গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে জরায়ু ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে একটি জিরাফের মৃত্যু হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর জিরাফটির মৃত্যু হলেও শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে জিরাফের মৃত্যুর বিষয়টি প্রকাশ পায়।
ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার সাংবাদিকদের জানান, মারা যাওয়ার পর জিরাফের ময়নাতদন্ত করেছে ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড। ওই বোর্ডের অধীনে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে জিরাফটির চিকিৎসা চলছিল। মারা যাওয়া জিরাফের দেহ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাফারি পার্কের ভেতরে নির্দিষ্ট এলাকায় মাটি চাপা দেওয়া হয়। এ মৃত্যুর বিষয়ে শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সাফারি পার্কে থাকা তিনটি জিরাফই ছিল মাদী। কোনো পুরুষ জিরাফ না থাকায় তাদের মধ্যে প্রজনন হচ্ছিল না। পরিণত এবং ম্যাটিং ব্যর্থ এ জিরাফের জরায়ুতে পচন সৃষ্টি হয় যা পরে ক্যানসারে রূপ নেয়। বিকল্প মেটিংয়ের জন্য ঢাকা চিড়িয়াখানায় যে জিরাফ রয়েছে সেটিও টিবি রোগাক্রান্ত, যার কারণে সেটি দিয়েও পার্কে জিরাফ প্রজনন করা ঠিক হবে বলে তা করা হয়নি।
তিনি জানান, নতুন পুরুষ জিরাফ কেনা ছাড়া সাফারি পার্কে জিরাফ প্রজনন করা সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমানে জিরাফ কেনার বাজেট না থাকায় তা কেনাও সম্ভব হচ্ছিল না। নতুন করে বাজেট দিয়ে এটি কিনতে হবে।
তিনি আরো জানান, মারা যাওয়া জিরাফটি ২০২১ সাল থেকে অসুস্থ ছিল। ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে এর জরায়ুতে পচন ধরে। পরে তা শরীরের পেছনের অংশে বিস্তার লাভ করে। অসুস্থ অবস্থায় এটিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। নিরাপত্তার জন্য আক্রান্ত জিরাফটিকে আলাদা জায়গায় রাখা হয়।
পার্ক সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি জিরাফের মৃত্যু হওয়ার পর পার্কে আর দুটি জিরাফ অবশিষ্ট আছে। তবে ওই দুটি জিরাফও স্ত্রী। ২০১৩ সালে পার্ক প্রতিষ্ঠাকালে দুই দফায় দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ১০টি জিরাফ আনা হয়। আন্তর্জাতিক প্রাণী বিপণন প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন ট্রেডার্সের মাধ্যমে এগুলো আমদানি করে কর্তৃপক্ষ।
এরপর ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আরো চারটি জিরাফ বাচ্চা দেয়। অপরদিকে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে রোগাক্রান্ত হয়ে বেশকিছু জিরাফ মারা যায়। সর্বশেষ পার্কে মাত্র তিনটি স্ত্রী জিরাফ টিকে ছিল।
এ বিষয়ে বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের বন সংরক্ষক ইমরান আহমেদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থেকে জিরাফটির মৃত্যু হয়েছে। যথাযথ নিয়ম অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বোর্ড ময়নাতদন্ত করে দেহ মাটি চাপা দিয়েছে। এ ছাড়া মরদেহের বিভিন্ন অংশের নমুনা ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। নতুন করে পার্কে আরো প্রাণী আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এগুলো পাস করা হলে পার্ক আরো সমৃদ্ধ হবে।’
এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গোলাম হায়দার বলেন, ‘জিরাফ দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের প্রাণী। সেখানে যে পরিবেশ সে পরিবেশ সাফারি পার্কে নেই। ফলে আমদানি করা জিরাফ পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছে না।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাসিম বলেন, ‘সাফারি পার্কে প্রাণী মৃত্যুর বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।’
মন্তব্য করুন