ময়মনসিংহে গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাতভর রেকর্ড বৃষ্টিতে ৮০০ কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে মৎস্য খাতে। এই খাতে অন্তত ৬৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমন ধান, সবজি, রাস্তা, কালভার্ট ও ময়মনসিংহ শহরের বাঁধ ভেঙে আরও অন্তত ১৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠাল ইউনিয়নের বালিয়ারপাড় ফারহান ফিসারিজের মালিক এনামুল হক ৩৫ একর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ৬০ লাখের বেশি মাছ পালন করছিলেন। এ পর্যন্ত অন্তত সাড়ে ১০ কোটি টাকারও বেশি খরচ হয়েছে তার মৎস্য খামারে। প্রবল বর্ষণের ফলে ফিসারি থেকে অন্তত পাঁচ কোটি টাকার বেশি মাছ চলে গেছে। তিনি বলেন, একদিনের বৃষ্টিতে এমন পরিস্থিতি হবে তা ভাবতে পারিনি। কোনো ধরনের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই সব শেষ।
ঋণের টাকা কিংবা ফিড কোম্পানি থেকে বাকি খাদ্য নিয়ে মাছে বিনিয়োগ করে হাজারো মাছ চাষি পথে বসেছেন। বৃষ্টিতে মৎস্য খামারগুলো থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বেরিয়ে পড়ায় সারা জেলাজুড়ে মাছ ধরার হিড়িক পড়েছে। চারদিকে পানি থৈ থৈ করায় সাধারণ মানুষ জাল পেতে মাছ ধরছেন।
জেলার মুক্তাগাছ উপজেলার খিলগাঁও গ্রামের ওয়াহিদুজ্জান মোল্লার ২০ একর জমিতে পুকুরে শিং, কৈ ও টেংরা ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। কিন্তু এক রাতে পানিতে তার অন্তত ৫০ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে। জেলার ১৩টি উপজেলায় মৎস্য চাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জেলায় বড় আকারের বাণিজ্যিক খামার রয়েছে ৭৪ হাজার, ছোট ও অবাণিজ্যিক আকারের পুকুর আছে ১ লাখ ৬৩ হাজার। মাছ চাষি আছে প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার। চলতি বছর ৪ লাখ টন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মৎস্য বিভাগের। যার বাজারমূল্য অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দীলিপ কুমার সাহা বলেন, এ বৃষ্টিতে ২২ হাজার চাষি ক্ষতির মুখে পড়েছেন। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। ১৪ হাজার টন মাছ চলে গেছে। প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হতে পারে। এই অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে এটি বেশ প্রভাব ফেলবে।
ময়মনসিংহ কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মতিউজ্জামান বলেন, জেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে আমন ধান এবং প্রায় ১১ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির আবাদ হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ১১ হাজার ৪২০ হেক্টর জমির আমন ধানের চারা ও ৬৯০ হেক্টর জমির সবজি। পানিতে আর কয়েক দিন ফসল নিমজ্জিত থাকলে চাষিদের ক্ষতির মাত্রা বাড়বে কয়েক গুণ।
ময়মনসিংহ শহর বাঁধের ৯ কিলোমিটারে অন্তত ১৫টি স্থানে ধসে গেছে। এতে বিভিন্ন পয়েন্টে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে এলাকাগুলো। ধসেপড়া অংশগুলো মেরামতে অন্তত দুই কোটি টাকা লাগতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আখলাক উল জামিল।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিপ্তরের উপজেলাগুলোতে কালভার্ট ও রাস্তার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির মাত্রা দাঁড়াতে পারে অন্তত ৫০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত বলে জানিয়েছেন সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী সৈয়দ আবদুর সবুর।
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান বলেন,এই দুর্যোগে ১১ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মন্তব্য করুন