রাবিদ মাহমুদ চঞ্চল, আশাশুনি (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০৭:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাসেই বেড়িবাঁধহীন অবস্থার দুই যুগ পার

সাতক্ষীরার আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট এলাকা। ছবি : কালবেলা
সাতক্ষীরার আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট এলাকা। ছবি : কালবেলা

বেড়িবাঁধহীন অবস্থায় দীর্ঘ দুই যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ হয়নি সাতক্ষীরার আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট এলাকার ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ। খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি আটকানো হচ্ছে মৎস্য ঘেরের সরু রিং বাঁধ দিয়ে। আতঙ্কে দিন কাটছে সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের। উপজেলা সদর থেকে ২ কিলোমিটার দূরবর্তী বলাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র ভরসা দুই চাকার বাহন। ভোটের সময় জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া আশ্বাসে কেটে গেল দুই যুগের অধিককাল। কেউ কথা রাখেনি।

স্থানীয়রা জানান, আশাশুনি উপজেলা সদর থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে দয়ারঘাট গ্রামের নিমাই মন্ডলের বাড়ি থেকে বলাবাড়িয়া গ্রামের সুনীল মন্ডলের বাড়ি পর্যন্ত ৬৫০ মিটার খোলপেটুয়া নদীর কোনো বেড়িবাঁধ নেই। সেখানে রিং বাঁধের ওপর ভর করে রয়েছে স্রোতস্বিনী খোলপেটুয়া নদী। ১৯৯৫ সালে বলাবাড়িয়া ও দয়ারঘাট গ্রামের মাঝামাঝি ৬ ব্যান্ড স্লুইস গেট সংলগ্ন এলাকায় স্রোতস্বিনী খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলা সদর, পার্শ্ববর্তী শ্রীউলা ইউনিয়নসহ কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়ে বসতবাড়িসহ শত শত মৎস্য ঘের ভেসে যায়। সে সময় জোয়ার ভাটার কারণে স্লুইস গেট সংলগ্ন এলাকায় গভীর খাদের সৃষ্টি হয়। এরপর এলাকাবাসীর প্রচেষ্টায় প্রায় ২ হাজার বিঘা জমি ঘিরে রিং বাঁধের মাধ্যমে জোয়ারের পানি আটকে দেওয়া হয়। এর প্রায় ১০ বছর পর ২০০৫ সালে মূল বাঁধ থেকে সরে চুক্তির ভিত্তিতে ক্লোজার চাপান দিয়ে ওই ২ হাজার বিঘা জমিতে মৎস্য চাষ শুরু করেন খুলনার জনৈক ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বাহার। তৎকালীন তার মৎস্য ঘেরের বাঁধটিই অদ্যাবধি পর্যন্ত ওয়াপদা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এরপর সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠার আগে আবারও ২০২০ সালে আম্পানে ওই এলাকায় রিং বাঁধের ৪টি পয়েন্টে ভেঙে এবং সেই নিচু রিং বাঁধ ছাপিয়ে জোয়ারের পানিতে বসতবাড়িসহ শতাধিক মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়। এক মাস ধরে বলাবাড়িয়া থেকে আশাশুনি সদরে যাতায়াত দুরূহ হয়ে পড়ে। সেই সময় কোনো বেড়িবাঁধ না থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় মালামাল, রোগী, নারী-শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের যাতায়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এরপরও অধ্যাবধি পর্যন্ত সেখানে কোনো বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি।

স্কুলশিক্ষক বিকাশ মন্ডল বলেন, এখানে ৬৫০ মিটার মৎস্য ঘেরের বাঁধের রাস্তা স্থানীয় জনগণের ব্যক্তিগত জমির ওপর দিয়ে হওয়ায় ১৯৯৫ সাল থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত বলাবাড়িয়া গ্রামে যাতায়াতের জন্য কোনো সরকারি রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও জানান, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও আশাশুনি সদর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরের গ্রাম বলাবাড়িয়ায় যাতায়াতের কোনো সরকারি রাস্তা বা ইটের সোলিংও নেই এটা দুঃখজনক।

আশাশুনি প্রেস ক্লাবে সাবেক সাধারণ সম্পাদক সমীর রায় বলেন, বর্ষা মৌসুমে কাদাপানিতে এ গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। অথচ আমাদের গ্রামসহ আশপাশে যত গ্রাম আছে সব গ্রামেই চিংড়ি চাষ হয়ে থাকে। কোটি কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি হয়ে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রেখে চললেও এ এলাকার মানুষের ভাগ্যের কোনো উন্নয়ন হয়নি।

তিনি আরও জানান, ভালো রাস্তা না থাকার কারণে এ গ্রামে তিন চাকার ভ্যান এমনকি অ্যাম্বুলেন্সও ঢুকতে পারে না। এ গ্রামের যাদের মোটরসাইকেল আছে বর্ষা মৌসমে সেগুলোকে পার্শ্ববর্তী কোনো আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে আসতে হয়। এ এলাকার ছেলেমেয়েরা বর্ষার কাদাপানিতে ভিজেপড়ে তাদের লেখা পড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবেই তারা বছরের পর বছর পার করে যাচ্ছেন।

আশাশুনি সদর ইউপি চেয়ারম্যান এসএম হোসেনুজ্জামান বলেন, জমি জটিলতার কারণে দীর্ঘদিন বেড়িবাঁধ নির্মাণ সম্ভব হয়নি। এলাকাবাসীর প্রাণের দাবির কারণে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক স্যারের তৎপরতায় গত কিছুদিন আগে জাইকা দয়ারঘাট-বলাবাড়িয়া এলাকায় নির্দিষ্ট সীমানায় ৫৫০ মিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধের মাপজরিপ সম্পূর্ণ করেছে। এটি আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে টেন্ডার হবে বলে আশা করছি।

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশিকুর রহমান বলেন, দয়ারঘাট থেকে বলাবাড়িয়া বেড়িবাঁধের বিষয়টা ইতোমধ্যে জেনেছি। সরেজমিনে গিয়ে বিস্তারিত জানাবেন বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিএসই টেক ফেস্ট ২০২৫ অনুষ্ঠিত

ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষে ২ শ্রমিক নিহত

টঙ্গীতে উপদেষ্টার গাড়ি আটকে বিক্ষোভ

আপনার মোবাইল দিয়েই করুন টাইফয়েড টিকার রেজিস্ট্রেশন

১৯ বছর ধরে একটি সেতুর অপেক্ষায় ২০ হাজার মানুষ

২০টি ভয়ংকর জে-১০ যুদ্ধবিমান কিনছে বাংলাদেশ, খরচ ২৭ হাজার কোটি

লবণের মাঠ ও চিংড়ি ঘের দখল নিয়ে দুপক্ষের সংঘর্ষ

গাজাগামী ফ্লোটিলার ১৩০ কর্মীকে জর্ডানে পাঠাল ইসরায়েল

সাবের হোসেনের সঙ্গে যেসব বিষয়ে আলোচনা করেন ৩ রাষ্ট্রদূত

নির্বাচনকে ভিন্ন খাতে পরিচালিত করতে ‘গভীর ষড়যন্ত্র’ চলছে : মির্জা ফখরুল

১০

বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সূচিতে পরিবর্তন

১১

আবরার হত্যার বিচার করলেই আ.লীগ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত : চরমোনাই পীর

১২

ফুসফুস ক্যানসারের এই ৫ উপসর্গ সাধারণ অসুখ ভেবে এড়িয়ে যাচ্ছেন না তো?

১৩

ভৈরবে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পাদুকা খাতে উদ্ভাবন শীর্ষক আঞ্চলিক ক্যাম্পেইন

১৪

বিসিবিতে নতুন দায়িত্ব বণ্টন: কোন কমিটির নেতৃত্বে কে?

১৫

চট্টগ্রামে যুবদলের দুই নেতাকে বহিষ্কার

১৬

মানসিক ভারসাম্যহীন মা, ফুটফুটে কন্যা সন্তান পেল নতুন ঠিকানা

১৭

ট্রাম্পের ‘ডাক্তার দেখানো উচিত’ মন্তব্যে গ্রেটা থুনবার্গের পাল্টা জবাব

১৮

১৭ মাসে কোরআনে হাফেজ, উপহার পেল রাদিফ

১৯

তিন মাসে ৫০ দিন অনুপস্থিত মেডিকেল অফিসার

২০
X