মেহেরপুরের গাংনীর উপজেলার দেবীপুর গ্রামে সন্তান প্রসব করা মানসিক ভারসাম্যহীন সেই নারীর পরিচয় মিলেছে। তার প্রকৃত নাম শরিফা খাতুন। সে নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার কুলিয়াটি গ্রামের মৃত হান্নান মিয়ার মেয়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি শরিফার পরিবারের নজরে আসে। অবশেষে বুধবার (৮ নভেম্বর) সকালে শরিফার আত্মীয়স্বজনদের পরিচয় শনাক্ত ও নিশ্চিত হয়ে উপজেলা প্রশাসন শরিফাকে হস্তান্তর করেন।
শরিফাকে হস্তান্তরের সময় গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিতম সাহা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীমসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।
গৃহকর্তা মহসিন আলী জানান, মাসখানেক আগে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছিল শরিফা। ছেলেমেয়েরা উত্ত্যক্ত করছিল তাকে। বিষয়টি দেখে আমার পরিবারের লোকজন তাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। শারীরিক গঠন দেখে সন্তানসম্ভাবা বুঝতে পেরে স্থানীয় ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর অন্তঃসত্ত্বার বিষয়টি নিশ্চিত হই। গত (১২ অক্টেবর) শরিফা ফুটফুটে এক সন্তান জন্ম দেয়।
মহসিন আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তার স্ত্রী জোসনা খাতুন মানসিক ভারসাম্যহীন শরিফার কন্যা ফাতেমার খেলনা আর জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলেন আর চোখের পানি ফেলছেন। সেই সাথে শরিফার আত্মীয়স্বজনকে বাচ্চার যত্ন নেওয়ার আবদার করছিলেন। কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে তিনি জানান, গেল এক মাস নিজের সন্তানের মতো করে তাদের দেখভাল করেছি। কোনো ত্রুটি রাখিনি। বাড়িটি ছিল আনন্দের। অভাবের সংসারেও ছিল বেশ হাসিখুশি। ওকে বিদায় জানাতে কষ্ট হলেও ওর পরিবারের কাছে দিতে ওদের ফিরিয়ে দিতে পারছি এটাই বড় সান্ত্বনা।
শরিফা খাতুনের চাচা মহব্বত মন্ডল জানান, শরিফা খাতুনের ২য় সন্তান জন্ম দেওয়ার পর সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। ছয় বছর চিকিৎসা করেও কোনো লাভ হয়নি। এক বছর আগে বাসা থেকে বের হয়ে যায় সে। অনেক জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি তাকে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হলে আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় । পরে সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগ করে শরিফাকে ফেরত নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি।
শরিফা খাতুনের ফুফাতো ভাই আমিনুল মন্ডল জানান, শরিফা খাতুন ও তার পরিবার একদম অসহায়। তাকে নিতে আসার টাকাটা পর্যন্ত ছিল না। পরে সাংবাদিকদের দেওয়া টাকায় পথ খরচ দিয়ে শরিফাকে নেওয়ার জন্য আসা হয়।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আরশাদ আলী জানান, বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রসাশক মহোদয়কে জানানো হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শরিফাকে আদালতের মাধ্যমে ভবঘুরে পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্রেরণ করা হবে। ইতোমধ্যে তার পরিবারের লোকজন জানতে পেরে তাকে নিতে আসেন। তাদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে তাকে হস্তান্তর করা হয়।
মন্তব্য করুন