জামালপুরের মাদারগঞ্জে মাদকাসক্ত এক ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তৃতীয়বারের মতো তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছেন মা। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাকে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
মঙ্গলবার ( ৭ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ ঘটনা ঘটে। মাদকাসক্ত ওই যুবকের নাম ইমরান হোসেন লেমন ( ২৮)। তিনি শহরের বানীকুঞ্জ এলাকার মৃত সুলতান মিয়ার ছেলে।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও স্বজন সূত্রে জানা গেছে, বাবা হারানো মাদকাসক্ত লেমন ২০১০ সালে বালিজুড়ি এফ এম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। ২০১৩ সালে মাদারগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসে অফিস সহায়ক পদে মাস্টার রোলের আওতায় চাকরি পান তিনি। পরবর্তীতে সে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদক সেবনের টাকার জন্য অফিসের জিনিসপত্র চুরি করে বিক্রির অভিযোগে চাকরিও হারান লেমন।
চাকরি হারানোর পর লেমন বাবুর্চির কাজ শুরু করেন এবং সেই টাকা দিয়ে নিয়মিত হেরোইন সেবন করতেন। একপর্যায়ে লেমনের মা রেনেকা বেগম ২০২০ সালে তাকে পুলিশে সোপর্দ করে ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের ব্যবস্থা করেন। ২ মাস কারাভোগের পর লেমনের মা রেনেকা বেগম তাকে ছাড়িয়ে আনেন। এরপর ২০২৩ সালের মে মাসে পুনরায় তাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। কিছুদিন আগে তার কারাভোগের মেয়াদ শেষ হলে তিনি ছাড়া পান। ছাড়া পাওয়ার পর তিনি আবারও হেরোইন সেবন শুরু করেন। হেরোইনের টাকার জন্য ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর ও তার মা রেনুকা বেগমের ওপর অত্যাচার শুরু করে লেমন।
কারাদণ্ডের সময় উপস্থিত মা রেনেকা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে কালবেলা প্রতিবেদককে বলেন, আমার ছেলে মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। আজকে যারা তাকে মাদকাসক্ত বানিয়েছে আল্লাহ তাদের বিচার করবেন। একজন মা কতটা বাধ্য হলে তার নিজ সন্তানকে পুলিশে দেয়। আমার ছেলের মতো যেন কোনো মায়ের সন্তান না হয়। এ কথা বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন রেনেকা বেগম।
মাদারগঞ্জ মডেল থানার এসআই জিন্নত আলী জিন্নাহ বলেন, মাদকাসক্ত লেমনের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তার মা রেনুকা বেগম আমাদের শরণাপন্ন হন। পরে আমরা গিয়ে তাকে আটক করি। তার মায়ের সম্মতিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করার পর তাকে জামালপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
জিন্নত আলী আরও বলেন, এর আগেও লেমনকে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষ হলে সম্প্রতি তিনি কারামুক্ত হয়ে পুনরায় মাদক সেবন শুরু করেন। মাদকের টাকা না পেলে ঘরের জিনিসপত্র ভাঙচুর করতেন। তার মা রেনেকা বেগম বাধা দিলে তাকে হত্যার হুমকি ও মারধর করতেন।
মন্তব্য করুন