

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, নির্বাচন বানচালের মাস্টারপ্ল্যানের অংশ হিসেবে ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, ওসমান হাদির মৃত্যু সংবাদের পর গত রাতে ঢাকায় প্রথম আলো, ডেইলি স্টার পত্রিকা অফিস, ছায়ানট ভবন, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির ও বিভিন্ন স্থানে হামলাসহ দেশব্যাপী সহিংসতা নির্বাচন বানচালসহ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মাস্টারপ্ল্যানের প্রজেক্ট। এ সুযোগে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তনের পথে বাধা সৃষ্টি করাও এ প্রজেক্টের উদ্দেশ্য।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের দুধকুড়া গ্রামে হাজং সম্প্রদায়ের নবান্ন উৎসব ‘দেউলী উৎসব’ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, পতনের পর পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট গোষ্ঠী ও দেশে উত্থান হওয়া উগ্রবাদী গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তারা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া হাউজে আক্রমণ চালিয়ে বহিঃর্বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ উগ্রবাদীদের কবলে চলে গেছে। দেশবাসীকে বোঝাতে চায়, দেশে নির্বাচনের কোনো পরিবেশ নেই।
তিনি আরও বলেন, শুধু মিডিয়া হাউস নয়, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, মাজার, সাংস্কৃতিক উৎসবে বাধা প্রদান করে তারা উদারনৈতিক রাষ্ট্রীয় চরিত্রকে পাল্টে দিতে চায়, যেমনটি আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে দেশের মালিকানা জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিল এবং দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবিক চরিত্র গুম করেছিল।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্লিপ্ততা ও উদাসীনতায়, সরকারের নীরবতা, ভ্রান্ত নীতি আধিপত্যবাদী, ফ্যাসিবাদী ও উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারে উৎসাহিত ও সুযোগ করে দিচ্ছে। গতকাল মিডিয়া হাউজে হামলার সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নীরব ভূমিকা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সরকার এর দায় এড়াতে পারবে না। এ ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পেরেই বিএনপি শহীদ মিনারে যায়নি। তিনি বলেন, ওসমান হাদীকে গুলি করার মতো নৃশংস ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই। এজন্য আমরা তার সংগঠনের সঙ্গে সহমর্মিতা ও সংহতি জানিয়েছি। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে এ ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে সুকৌশলে বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চালানো হয়। ব্যর্থ হয়ে ওসমান হাদির মৃত্যুর পর পরিকল্পিতভাবে সহিংস ঘটনা ঘটিয়ে গভীর ষড়যন্ত্রের প্রমাণ করেছে। সবাইকে ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকার এবং কোনো ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানাই।
প্রিন্স বলেন, দেউলী উৎসব হাজং সম্প্রদায়ের আত্মপরিচয়, ইতিহাস ও সংস্কৃতির জীবন্ত প্রতীক। এই উৎসবের মূল লক্ষ্য হলো— নিজেদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের পাশাপাশি সব ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি ও মানবিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় করা।
বিএনপির এ নেতা বলেন, এই উৎসবের মাধ্যমে হাজং সম্প্রদায়ের নবান্ন উদ্যাপন, কৃষিনির্ভর জীবনযাত্রার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ, দেবতা ও প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, পাশাপাশি তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, লোকজ বিশ্বাস ও ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে ভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহাবস্থান ও সম্প্রীতি জোরদার করাই দেউলি উৎসবের অন্যতম লক্ষ্য। বিএনপি আগামী দিনে সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর কল্যাণ, দীর্ঘদিনের সমস্যার স্থায়ী সমাধান, ভাষা ও সাংস্কৃতিক অধিকার সমুন্নত রাখতে দৃঢ়ভাবে কাজ করবে। এজন্য পৃথক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হবে।
এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, হালুয়াঘাটের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কালচারাল একাডেমিকে গারো সম্প্রদায়ের পাশাপাশি হাজং সম্প্রদায়ের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ, চর্চা ও বিকাশের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হবে। একইসঙ্গে গারো ও হাজং সম্প্রদায়ের কৃষ্টি-কালচার তুলে ধরতে একটি জাদুঘর অথবা স্থায়ী প্রদর্শনী কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে ধোবাউড়ায় দেউলী উৎসব সরকারিভাবে পালিত হবে।
বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে দেউলী উৎসবে ধোবাউড়া, সহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলো থেকে হাজং নর-নারী, শিশু, যুবকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের পাশাপাশি বাঙালি জনগোষ্ঠীর ব্যাপক অংশগ্রহণে উৎসবটি পরিণত হয় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সামাজিক ঐক্যের এক অনন্য মিলনমেলায়। দিনব্যাপী উৎসব আয়োজনে হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী নৃত্য, সংগীত, লোকগান ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিল বিশেষ আকর্ষণ।
ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক একাডেমির পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার প্রলয় স্নালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন— গবেষক ও লেখক মতি লাল হাজং, হাজং সমিতির সভাপতি পল্টন হাজং, হালুয়াঘাট ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান সুভ্রত রেমা, গাঁওবুড়া (গ্রাম প্রধান) নরেশ চন্দ্র রায়, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মফিজ উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম কাজল, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোয়াজ্জেম হোসেন লিটন, দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবীর ও সাবেক চেয়ারম্যান গাজিউর রহমান।
মন্তব্য করুন