ময়মনসিংহ ব্যুরো
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০৯:০৫ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ময়মনসিংহ জেলা আ.লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি নিয়ে ক্ষোভ

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। ছবি : কালবেলা
ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। ছবি : কালবেলা

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। এক সপ্তাহ পর থেকে সেই কমিটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন পদবঞ্চিতরা। সম্প্রতি মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, জেলা থেকে পাঠানো প্রস্তাবিত তালিকা থেকে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল নেতারা সুবিধা নিয়ে বিতর্কিতদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

কমিটিতে বহিরাগত, বহিষ্কৃত, প্রবাসী ও বিতর্কিত অন্তত ২৬ ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। তাদের মধ্যে ১৬ জনের নাম স্থানীয় আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রকাশ করা একটি তালিকায় বলা হয়েছে, ময়মনসিংহে বাড়ি নয়- এমন ব্যক্তিও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। কার্যনির্বাহী সদস্য মৃনাল মুর্মুর বাড়ি ময়মনসিংহে নয়, নেত্রকোনার দুর্গাপুরে। কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট আব্দুল মোতালেব লাল বিপ্লবী ছাত্র মঞ্চের সাবেক সদস্য। তিনি সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) উপজেলা সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রব জাসদের সাবেক নেতা। তিনি আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যও নন। সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ আনোয়ার বুলবুলের বাবা রাজাকার ছিলেন। তিনি কখনও জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। সাংগঠনিক সম্পাদক জিয়াউল হক সবুজ ত্রিশালের রাজাকার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আদিল চেয়ারম্যানের জামাতা।

এতে আরও দাবি করা হয়, গফরগাঁওয়ের রাজাকার চান মিয়ার ছেলে অ্যাডভোকেট কায়সার আহমেদকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা হয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় যুবলীগ তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছে। ত্রিশাল পৌর নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় বহিষ্কৃত এ বি এম আনিছুজ্জামানও কার্যনির্বাহী সদস্য হয়েছেন। সাংস্কৃতিক সম্পাদক অধ্যাপক মফিজুন নুর খোকাও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করায় বহিষ্কৃত হন। সহসভাপতি এম এ ওয়াহেদ প্রবাসী। তার বাবা ভালুকা উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়ন কৃষক দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। কার্যনির্বাহী সদস্য ছাড়া একই ব্যক্তির দলের দুই পদে থাকার নিয়ম না থাকলেও অধ্যাপক দিলরুবা শারমীনকে মহিলাবিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে। তিনি জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। কার্যনির্বাহী সদস্য নুরজাহান মিতু জেলা মহিলা আওয়ামী লীগে সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। দলে প্রাথমিক সদস্যপদ নেই শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক আবু সাহাদাত সায়েমের। উপদপ্তর সম্পাদক মোস্তফা মামুনুর রায়হান অসীমেরও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ নেই। তিনি মাদক ব্যবসার জড়িত। পরিবেশ ও বন সম্পাদক ড. সিরাজুল ইসলামও দলীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না। দলে তার প্রাথমিক সদস্যপদ নেই। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় অ্যাডভোকেট আব্দুর রাজ্জাককে সহসভাপতি করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ড. আবুল হোসেন দীপুর বাবা রাজাকার। মানববন্ধন থেকে দাবি করা হয়েছে বিতর্কিত এই ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখায় ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগ ঘরানার রাজনীতিতে ক্ষোভ ও অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।

জেলা শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম শাহীন বলেন, জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অগোচরে প্রস্তাবিত কমিটির ২৬ জনকে বাদ দিয়ে বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারী এবং প্রাথমিক সদস্যপদ নেই- এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখা হয়েছে। যারা দীর্ঘদিন দলীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের কমিটিতে রাখা হয়নি। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছেন।

ময়মনসিংহ জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ভৌমিক বলেন, মূলত আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় দুজন নেতা বিতর্কিত ব্যক্তিদের কমিটিতে স্থান করে দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি মানতে না পেরে প্রতিবাদ করছি। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই আমরা প্রতিবাদ করে যাচ্ছি। বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দেওয়ার পাশাপাশি ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্ব থেকে ওই দুই নেতার অব্যাহতিও আমাদের দাবি।

ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এহতেশামুল আলমও জেলা থেকে পাঠানো তালিকা থেকে কিছুসংখ্যক নাম বাদ দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। এহতেশামুল বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। এখানে সবাইকে হয়তো দলে রাখা যাবে না। তবে পুরোনো ও ত্যাগী নেতাদের রাখা উচিত।

জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, প্রস্তাবিত তালিকা থেকে দু-একজনের নাম বাদ পড়েছে। তবে কমিটিতে দু-একজন নিষ্ক্রিয় ব্যক্তি থাকলেও বিতর্কিত কেউ নেই।

উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৩ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। গত ২৫ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রের অনুমোদন পায় এই দুই কমিটি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিকেলে ব্যাংকে ঢুকে লুকিয়ে ছিল সহিদুল, রাতে ডাকাতির চেষ্টা

সকালে ঘুম থেকে উঠতে কষ্ট হয়? মেনে চলুন এই ৬ টিপস

মেসি ঝলকে ফাইনালে মায়ামি

চাঁদা না দেওয়ায় গণঅধিকার নেতার হাতে ইউপি চেয়ারম্যান লাঞ্ছিত

মাদকসেবন করে মাতলামি করায় যুবকের কারাদণ্ড

আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না: সুনীতা আহুজা 

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদমর্যাদাক্রম নিয়ে পরবর্তী আপিল শুনানি ৪ নভেম্বর 

শহিদের সঙ্গে প্রেম-বিচ্ছেদের কারণ জানালেন কারিনা

গাজায় তীব্র রূপ ধারণ করেছে দুর্ভিক্ষ, অনাহারে মৃত্যু ৩১৩ জনের

রাজধানীতে লরির ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে গেল সিএনজি, নিহত ১

১০

টিয়া পাখি নিয়ে ভিডিও করে বিপাকে শিক্ষিকা 

১১

গ্রিন কার্ডের আবেদনে আসছে বড় পরিবর্তন

১২

কেমন থাকবে আজকের ঢাকার আবহাওয়া

১৩

গাজাবাসীর জন্য রোজা থাকছেন বিশ্বের ১৫০ আলেম

১৪

ডেনমার্ক দূতাবাসে চাকরির সুযোগ

১৫

সকালে উঠেই কোন ভুলের কারণে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি 

১৬

গাজা সিটির নতুন এলাকায় ট্যাংক নিয়ে ঢুকেছে ইসরায়েলিরা

১৭

বেড়েছে স্বর্ণের দাম, আজ ভরিতে বিক্রি হচ্ছে কত টাকায়

১৮

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতায় কতটা অস্বস্তিতে ভারত?

১৯

সারা দেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার ১৬৬২

২০
X