ফেনীতে ডিজিটাল লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশু। ঈদুল আজহার আরও ১০ দিনের মতো বাকি থাকলেও এখন থেকেই অনেক ক্রেতা খামার থেকে কোরবানির পশু কিনছেন। পশু ক্রয়ে যাতে না ঠকেন ও বাজারের যাওয়া আসার ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে অনেক ক্রেতাই ঝামেলাহীন ডিজিটাল লাইভ ওয়েট পদ্ধতির দিকে ঝুঁকছেন।
ফেনীর দাগনভূঁঞার জায়লস্কর ইউনিয়নের সিলোনিয়ার রামচন্দ্রপুর বাঁন্দেরগোড়া এলাকায় শখের বসে আবু সুফিয়ান নামে এক ব্যবসায়ী জুহান অ্যাগ্রো নামে গরু মোটাতাজাকরণ খামার প্রতিষ্ঠা করেন। তার খামারে এ বছর কোরবানিতে বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছে দেড়শত গরু। বাজারে নেওয়ার ঝামেলামুক্ত থাকতে ও অন্যান্য রোগাক্রান্ত গরুর সংস্পর্শে গিয়ে যেন তার খামারের গরু কোনো রকম রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত না হয় সে কারণে তিনি এ বছর থেকে পশু বাজারে নিবেন না বলে জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানান, তার এ খামার থেকে যারা গরু ক্রয় করবেন তাদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এখান থেকে তিনি লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরু বিক্রি করছেন। ক্রেতা গরু পছন্দ করে আস্ত গরু তুলে দেবেন ওজন মেশিনে। সুতরাং ক্রেতারা গরু ক্রয় করে ঠকার কোনো সম্ভাবনা নেই। কেউ যদি দূর থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে গরু কিনতে চান তাহলেও বিক্রির সুযোগ রয়েছে।
এদিক লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরু বিক্রি হওয়ায় খুশি ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়পক্ষ। প্রাণিসম্পদ বিভাগও উৎসাহ জোগাচ্ছে এ পদ্ধতিতে। খামারের তত্ত্বাবধায়ক জিয়াউল হক বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মে তাদের খামারে গরুগুলোকে লালন পালন করা হচ্ছে।
খামারের কর্মচারীরা জানান, প্রতিদিন সকালে তারা পানি দিয়ে পুরো খামার ধুয়ে পরিষ্কার করেন। পরে চুন ও পটাশ দিয়ে পরিষ্কার করা হয়। এ খামারের গরুকে খাওয়ানো হয় চাইলেস, খড়, ঘাস, ভুট্টা খাইয়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে। আমরা চ্যালেঞ্জ করে গরু বিক্রি করতে পারব।
এ পদ্ধতিতে গরু লালন পালন করতে গরুর গলায় লাগানো রয়েছে ট্যাগ নম্বর। সেই নম্বরের ভিত্তিতে কম্পিউটারে ইনপুট করা হয় যাবতীয় তথ্য। কম্পিউটারের সফটওয়্যারে থাকে গরুর খাবার, রোগ-বালাই থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য। গ্রাহক ইচ্ছে করলে তার ক্রয়কৃত গরুর বিস্তারিত জানতে পারবেন এ ট্যাগ নাম্বারের মাধ্যমে। ফেনীত এমন পদ্ধতিতে অনেক খামারে গরু পালন করা হচ্ছে বলে জানা যায়।
লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য জেলায় আরও অনেক খামার প্রস্তুতি নিয়েছেন বলেও জানা যায়। আর এমন পদ্ধতি নিয়ে খুশি ক্রেতা-বিক্রেতারা।
আবদুল্লাহ নামে এক ক্রেতা জানান, লাইভ ওয়েটে গরু কিনতে পেরে তিনি খুশি। কোরবানির গরুর মাংসের হিসাব করলে কেজি এমনিতেই এক হাজার টাকা পরে। সুতরাং ঠকার সুযোগ নেই।
ক্রেতা নাজমুল করিম আলমগীর জানান, তিনি গরু দেখে পছন্দ করে রেখেছেন। ঈদের আগের দিন খামার থেকে গরু নিয়ে যাবেন।
তিনি জানান, যেদিন খামার থেকে গরু নিয়ে যাবেন সেদিন গরুটির যা ওয়েট থাকে সে অনুযায়ী দাম দেওয়া হবে তাই গরু কিনে নিয়ে লালন-পালন করার বাড়তি ঝামেলা নেই। এদিক লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে পশু বিক্রি করে লাভের আশা করলেও সীমান্ত দিয়ে চোরাপথে রোগাক্রান্ত গরু-মহিষ প্রবেশের ফলে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন প্রান্তিকের এসব খামারিরা।
লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে গরুর দাম সম্পর্কে খামারটির তত্ত্বাবধায়ক জিয়াউল হক জানান, বর্তমানে গো খাদ্যের দাম অনেক বেশি। লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে প্রতিটি গরুর দাম রাখা হবে ৫৫০ টাকা। তিনি জানান, একটি আস্ত গরু লাইভ ওয়েট করলে তিন ভাগের দুই ভাগ গোস্ত পাওয়া যাবে।
এ পদ্ধতিতে পশু বিক্রি করে খামারিরা ভালো দাম পাবেন বলে আশাবাদী প্রাণিসম্পদ বিভাগ।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুজন কান্তি শর্মা বলেন, এক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতা দুজনই ন্যায্যমূল্যে পশু ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছে। দুজনই উপকৃত হচ্ছেন। কারণ একজন ক্রেতা জানে না, আসলে গবাদি পশুটিতে কত কেজি মাংস হবে। সে এ পদ্ধতিতে নিশ্চিত হয়ে পশু কিনতে পারছেন। লাইভ ওয়েট পদ্ধতিতে কেউ ফিতা দিয়ে মেপে ওজন ধরে। সে পদ্ধতিতে ৮-১০ কেজি এদিক সেদিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর ডিজিটাল ওয়েট মেশিনে ওজন করলে সেখানেতো ফিক্সড ওজনটাই পাওয়া যাচ্ছে। লাইভ ওয়েটে গরুর ওজন একশ কেজি হলে সেখানে ৬০ থেকে ঊর্ধ্বে ৬৫ কেজি মাংস হবে। গাভির ক্ষেত্রে ৫৫ কেজি মাংস পাবে। আমি মনে করি এটি একটি ভালো উদ্যোগ।
পশুসম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, কোরবানি উপলক্ষে জেলায় এমন ৯০ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় ১০ হাজার বেশি।
খামারিরা জানান, তারা চিন্তিত সীমান্ত দিয়ে ভিন্ন দেশের গরু দেশে প্রবেশ করলে তারা ন্যায্যমূল্য পাবেন না।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান বলেন, ভিনদেশি পশু সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মন্তব্য করুন