গ্রামপর্যায়ে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে স্থাপিত কমিউনিটি ক্লিনিকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে খুলনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কয়রা জোনাল অফিস কর্তৃপক্ষ। কয়রা উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকা দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা কমিউনিটি ক্লিনিকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায় গরমের মধ্যে সেবা নিতে আসা নারী-শিশুসহ অন্যান্য মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
সেবাপ্রত্যাশীদের যথাযথ সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দীর্ঘ এক মাস বিদ্যুৎ বিভাগের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও এখনো সংযোগ যুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) আংটিহারা ক্লিনিকে গিয়ে জানা যায়, প্রায় এক মাস কমিউনিটি ক্লিনিকটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। সেখানের বিদ্যুতের মিটারটি গত ১১ সেপ্টেম্বর খুলে নিয়ে যায় খুলনা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির কয়রা জোনাল অফিসের টেকনিশিয়ানরা। সেই থেকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ বারবার বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো সুফল মেলেনি।
সেবা নিতে আসা আল মাহমুদ বলেন, ক্লিনিকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকায় গরমে আমরা কষ্ট পাচ্ছি। বিশেষ করে মা ও শিশুরা বেশি কষ্ট পাচ্ছেন। ক্লিনিক ও বিদ্যুৎ অফিসের সঙ্গে কী হয়েছে সেটা আমরা জানি না। তবে এর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ জনগণের।
এদিকে, অবৈধ সংযোগ অভিযোগে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখেছেন বলে জানিয়েছেন কয়রা জোনাল বিদ্যুৎ অফিসের ডিজিএম (চলতি দায়িত্ব) মো. কায়সার রেজা। তিনি বলেন, ওই এলাকার আড়াই শতাধিক মিটারে টেম্পারিং করা হয়েছে। যা আমাদের আইন অনুযায়ী অবৈধ। আমরা জনগণের দুর্ভোগের কথা মাথায় রেখে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা করছি।
এ বিষয়ে আংটিহারা কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিউনিটি হেলথ্ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) সাধন কুমার সরকার জানান, কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন ৪০-৫০ জন প্রসূতি মাসহ নানা ধরনের রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। প্রত্যাশিত সেবা পেলেও ক্লিনিকে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের গরমে কষ্ট পেতে হচ্ছে। আমরাও কষ্টের মধ্যে সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, ক্লিনিকটিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা তিন দিন বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল না। এজন্য আমি বিদ্যুৎ বিভাগের ফুলতলা স্টেশনের (হট লাইন) নাম্বারে ফোন করে অবহিত করি। এরপরে ১০ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন সংযোগের জন্য নাজমুল নামে একজনকে পাঠান। তিনি (নাজমুল) ক্যাবল লাইন চেক করার পরে সমস্যা না পেয়ে মিটার খুলে দেখেন। তবে মিটার খুলেও সংস্কার করতে না পেরে সংযোগ দিতে ব্যর্থ হন। পরের দিন (১১ সেপ্টেম্বর) বিদ্যুৎ অফিস থেকে টেকনিশিয়ানরা গিয়ে মিটার খুলে নিয়ে যান। তখন তারা জানান মিটারে সমস্যা হয়েছে। পরে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানানো হয়, আমি নাকি মিটারের বিল কমানোর জন্য টেম্পারিং করে রেখেছি। অথচ আমি কখনোই মিটারে হাত দেইনি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজাউল করিম বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ আমাকে কোনো কিছুই অবহিত না করেই মিটার খুলে নিয়ে যায়। আমি আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীর মাধ্যমে জানার পরে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আমার প্রতিনিধিকে কয়রা অফিসে পাঠিয়েছি। তিনি জনদুর্ভোগের বিষয়টি ডিজিএমকে বলার পরেও মিটারের ব্যবস্থা করা হয়নি। এটা যে সরকারি প্রতিষ্ঠান এটাও ডিজিএম মানতে চান না। এটা বরং আমাদের কর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ করা হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, মিটার পরীক্ষা করা এবং খুলে নেওয়ার কাজ বিদ্যুৎ বিভাগের লোকই করেছেন। টেম্পারিং থাকলে ওই সময় আমাকে অবহিত না করে কোনো চাক্ষুষ প্রমাণ ছাড়াই মিটার নিজেদের অফিসে নিয়ে পরবর্তীতে টেম্পারিংয়ের অভিযোগ অগ্রহণযোগ্য এবং ভিত্তিহীন। আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী বিল কমানোর জন্য কেন মিটার টেম্পারিং করবে? স্বাস্থ্য কর্মী তো নিজের টাকা দিয়ে বিল পরিশোধ করেন না। এ ছাড়া এটা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এবং যদি আমাদের কর্মীর কোনো ত্রুটি থেকে থাকে তাহলে আমাকে অফিসিয়ালি জানানো উচিত। সেক্ষেত্রে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিব। আর মিটারের বিষয়ে আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করার চেষ্টা করছি।
মন্তব্য করুন