে স্বেচ্ছায় ২২ বছর ধরে দীঘির পাড়ে ঝুপড়ি ঘরে নির্বাসনে দিন কাটাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সামছুল হক।
পরিবারের সূত্রে জানা যায়, অবসরের আট বছর পর নির্বাসনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সামছুল হক। ওই সময় স্ত্রী রাজিয়া বেগম, পুত্র আবদুল কাদের, কন্যা মাহমুদা ও রাবিয়া বেগম তাকে বাধা দেয়। কিন্তু তিনি সবার বাধা উপেক্ষা করে আমৃত্যু নির্বাসনে চলে যান। ২০১৫ সালের ১৬ মে স্বামীকে ফেরাতে ব্যর্থ স্ত্রী রাজিয়া বেগম ইন্তেকাল করেন। স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি আরও নিজের প্রতি বেখেয়ালি হয়ে পড়েন। অতঃপর নামাজ, রোজা আর ইবাদতের মধ্যদিয়ে জীবনের ২২টি বছর কেটে গেছে তার। বর্তমানে তার বয়স ৯৫ বছর।
স্থানীয়রা জানায়, ১৯২৮ সালে সামছুল হক ওরফে সামু মাস্টার জন্মগ্রহণ করেন। সামছুল হক উপজেলার পূর্ব নিজমেহার মিয়াজী বাড়ির মৃত শরীফুল্লাহ্ মিয়াজীর ছেলে। শিক্ষা জীবনে তিনি ব্রিটিশ আমলে এন্ট্রাস পাশ করেন। কর্মজীবনে তিনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক ছিলেন। কর্মজীবনের প্রথমে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় তারপর চাঁদপুরে শিক্ষকতা করেন। চাঁদপুর থেকে টামটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিজমেহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সর্বশেষ নোয়াগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯১ সালে অবসরে যান।
এ বিষয়ে সামু মাস্টার বলেন, এই দুনিয়ার প্রতি আমার কোনো মায়া নেই। মহান আল্লার পবিত্র কোরআন আর দু'জাহানের বাদশা মুহাম্মদের সুন্নাহ্ এখন আমার জীবন সাথী। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, এই মাঁচাই আমার দুনিয়াবী জান্নাত। আমি এখানে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
সামু মাস্টারের একমাত্র ছেলে আবদুল কাদের বলেন, আমি বিএসসি পাশ করে এলাকায় প্রাইভেট টিউশনি করছি। আজ ২২ বছর যাবত আমার পিতা নির্বাসনে আছেন। বহুবার বাড়িতে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। বাবা কারও সঙ্গে কথা বলেন না। খাওয়ার সময় খাবার ওনার মাঁচাতে পৌঁছে দিলে তিনি খেয়ে নেন। তবে তিনি স্বল্প ও স্বাভাবিক খাবার খান।
তিনি আরও বলেন, আমার পিতা ৩৬০ শতক জায়গার মালিক। এই দুনিয়ার প্রতি ওনার কোনো মোহ নেই। তিনি সারাদিন ইবাদত বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকেন।
এলাকাবাসীরা বলেন, ওনার বয়স এখন প্রায় একশ ছুঁই ছুঁই। তিনি গান বাজনা, নারীদের উচ্চ কণ্ঠ, বেনামাজি দেখতে কিংবা শুনতে পারেন না। দীর্ঘ ২২ বছর ধরে তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে আছেন।
মন্তব্য করুন