নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে যৌতুক না পেয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন স্বামী। পরে মরদেহ শৌচাগারে ফেলে পালিয়ে যান তিনি। স্বামী মো. আবু ইউসুফকে (২২) গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ তথ্য জানিয়েছেন পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম। রোববার (৮ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সোনাইমুড়ী থানায় সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন, চাটখিল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নিত্যানন্দ দাস ও সোনাইমুড়ী থানার ওসি বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী।
এর আগে শনিবার (৭ অক্টোবর) সাতক্ষীরা শহরের একটি আবাসিক হোটেলে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাজিবের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বামী আবু ইউসুফ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার নবীপুর গ্রামের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সোনাইমুড়ী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গণি মাস্টারের পোল সংলগ্ন এলাকার ভাড়া বাসার শৌচাগার থেকে রহিমা আক্তার সুমির অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আবু ইউসুফ একজন পেশাদার চোর। তিনি বিভিন্ন মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের মুঠোফোন চুরি করতেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে নোয়াখালীর চাটখিলের তরুণী রহিমা আক্তার সুমির (১৯) সঙ্গে পরিচয় হয় তার। পরিচয়ের একপর্যায়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে গত এপ্রিল মাসে বাড়িতে কাউকে কিছু না জানিয়ে সুমি পালিয়ে যান। দুই দিন পর বাড়িতে ফোন করে জানান, তিনি কুমিল্লা আছেন, ভালো আছেন। এরপর সুমি ইউসুফকে নিয়ে চাটখিলের গ্রামের বাড়িতে এলে দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের আবার বিয়ে দেওয়া হয়।
ইউসুফের বরাত দিয়ে আরও জানানো হয়, গত মাসে ইউসুফ সোনাইমুড়ী পৌর শহরের দুশ্চিম পাড়া পৌরসভা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন। গত ১ অক্টোবর সকালে তিনি বিদেশে যাওয়ার জন্য স্ত্রীকে বাবার বাড়ি থেকে এক লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। কিন্তু স্ত্রী টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তর্কবিতর্ক ও বাগবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে আবু ইউসুফ সুমিকে থাপ্পড় মারলে তার নাক-মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তখন তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা আরও বেড়ে যায়। এ সময় ইউসুফ স্ত্রীর গলায় থাকা ওড়না পেছন দিয়ে প্যাঁচিয়ে ধরলে এক মিনিটের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়।
পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম আরও জানান, ইউসুফ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, স্ত্রী সুমির মৃত্যুর পর তিনি ওইদিন মেঝেতে লাশ ফেলে বাসার দরজায় তালা ঝুলিয়ে ঢাকায় চলে যান। পর দিন বাসায় আসেন। এ সময় স্ত্রীর লাশ বাথরুমে নিয়ে লুকিয়ে রাখেন এবং বাথরুমের দরজা বন্ধ করে বাসায় তালা দিয়ে সাতক্ষীরা পালিয়ে যান। এ ব্যাপারে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন