

কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও হিমেল বাতাসে জনজীবন নাকাল হয়ে পড়েছে। কুয়াশার তেমন ঘনত্ব না থাকলেও ঠান্ডা বাতাসে চরাঞ্চলগুলোতে শীত অনুভূতি অনেক বেশি।
বুধবার (৩ ডিসেম্বের) সকালে কুড়িগ্রামের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজারহাট আবহাওয়া অফিস কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
১৬টি নদ-নদীর তীরবর্তী সাড়ে আটশ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত কুড়িগ্রামের ৪৬৯টি চরের মধ্যে ২৬৯টিতেই মানুষের বসবাস। এসব চরের অধিকাংশই শীতপ্রবণ হওয়ায় হিমেল বাতাসে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছেন চরবাসী। বিশেষ করে সদর উপজেলার সীমান্তঘেঁষা ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী ঝুনকার চর, কালির আলগা, গোয়াইলপুরী, ভগবতীপুর, পোড়ার চরসহ ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও চররাজিবপুর উপজেলার চরে শীতের তীব্রতা কয়েক গুণ বেশি।
বৃদ্ধ, শিশু ও দিনমজুর শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। দিনমজুরদের অনেকেরই শীতের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে তাদের।
ঝুনকার চর এলাকার বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী মো. মজনু মিয়া বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। ঘরে পরার মতো মোটা কাপড় নেই। রাতে ঘুমাইতে গেলেই ঠান্ডায় শরীর জমে যায়।’ কালির আলগার গৃহবধূ হাজেরা বলেন, ‘শীতের কাপড়ও পাই না। কেউ খোঁজও নেয় না আমাদের।’
পাঁচগাছি এলাকার মিশুক চালক মাহাবুব আলী বলেন, ‘শিরশির করি এমন ঠান্ডা বাতাসে নদীর পাড়ে দাঁড়ানো দায়। কাজকর্ম বন্ধ। ঘরে খাবারও নাই। শীত আমাদের মারে, অভাবও মারে।’
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রামে প্রায় শতাধিক এনজিও কাজ করলেও শীতের সময় তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকে। সাড়ে পাঁচ লাখ চরবাসীর দুর্ভোগ দেখার কেউ নেই। তারা যেন ভিনগ্রহের মানুষ। এই পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তা ও সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার প্রয়োজন।’
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বলেন, ‘শীত নিবারণের জন্য ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জেলার ৯ উপজেলায় শীতবস্ত্র কেনার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খুব শিগগির শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হবে।’
এ বিষয়ে রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আগামী সাত দিন কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির আশপাশে ওঠানামা করতে পারে। ফলে শীতের অনুভূতি আরও বাড়বে।’
মন্তব্য করুন