রাজশাহী ব্যুরো
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:৫৯ পিএম
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

‘ওরা আমার স্বামীকে গুলি করে মারল, আমি এখন কী করব?’

মায়ের কোলে থাকা শিশু জান্নাতি বুঝতেই পারছে না, কেন সবাই কাঁদছে। ছবি : কালবেলা
মায়ের কোলে থাকা শিশু জান্নাতি বুঝতেই পারছে না, কেন সবাই কাঁদছে। ছবি : কালবেলা

‘আমার ছোট ছোট দুই মেয়ে...তাদের নিয়ে আমি এখন কোথায় যাব? কী খাওয়াব, কীভাবে বড় করব? আমি এখন কার কাছে যাব?’ এই কথাগুলো বলতে বলতে বুক চাপড়াচ্ছিলেন নিহত নাজমুল হোসেনের স্ত্রী শারমিন বেগম। কথা আটকে যাচ্ছিল কান্নায়। পাশে দুই শিশু কন্যা— জান্নাতি (৩) আর জামেলা (২) কিছুই বুঝতে না পেরে মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে আছে।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চর নিচ খানপুর গ্রামে নাজমুলের বাড়িতে গেলে এমন করুণ দৃশ্য চোখে পড়ে।

উঠোনজুড়ে মানুষের ভিড়, আহাজারি আর নীরবতা। শারমিনের বুকফাটা কান্না যেন থামছে না। বারবার বলতে থাকেন, ‘ওরা আমার স্বামীকে গুলি করে মেরে ফেলল...আমি এখন কী করব?’

এর আগে, গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) দৌলতপুরের পদ্মার চরে খড়ের মাঠ দখল নিয়ে কুখ্যাত কাকন বাহিনী ও মণ্ডল বাহিনীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন নাজমুল। একই ঘটনায় মারা যান আমান মণ্ডলসহ আরও দুজন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে দুজনের মরদেহ যখন গ্রামে ফিরে আসে, তখন কান্নায় ভেঙে পড়ে পুরো গ্রাম। জানাজার সময় শিশু দুই মেয়ে জান্নাতি আর জামেলা মায়ের কোলে বসে নির্বাক চেয়েছিল— যেন বুঝতেই পারছিল না, কেন সবাই কাঁদছে।

নিহতের পরিবারের সদস্যদের দাবি, চরাঞ্চলের জমির দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কথিত ‘কাকন বাহিনী’ এ হামলা চালিয়েছে।

নাজমুলের বাড়ির পাশের মুদির দোকানে বসে ঘটনার সময়কার স্মৃতি মনে করছিলেন স্থানীয় মিঠু সরদার। তিনি বলেন, ‘বেলা ১১টার দিকে দেখি দুইটা স্পিডবোটে কাকন বাহিনীর লোকজন আসে। কোনো কথা না বলে গুলি শুরু করে দেয়। আমরা গুলির ভয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ি। ওদের হাতে বড় বড় বন্দুক। তিনজনকে চিনেছি— চাকলাইয়ের ময়না, সাগর আর ফিলিপনগরের বুরবক। দুই ঘণ্টা ধরে গুলি চলছিল। মোবাইল বের করতে পারিনি, শুধু প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম।’

কাঁপা কণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সাধারণ কৃষক। মাঠ দেখতে গিয়েছিলাম। আমাদের কোনো অস্ত্র নাই। খড় কাটতেই গিয়েছিলাম। এখন মাঠও গেল, মানুষও গেল।’

স্থানীয় চরের বাসিন্দারা জানান, প্রায় ১৭ বছর আগে হবির চরের নিচ খানপুর এলাকায় ৩০-৩৫টি পরিবার বসবাস করত। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে তারা বাঘার চর নিচ খানপুরে আশ্রয় নেন। তাদের দাবি, পুরোনো চরে প্রায় ৯০০ থেকে ১ হাজার বিঘা জমি তাদের পূর্বপুরুষদের দখলে ছিল। সেই জমিতে চাষাবাদ করতেন তারা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে কাকন বাহিনীর দাপটে তারা সেখানে ফসল তুলতেও পারছিলেন না।

জানা গেছে, গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) সকালে প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন শুনে তারা পদ্মার চরে যান। কিন্তু সেখানে গিয়েই মুখোমুখি হন গুলিবর্ষণের। সেই গুলিতেই প্রাণ যায় নাজমুল ও আমানের। পরের দিন মঙ্গলবার লিটন আলী নামের আরও একজনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌবাহিনীর সদস্যরা।

ডা. নিহার চন্দ্র মণ্ডল বলেন, মুনতাজের শরীরে অন্তত শতাধিক, রাকিবের শরীরে প্রায় ৮০, নাজমুলের শরীরে ৩৫টির মতো এবং আমানের মাথাসহ শরীরের পাঁচ স্থানে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ব্যবহৃত অস্ত্রগুলো পিস্তল ও রাবার বুলেট হতে পারে।

এ বিষয়ে বাঘা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুপ্রভাত মণ্ডল বলেন, নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। আহতদের বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ফ্ল্যাটে ঝুলছিল শ্রীলঙ্কান নাগরিকের মরদেহ

পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ চাল উৎপাদনের মানদণ্ড পূরণে দেওয়া হলো প্রশিক্ষণ

গ্রেপ্তারের গুঞ্জনের মাঝেই ভাইরাল ডনের গান

সিরিজ বাঁচাতে বাংলাদেশের দরকার ১৫০ রান 

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শিক্ষাখাতে বেশি বিনিয়োগ হবে : আমীর খসরু

জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষা পেছাল, নতুন সময়সূচি প্রকাশ

এককভাবে সরকার হলে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না : নাহিদ ইসলাম

২০২৫ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে আইডিএলসি ফাইন্যান্সের ধারাবাহিক মুনাফা বৃদ্ধি

বিমাখাতে একচ্যুয়ারি সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিচ্ছে আইডিআরএ

প্রতিপক্ষের হামলায় যুবদল নেতাসহ আহত ৫

১০

পিছিয়ে থাকা নড়াইলকে ডিজিটাল হিসেবে গড়ে তুলব : এনপিপি চেয়ারম্যান

১১

বাবা হলেন ক্রিস ইভান্স

১২

বরখাস্ত হলেন পুলিশের সেই এডিসি

১৩

হাবিপ্রবি ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা

১৪

নির্বাচনে রাজপথে ফুল বিছানো হবে না : রিজভী

১৫

অবশেষে ক্ষমা চাইলেন ভিনিসিয়ুস

১৬

মেট্রোরেলে নিরাপত্তা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের আহ্বান

১৭

হোয়াটসঅ্যাপের আকর্ষণীয় ৬ সুবিধা, যা জানেন না অনেকে

১৮

রয়টার্সকে সাক্ষাৎকার / এখনই দেশে ফেরার পরিকল্পনা নেই হাসিনার, থাকবেন ভারতে

১৯

বিএনপিকে সতর্কবার্তা জামায়াতের

২০
X