পেকুয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৫১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

১৯ বছরেও শেষ হয়নি দুই সেতুর নির্মাণকাজ

১৯ বছর ধরে পড়ে আছে অর্ধেক নির্মাণ করা সেতু। ছবি : কালবেলা
১৯ বছর ধরে পড়ে আছে অর্ধেক নির্মাণ করা সেতু। ছবি : কালবেলা

কক্সবাজারের পেকুয়ায় দীর্ঘ ১৯ বছর পার হলেও অর্ধনির্মিত দুটি সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়নি। শুধু পানির ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেই সেতুর নির্মিত পিলারগুলো।

জানা যায়, ২০০৫ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে ৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে পেকুয়ার কাটাফাঁড়ি- উজানটিয়া সোনালি বাজার-করিমদাদমিয়ার ঘাট ভায়া মাতারবাড়ী জিসি সড়কের ৭ কিলোমিটারের মাথায় ২০৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ দশমিক ২৬ মিটার প্রস্থ একটি সেতু নির্মাণে বরাদ্দ দিয়ে দরপত্র আহ্বান করে। সেতুটির নামকরণ করা হয় ‘পেকুয়া-মহেশখালী মৈত্রী সেতু’।

একই সময়ে উজানটিয়া খাল ও কোহেলিয়া নদীবেষ্টিত পেকুয়ার উজানটিয়ার ছোট দ্বীপ করিয়ারদিয়ার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অধীনে ৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে উজানটিয়া-করিয়ারদিয়া সংযোগ সড়কের সৈকত বাজার এলাকায় ১৮০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ দশমিক ২৬ মিটার প্রস্থ আরেকটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করার জন্য দরপত্র আহ্বান করে।সেতুটির নামকরণ করা হয় ‘মহামিলন সেতু’। এ দুটি সেতুর নির্মাণকাজ পায় চকরিয়ার ঠিকাদার গিয়াস উদ্দিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স চকোরী কনস্ট্রাকশন। সেনাবাহিনী-সমর্থিত এক-এগারোর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঠিকাদার আত্মগোপনে চলে গেলে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখনো সে আত্মগোপনে। তবে সে সময় একটি সেতুর আটটি পিলারের (মূল স্তম্ভ) কাজও শেষ করা হয়। অপরটির পিলার নির্মাণের পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ দুই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, তৎকালীন যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী ও কক্সবাজার-১ (চকরিয়া ও পেকুয়া) আসনের সাংসদ সালাহউদ্দিন আহমদের নামফলক। তবে কেবল সেতু দুইটির কয়েকটি পিলার নির্মাণের পর বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ। এর মধ্যে এখন কয়েকটি পিলার পানিতে ডুবু ডুবু অবস্থা। আবার কয়েকটি হেলে পড়েছে। আবার কয়েকটি পিলার পানির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে পড়ে আছে ১৯টি বছর।

কিছু পিলারের মাথা থেকে রড কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এসব পিলারের ওপর আদৌ সেতুর নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন সম্ভব কিনা, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এ সেতু নির্মাণ হলে ২/৩ লাখ মানুষের ভাগ্যের চাকা খুলে যাবে। ওখানকার উৎপাদিত পান, লবণ, চিংড়ি সারাদেশে সহজে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

এসময় স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, সরকারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীকে ঘিরে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। সেখানে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দরসহ নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। মাতারবাড়ীর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ১৯ বছর আগে সেতুর কাজ শুরু হলেও আজও বাস্তবায়ন হয়নি। এ সেতু দুটি নির্মাণ হলে উজানটিয়া ও মাতারবাড়ীসহ ২ থেকে ৩ লক্ষাধিক লোকজনের চলাচলে ব্যাপক সুবিধা হবে। মহেশখালী মাতারবাড়ীসহ উজানটিয়ার লবণ ও চিংড়ি, পান বিদেশে দ্রুত পৌঁছানো যাবে।

অভিযোগ রয়েছে, ঠিকাদার নির্মাণকাজে নানা অনিয়ম করেন। এতে কাজের ত্রুটি ও অতিরিক্ত বিল দিয়ে বিপাকে পড়ে এলজিইডি। দরপত্র অনুযায়ী ২০০৭ সালের জুনে সেতু দুটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়।

এলজিইডির এক প্রকৌশলী বলেন, তিন বছর সময় বৃদ্ধি করা হলেও ঠিকাদার কাজ শেষ করেননি। সেতু দুটির পিলারের কাজ করে ঠিকাদার ৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বিল তুলে নেন। সে সময় ঠিকাদার গিয়াসের প্রতিষ্ঠান থেকে দাবি করা হয়, এক-এগারোর সুযোগ নিয়ে দুর্বৃত্তরা দুই সেতুর নির্মাণকালে বিপুল পরিমাণ রড, পাথর ও বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে গেছে।

এদিকে ওই এলাকার বাসিন্দা ও কক্সবাজার জর্জকোর্টের আইনজীবী মীর মোশাররফ হোসেন টিটু বলেন, এ দুইটি সেতুর নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে আমার এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী মাতারবাড়ী ও মহেশখালীর উৎপাদিত লবণ ও চিংড়ি এবং মহেশখালীর অনেক সু-পরিচিত পান বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবে। যেমনিভাবে দেশ লাভবান হবে তেমনিভাবে এলাকার লোকজন লাভবান হবে।

এদিকে উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তোফাজ্জল করিম বলেন, এলজিইডি মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দফায় সেতু দুটি পরিদর্শন করা হলেও কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। বারবার তাগাদা ও আবেদন করেও লাভ হয়নি। সেতুগুলো বাস্তবায়ন হলে মাতারবাড়ী প্রকল্পের উন্নয়নকাজ আরও দ্রুত হতো। এখানকার উৎপাদিত লবণ ও চিংড়ি পরিবহন এবং যাতায়াতে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হতো।

এ বিষয়ে পেকুয়া উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ মাহামুদ বলেন, আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তবে শুনেছি সময় বৃদ্ধির পরও কাজ শেষ না করায় ২০১০ সালের জুনে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করা হয়। সম্প্রতি উচ্চপর্যায়ের একটি দল সেতু দুটি পরিদর্শন করেছে। সেখানে নতুন করে প্রকল্প নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে নাকি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা হবে ক্লিন সিটি : চসিক মেয়র

জুলাই সনদে মিত্রদের ‘কাছাকাছি মতামত’ দেওয়ার পরামর্শ বিএনপির

সন্তানকে বাঁচিয়ে প্রাণ দিলেন বাবা

সৈকতে ফের ভেসে এলো মৃত ইরাবতী ডলফিন

ইঞ্জিন সংকটে ‘নাজুক’ রেল অপারেশন

স্পেনে রিয়ালের আর্জেন্টাইন তারকাকে নিয়ে অদ্ভুত বিতর্ক

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হলেন আবু তাহের

মানবিক ড্রাইভার গড়তে নারায়ণগঞ্জে ডিসির যুগান্তকারী উদ্যোগ

গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষায় জাতীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

পিএসসি সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহীন চৌধুরী

১০

রিয়ালের হয়ে ইতিহাস গড়লেন আর্জেন্টিনার ‘মাস্তান’

১১

দাম্পত্য কলহ এড়ানোর সহজ ৫ উপায়

১২

‘গণতন্ত্রের জন্য আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হতে পারে’

১৩

আর্থিক খাত নিয়ে খারাপ খবর দিলেন গভর্নর

১৪

পৌরসভার ফাইল নিয়ে দুই কর্মকর্তার হাতাহাতি

১৫

কর্মস্থলে ‘অনুপস্থিত’, এবার পুলিশের ২ এসপি বরখাস্ত

১৬

এশিয়া কাপ দল নিয়ে তোপের মুখে বিসিসিআই

১৭

নারী-শিশুসহ ছয় ভারতীয় নাগরিক আটক

১৮

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার : উপদেষ্টা আসিফ

১৯

পিয়াইন নদীতে অবাধে বালু লুট, হুমকিতে বসতবাড়ি 

২০
X