মো. ইলিয়াস হোসাইন, মির্জাগঞ্জ (পটুয়াখালী)
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৫২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পায়রা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি-ফসলি জমি

পায়রা নদীর ভাঙন। ছবি : কালবেলা
পায়রা নদীর ভাঙন। ছবি : কালবেলা

পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা। উপজেলার পিঁপড়াখালী, মেহেন্দিয়াবাদ, চরখালী ও রানীপুর গ্রাম নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে গ্রামের মানুষের চিরচেনা বসত ভিটা ও আবাদি জমি। নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা। তাই সহায়তা নয়, টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পায়রা নদীতে বেড়েই চলেছে ভাঙন। গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলের সুন্দ্রা-কালিকাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পিঁপড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও হাট-বাজার এবং এসব গ্রামের ১০ একরের বেশি ফসলি জমি, ও শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়েক দফা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরেও তা এখনও রয়েছে নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে। ঘরবাড়ি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভুক্তভোগীরা।

পিঁপড়াখালীর বাসিন্দা বশির হোসেন বলেন, এই তো অল্প ক’দিন আগে আমার ঘরের সামনে দিয়ে বেড়িবাঁধের বড় একটি অংশ নদীতে ভেসে গেছে এবং আমার ঘরের মাঝখান দিয়ে ফাটল ধরেছে। তাই দুই দিনের ভিতরে যতটুকু সম্ভব বাড়ি ঘরের মালামাল অন্যত্র নিয়ে গেছি। ওই বাড়িতে থাকার মতো কোনো অবস্থা এখন আর নাই। বাঁধ মেরামত না করায় জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় আমাদের গ্রাম। আতঙ্কে রাত কাটাতে হচ্ছে নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের।

‘কতবার আর ভাঙবে? কতবারই বা পরিবর্তন করবো বসতভিটা? এখন আর সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই’— এভাবেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজের দুঃখের কথা বলছিলেন উপজেলার পিঁপড়াখালী গ্রামের আবদুর রব মিয়া। পায়রা নদীর ভাঙনে ঘর-বাড়ি, জমি, এমনকি পারিবারিক কবরস্থান হারিয়ে এখন অন্যের জমিতে আশ্রিত তিনি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পায়রা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন ভাঙনের অন্যতম কারণ। বালু উত্তোলনের কারণেই প্রতি বছর ভাঙনের তীব্রতা বেড়ে চলেছে। প্রভাবশালী মহল ইজারা নিয়ে নদীর গভীর থেকে বালু তোলায় নদীর গতি পরিবর্তিত হয়ে আশপাশের জনপদে আঘাত হানছে।

পিঁপড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা দিনেস আলী প্যাদা বলেন, আমার চোখের সামনে পায়রা নদীতে অন্তত ১০ বার বাঁধ নির্মাণ করতে দেখেছি। কিন্তু একবারও টেকেনি। প্রভাবশালীরা বালু তুলছে, আর আমাদের ঘরবাড়ি যাচ্ছে নদীতে। এ ছাড়া এসব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও হুমকির মুখে।

পিঁপড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু সুজীদ মজুমদার বলেন, আমাদের স্কুলটি একাধিকবার সরিয়ে নিতে হয়েছে। এখনকার অবস্থানটিও নিরাপদ নয়। রাস্তাঘাট ভালো না থাকায় শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। মাত্র কয়েক দিনে শতাধিক একর ফসলি জমি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ, বসতঘর, মসজিদ ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পিঁপড়াখালী গ্রামের প্যাদা বাড়ি ও আশপাশের এলাকা সম্পূর্ণ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেকেই শেষ সফল নিয়ে বাঁধের ঢালে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে অন্যত্র চলে গেছেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

কাঁকড়াবুনিয়া লঞ্চঘাট এলাকা ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বাজারটির অবশিষ্ট অংশও এখন ভাঙনের মুখে। নদীর ভয়াল ভাঙনে নিঃস্ব হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। মেন্দিয়াবাদ ও পিঁপড়াখালী গ্রাম দুটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। কয়েক হাজার একর জমি, বসতভিটা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান নদীতে চলে গেছে। প্রায় ৫০০-র বেশি পরিবার এখন গৃহহীন ও আতঙ্কিত।

স্থানীয়দের অভিযোগ, পাউবোর জিওব্যাগ দিয়ে সাময়িকভাবে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করা হলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। পিঁপড়াখালীর এক বাসিন্দা বলেন, জিও ব্যাগ কিছুদিন থাকে, পরে আবার সরে যায়। আমাদের দরকার ব্লক দেওয়া শক্ত বাঁধ, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজনোর ঘর, স্কুল, কবরস্থান টিকে থাকে।

পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিব কালবেলাকে জানান, পায়রা নদীর প্রায় ৫-৬ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র ভাঙন চলছে। মির্জাগঞ্জের ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে পঁচটিই নদী তীরবর্তী হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে পিঁপড়াখালী এলাকায় পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ ফেলেছি।

তিনি আরো বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। জরিপের কাজ চলমান আছে। জরিপ শেষ হলে স্থায়ী ব্লক দিয়ে শক্ত বাঁধ নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কুড়িগ্রামে খতমে নবুওয়ত সম্মেলন অনুষ্ঠিত

মাত্র তিন মাসেই ভেঙে গেল ইয়ামাল-নিকোলের প্রেম

আলালের বক্তব্যে জামায়াতের প্রতিক্রিয়া

নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা করে লাভ হবে না : জুয়েল

শেষ মুহূর্তে রোনালদোর জোড়া গোলে রক্ষা পেল আল নাসর

শিক্ষার্থীদের কাছে নূরের ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জবি শিবির সেক্রেটারির

বিনামূল্যে ইংরেজি শেখাবে ঢাকা কলেজ ছাত্রদল

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান আলালের

২০০ যাত্রী নিয়ে ডুবোচরে আটকে গেল লঞ্চ

বৃষ্টিতে ভাসছে ফসল, কৃষকের স্বপ্নভঙ্গ

১০

দেখিয়েছে জরিনাকে, এখন বলছে সংসার হবে সকিনার সাথে : হাসনাত

১১

প্রেমিকার স্বজনদের মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু

১২

প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনালের দাপট চলছেই

১৩

পায়রা নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি-ফসলি জমি

১৪

উয়েফার বিরুদ্ধে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফরম্যাট চুরির অভিযোগ

১৫

তীরে এসে তরি ডোবাবেন না, সরকারকে সাইফুল হক

১৬

কর্মীদের সঙ্গে সেলফি, প্রশংসায় ভাসছেন নুরুদ্দিন আহাম্মেদ অপু

১৭

ঐকমত্য কমিশনকে প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

১৮

ঝিনাইদহে দলীয় কার্যালয়ে সরকারি সার-বীজ নিয়ে জামায়াতের বক্তব্য

১৯

‘লেবাননের যোদ্ধাদের রয়েছে হাজার হাজার রকেট-ক্ষেপণাস্ত্র মজুত’

২০
X