কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় ডিলারের কাছে খালি (ব্ল্যাঙ্ক) চেকের পাতা ও স্ট্যাম্প গচ্ছিত রেখে বাকিতে পোলট্রি খাবার নিয়ে খামারিরা প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, খালি চেকে ইচ্ছেমতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে ‘চেক ডিজঅনার’ মামলা দিয়ে খামারিদের হয়রানি করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত ব্যক্তি পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নের বাহাদিয়া এলাকার কোয়ালিটি ফিডের ডিলার মো. আসাদুজ্জামান (আসাদ ডিলার)। ১৭ বছর ধরে নিজ এলাকায় ফিড ব্যবসা করে আসছেন তিনি।
এ নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) পাকুন্দিয়া উপজেলার মঠখোলা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন ক্ষতিগ্রস্ত খামারিরা।
পাকুন্দিয়া উপজেলার বারাবর গ্রামের পোলট্রি খামারি দ্বীন ইসলাম বলেন, ‘ফিড ডিলার আসাদুজ্জামানের সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বাকিতে মুরগির জন্য খাবার আনতে ডিলার আসাদুজ্জামানের কাছে গেলে সই করে খালি চেক ও খালি স্ট্যাম্প দিতে বলেন তিনি। সে সময় পোলট্রি খামার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সই করা খালি চেক ও স্ট্যাম্প দিতে বাধ্য হই। বাকিতে লেনাদেন চলাকালে হঠাৎ আসাদুজ্জামান আমার সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করে দেন। পরে দুটি খালি চেকে আসাদুজ্জামান চার কোটি টাকার অঙ্ক বসিয়ে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছেন। আমার মতো এমন প্রতারণার কারণে এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক খামারি নিঃস্ব হয়ে গেছে।’
একই এলাকার খামারি আতিকুর রহমান মানিক বলেন, ‘বাকিতে ডিলার আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে খাবার নিতেন। টাকা পরিশোধ করে জমা দেওয়া খালি চেক ও স্ট্যাম্প চাইতে গেলে তিনি দেননি। পরে ঢাকার সিএমএম আদালতে ৯৬ লাখ ২০ হাজার টাকার মামলা দায়ের করেন।’
আরেক খামারি হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বাকিতে খাবার দেওয়ার নামে ব্ল্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প নেন ডিলার আসাদুজ্জামান। এভাবে চলাকালীন হঠাৎ মুরগির খাবার দেওয়া বন্ধ করে দেন। পরে কারণ জানতে চাইলে আরেকটি খালি চেক দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়। চেক দিতে অস্বীকার জানালে আমার নামে ২০২১ সালে ঢাকার সিএমএম আদালতে ২৬ লাখ ২০ হাজার টাকার চেক ডিজঅনার মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় প্রতি তারিখে আদালতে গিয়ে হাজিরা দিতে হয়।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মো. আসাদুজ্জামান (আসাদ ডিলার) বলেন, ‘আমি ১৭ বছর ধরে পোলট্রি ফিডের ডিলার হিসেবে ব্যবসা করে আসছি। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি কারও কাছ থেকে খালি চেক ও স্ট্যাম্প নেইনি। যে পরিমাণ বাকি নেয়, সেই পরিমাণ টাকা চেকে উল্লেখ থাকে। বকেয়া পরিশোধ করার জন্য নির্ধারিত যে তারিখ দেওয়া হয় তা স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্রের মধ্যে লেখা তাকে। সেই তারিখ অনুযায়ী টাকা পরিশোধ করতে না পারলে যে কোম্পানি থেকে ফিড আনা হয় সেই কোম্পানির চাপের মুখে আমাকে আইনের আশ্রয় নিতে হয়। এখনও শতাধিক খামারি আমার কাছ থেকে খাবার নেন। এদের মধ্যে ১০-১২ জনের নামে চেকের মামলা রয়েছে।’
এগারসিন্দুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নূরুজ্জামান মিয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আসাদুজ্জামান খামারিদের সঙ্গে প্রথমে বাকি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। এভাবে কিছু দিন চলার পর এক পর্যায়ে তাদের কাছ থেকে ব্ল্যাংক চেক ও স্ট্যাম্প নেওয়ার জন্য চাপ দেন। তখন খামারিরা মুরগির খাবারের কথা চিন্তা করে জিম্মি অবস্থায় চেক ও স্ট্যাম্প দিতে বাধ্য হন। এর কিছুদিন পর খামারিদের টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। এ সময় খামারিরা টাকা দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে চেকে মোটা অঙ্কের টাকা বসিয়ে মামলা দেওয়া হয়। এ রকম অর্ধশতাধিক খামারির অভিযোগ রয়েছে।’
মন্তব্য করুন