‘সাগরকন্যা’ খ্যাত কুয়াকাটায় সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা লেগে থাকে। তবে পদ্মা সেতুর চালু হবার পর যাতায়াতে সময় কম লাগায় সে সংখ্যা আগের চাইতে বেড়েছে। ফলে এ অঞ্চলের হোটেল মোটেলগুলোতে ব্যবসায় গতি ফিরেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি মাছ পাঠানোর খরচ কমে যাওয়ায় এ খাতের ব্যবসায়ীরাও লাভবান হচ্ছেন।
আলিপুর ও মহিপুরের মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় মাছ পাঠাতে এখন সময় আগের চাইতে অর্ধেক লাগছে। এখন আর মাছ পঁচে না; গুণাগুণ বজায় থাকায় দামও ‘বেশি’ পাচ্ছেন তারা। তবে সৈকতে ঘুরতে যাওয়াদের জন্য তেমন সুযোগ সুবিধা বাড়েনি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটা'র সেক্রেটারি কে এম জহির বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে যাতায়াতে সময় কম লাগায় কুয়াকাটা সৈকতে লোকজন বেশি আসছে। এটি আমাদের জন্য আর্শীবাদ। আমরাও পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য সবসময় প্রস্তুত রয়েছি।’
কুয়াকাটায় ঘুরতে আসা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমুদ্র সৈকতের আশেপাশে ভালো মানের খাবারের দোকান নেই। হোটেল-মোটেলগুলোতে চাপ বাড়লে কর্তৃপক্ষ ভাড়াও বাড়িয়ে দেন। আশেপাশে নেই কোনো বিনোদন কেন্দ্রও। পাশাপাশি সৈকতে বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতল ও ময়লা পড়ে থাকে, যা স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক এন এম আজাদ বলেন, ‘মাত্র ৬ ঘণ্টায় মিরপুর থেকে কুয়াকাটা আসলাম। এটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র পদ্মা সেতুর কারণে। তবে সৈকতের আশেপাশের পরিবেশ তেমন ভালো নয়।’
পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে পর্যটক বাড়ায় বেচাকেনা বেড়েছে বলে সৈকতে ফুচকা বিক্রেতা বেল্লাল জানান। তিনি বলেন, ‘আগে প্রতিদিন ৫০০ টাকা বিক্রি করতে কষ্ট হত এখন তা দ্বিগুণ হয়েছে।’
‘মায়ের দোয়া’ আচার দোকানের মালিক মো. আলমগীর বলেন, ‘রোজার ঈদে এক রাতে আমার দোকানে এক লাখ টাকা বিক্রি হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পরে এটি আমার রেকর্ড। সত্যিই পদ্মা সেতু আমাদের জন্য অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে।’
কুয়াকাটা সি ট্যুর এন্ড ট্রাভেলসর পরিচালক হোসাইন আমির বলেন, ‘পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে প্রতিনিয়ত ট্যুরিস্ট কুয়াকাটা ভ্রমণে আসে। এখন সারা বছর আমাদের ব্যস্ততা থাকে।’
আবাসিক হোটেল খাঁন প্যালেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রাসেল খাঁন জানান, পদ্মা সেতু হওয়ার পরপরই তাদের হোটেলের রুম রিজার্ভেশন বৃদ্ধি পেয়েছে।
পর্যটকদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো উচিত কিনা এমন প্রশ্নে কনফিডেন্স ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইদ বলেন, ‘লোকজনের ভিড় বাড়ায় প্রতিনিয়তই আমাদের ব্যস্ততা বাড়ছে। পদ্মা সেতু অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে; এখন আমাদের দরকার পর্যটকদের ধরে রাখা। এর জন্য তাদের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো উচিত।’
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মোতাবেল শরীফ বলেন, পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। মাঝে মাঝে তাদের সামাল দেওয়া কষ্ট হয়ে ওঠে। তখন কমিউনিটি ট্যুরিজমের মাধ্যমে সেবা দিতে হয়।
তবে কুয়াকাটায় আরও উন্নত মানের হোটেল মোটেল হওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, ‘পদ্মা সেতু খুলে দেওয়ার পর এখন সারা বছরই পর্যটকদের উপস্থিতি ভালো থাকে। তবে বিশেষ দিসবগুলোতে তা তিনগুণ বেড়ে যায়। তখন আমরা আমাদের ফোর্স বাড়িয়ে দেই।’
মন্তব্য করুন