

চুম্বক হাতে রাস্তার পাশে হেঁটে যাচ্ছেন এক যুবক—চোখে মনোযোগ, হাতে ঝুলছে দড়ি, দড়ির শেষে বাঁধা চুম্বক। কেউ ভাবতে পারে, কৌতূহলবশত কিছু খুঁজছেন তিনি, কিন্তু এই চুম্বকই তার জীবিকার একমাত্র ভরসা। তিনি বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার মামুন শেখ, এখন সবার পরিচিত নাম—‘চুম্বক মামুন’।
অন্যদের চোখে যেসব বস্তু বর্জ্য, মামুন শেখের চোখে সেগুলিই সোনার খনি। ৫০০ গ্রাম ওজনের একটি বিশেষ চুম্বক আর এক টুকরো দড়ির সাহায্যে তিনি দেশের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ান। রাস্তার পাশে ছড়িয়ে থাকা তারকাঁটা, নাট-বল্টু, পেরেক কিংবা ভাঙা লোহার টুকরো—সবকিছুই তার চুম্বকের টানে ধরা পড়ে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত লোহা সংগ্রহ করেন তিনি। এসব লোহা ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে মাসে আয় করেন প্রায় ৬০ হাজার টাকারও বেশি।
গতকাল মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌর শহরে লোহা সংগ্রহ করতে দেখা যায় তাকে। চুম্বক দিয়ে লোহা তুলতে দেখে কৌতূহলী পথচারীরা ঘিরে ধরেন তাকে। কেউ ভিডিও করছেন, কেউবা অবাক চোখে দেখছিলেন তার অভিনব কাজ। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় ১৩ কেজি লোহা সংগ্রহ করেন মামুন।
কথা হলে মামুন শেখ কালবেলাকে বলেন, ‘এই কাজ দেখতে হয়ত অদ্ভুত লাগে, কিন্তু আমি এটা ভীষণ উপভোগ করি। দেশের নানা জায়গায় ঘুরি, নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচিত হই, নানা খাবারের স্বাদ নেই। এই কাজের মাধ্যমেই জীবনটা উপভোগ করতে পারছি।’
তিনি জানান, স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়েই এই পেশায় নেমেছেন তিনি। এতে সংসার চলছে সচ্ছলভাবে, পাশাপাশি দেশের মাটিতে পড়ে থাকা লোহা পুনরুদ্ধার করায় পরিবেশও থাকছে পরিষ্কার। যেটা অন্যদের দৃষ্টির আড়ালে থাকে, আমি সেটা সংগ্রহ করে সংসার চালাই। এতে কারও ক্ষতি হয় না, বরং দেশের সম্পদই রক্ষা হয়।
স্থানীয় হাটবৈরিয়ান এলাকার অটোভ্যানচালক আব্দুল বাছেদ বলেন, ‘রাস্তায় থাকা তারকাঁটায় গাড়ির টায়ার ফুটো হয়ে যেত। মামুন ভাই এসব লোহা তুলে নেওয়ায় এখন আমাদের অনেক উপকার হচ্ছে।’
অন্যরা যেখানে সম্ভাবনা দেখেন না, সেখানে সুযোগ খুঁজে নিয়েছেন চুম্বক মামুন। বর্জ্য থেকে মূল্যবান সম্পদ উদ্ধার করে তিনি প্রমাণ করেছেন—‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখিবে তাই’ শুধু কবিতার পঙ্ক্তি নয়, বরং জীবনেরও এক বাস্তব সত্য।
মন্তব্য করুন