মনিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৫০ এএম
অনলাইন সংস্করণ
যশোরের ৫ শহীদ

বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষত স্থানে দেওয়া হয় লবণ

যশোরের মনিরামপুরে পাঁচ শহীদের কবর। ছবি : কালবেলা
যশোরের মনিরামপুরে পাঁচ শহীদের কবর। ছবি : কালবেলা

আজ ২৩ অক্টোবর। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাজাকাররা রাইফেলের বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যা করে যশোরের পাঁচজনকে। এ দিন শহীদ হয়েছিলেন আসাদুজ্জামান আসাদ, সিরাজুল ইসলাম শান্তি, আহসান উদ্দীন খান মানিক, আশিকুর রহমান তোজো ও বজলুর রহমান বজলু।

ওই নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে এখনো সাক্ষী হিসেবে বেঁচে আছেন চিনাটোলা বাজারের মুটে ব্যবসায়ী শ্যামাপদ নাথ। তিনি জানান, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ২৩ অক্টোবর সকালে যশোরের মনিরামপুর উপজেলার রত্মেস্বরপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র ছয় যুবক। কিন্তু হানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকারদের চোখ এড়াতে পারেননি তারা। রাজাকাররা ছয় যুবককে ধরে নিয়ে যায়। এরপর চোখ বাঁধা অবস্থায় আনা হয় মনিরামপুর উপজেলার চিনাটোলা বাজারে। বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তাদের শরীরে লবণ দেওয়া হয়। অমানবিক নির্যাতন চালানো হয় ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত। রাত ৮টার দিকে নেওয়া হয় সৈয়দ মাহমুদপুর গ্রামসংলগ্ন হরিহর নদের তীরবর্তী স্থানে। সেখান থেকে নদীতে লাফ দিয়ে একজন পালিয়ে যান। কিন্তু রাজাকারদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি অপর পাঁচ যুবক। কিছুক্ষণ পর বাঁশি বাজতেই বন্দুকের কয়েকটি গুলির আওয়াজ শোনা যায়। একে একে সবাই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। নদীর তীরে যেখানে তাদের হত্যা করা হয়, পর দিন সকালে সেখানে তাদের সমাহিত করা হয়।

এ বর্বর হত্যার স্মৃতি আজও ভুলতে পারেনি শ্যামাপদ নাথ। তার আক্ষেপ স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশমাতৃকার জন্য যারা অকাতরে শহীদ হলো তাদের তেমন কেউ মনে রাখেনি। অযত্ম-অবহেলায় পড়ে আছে শহীদদের সেই বধ্যভূমি।

দিনটি স্মরণ করতে পরিচ্ছন্ন ও রঙ করানো হয়েছে শহীদদের সমাধিস্থল। রোববার (২২ অক্টোবর) ধোয়ামোছার কাজ করছিলেন ওমর আলী। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে তিনি সিরাজুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে পরিচ্ছনতার কাজ করে আসছেন।’

মনিরামপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার গাজী আবদুল হামিদ বলেন, সরকারিভাবে পাঁচ বীরকে মনে রাখা হয় না। শুধু ফজলুকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেওয়া হয়েছে। তিনি অন্যদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠানোর দাবি জানান। একই সঙ্গে এদেরকে স্মরণ করতে সরকারিভাবে স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে উদ্যোগ নিতে বলেন আবদুল হামিদ।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার আলা উদ্দিন বলেন, ‘স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির কর্মসূচিতে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা অংশ নিয়ে থাকি।’ তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, উপজেলার সব শহীদের স্মৃতি ও বধ্যভূমি সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে বলা হবে। আজ সোমবার (২৩ অক্টোবর) পাঁচ শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির উদ্যোগে ওই বধ্যভূমিতে সকাল সাড়ে ৯টায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

নির্বাচনের দিন গণভোট চায় বিএনপি-এনসিপি, জামায়াত চায় আগে

সড়ক দুর্ঘটনায় জামায়াত নেতা নিহত

তারেক রহমানের পক্ষ থেকে কৃষকদের মাঝে সার বিতরণ

চার জেলায় বন্যার আশঙ্কা

মির্জা গালিবের হার্ভার্ডে নিয়োগ নিয়ে যা জানা গেল

কর্ণফুলী টানেলে বাস দুর্ঘটনা, চিকিৎসাধীন একজনের মৃত্যু

শিক্ষার বিস্তারে হাওরে শিশুদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে : মাহবুবুর রহমান

গ্রেপ্তারের সময় পুলিশকে যা দেখাতে হবে

এবার পদ্মা সেতু ব্লকেডের হুঁশিয়ারি

চাকসু নির্বাচন / ছুটির পর প্রচারে জমজমাট চবি ক্যাম্পাস

১০

তিস্তার পাড়ে রেড অ্যালার্ট

১১

ডেঙ্গু পরীক্ষা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুরোধ

১২

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক / সংসদ নির্বাচনে আলাদা ব্যালট রাখার কথা বলেছে বিএনপি

১৩

মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির কাছে বাংলাদেশের নবনিযুক্ত হাইকমিশনারের পরিচয়পত্র পেশ

১৪

‘সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা ক্লিন ইমেজের নেতাদের মনোনয়ন দেবে বিএনপি’

১৫

চট্টগ্রামে দুই সাংবাদিকের ওপর হামলায় সিইউজের নিন্দা

১৬

কুর্দিস্তানে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে

১৭

হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে আগে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, দেখে নিন একাদশ 

১৮

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে পোকামাকড়ের উপদ্রব!

১৯

৫৮ বছরে সন্তানের বাবা হলেন আরবাজ খান

২০
X