হুমায়ুন কবির, সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ নভেম্বর ২০২৩, ১১:১৫ এএম
অনলাইন সংস্করণ

দাবিকৃত অর্থ না পেয়ে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

সাভারের আশুলিয়া থানাধীন আউকপাড়ার বাসিন্দা মো. আবুল কালাম। ছবি : সংগৃহীত
সাভারের আশুলিয়া থানাধীন আউকপাড়ার বাসিন্দা মো. আবুল কালাম। ছবি : সংগৃহীত

সাভারের আশুলিয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোক পরিচয়ে সাদা পোশাকে একদল লোক মো. আবুল কালাম (৫২) নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে মারধর ও তার বাড়িতে লুটপাট চালানোর অভিযোগ করেছে আবুল কালামের পরিবারের সদস্যরা। ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা মোবাইল ফোনে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে আটক ব্যক্তিকে ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।

ঘটনাটি গত ২৮ অক্টোবর সাভারের আশুলিয়া থানাধীন আউকপাড়া এলাকায়। ঘটনার পর ওই ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে সাহায্য চাওয়া হয় এবং পরদিন নিকটবর্তী আশুলিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু পরিবারটির দাবি পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কোনো ধরনের সহযোগিতা করা হয়নি।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী আবুল কালামের স্ত্রী নিপা কালবেলাকে জানান, ঘটনার দিন আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার সঙ্গে আমার বড় মেয়েও ছিল, তাই বাসা ফাঁকা ছিল। সে সময় আমার স্বামীকে আকবর, জিয়া, জিয়াসমিন, নয়ন, সুমন নামে একদল লোক সিএন্ডবি বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। সেখানে আমার স্বামীর সঙ্গে আরও কয়েকজনকেও ওই গাড়িতে তুলে তারা। পরে বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়ে আমার স্বামীকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসে। পরে ঘরে ঢুকে আমার স্বামীকে মারধর করা হয়। এ সময় আমার স্বামীর চিৎকার শুনে আশপাশের প্রতিবেশীরা ছুটে আসলে তাদেরকে ঘরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় নাই। পরে তারা আমার ঘরে থাকা ওয়ারড্রপের ড্রয়ার ভেঙে নগদ ৬০ হাজার টাকা এবং শোকেসের গ্লাস ভেঙে একটি স্বর্ণের চেইন, একজোড়া রুপার নুপুর ও বেশকিছু দামি মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। পরে সেদিন বিকেলে তারা আমার স্বামীর মোবাইল ফোন থেকে আমার মোবাইল ফোনে কল করে আমার স্বামীকে আটক করার কথা জানায় এবং ৫ লাখ টাকা দাবি করে অন্যথায় আমার স্বামীকে হত্যা মামলা অথবা মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার কথা জানায়।

ভুক্তভোগীর বড় মেয়ে কলি আক্তার জানান, ঘটনার দিন আমরা বাসায় ছিলাম না। বিকেলে আমার বাবার নম্বর থেকে ফোন করে বাবাকে আটক করার কথা জানিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এ সময় আমরা টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আমার বাবাকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ফোন রেখে দেয় তারা। পরবর্তীতে তাৎক্ষণিক আমরা জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে সাহায্য চাইলে আমাদেরকে জানানো হয় অবরোধসহ নানা কারণে আজ পুলিশ ব্যস্ত। পরদিন সকালে আমরা আশুলিয়া ফাঁড়িতে যোগাযোগ করলে পুলিশ আমাদের জানায় আপনার বাবাকে মাদকদ্রব্যের লোকজন আটক করেছে এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। পরে আমরা বিষয়টি নিয়ে কোর্টে অভিযোগ জানালে কোর্ট থেকে আশুলিয়া থানায় আমাদের অভিযোগ নেওয়ার জন্য বলা হয়। কিন্তু আমরা থানায় গেলেও আমাদের অভিযোগটি তারা গ্রহণ করেনি। পরে ঘটনার ৩ দিন পর আমরা জানতে পারি আমার বাবাকে ১০৫ পিস ইয়াবা দিয়ে আদালতে চালান করে দিয়েছে। কিন্তু আমার বাবাকে আটকের সময় তারা আমাদের প্রতিবেশীসহ অন্য কাউকেই মাদক রিকভারির বিষয়টি জানায়নি। এমনকি আমাদের কাছে যখন ফোন করে টাকা চাইল তখনো সেটা ইয়াবা উদ্ধারের কথা বলেনি। এবং আমার বাবার বিরুদ্ধে করা সেই মামলায় যে দুজনকে সাক্ষী বানানো হয়েছে তাদেরকে আমাদের এলাকার কেউ চিনেন না। তাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে ঢাকার লালবাগ এলাকায়। আমার প্রশ্ন আমার বাবাকে আটক করা হয়েছে আশুলিয়া থেকে, তাহলে সাক্ষী কিভাবে লালবাগের হয়। আটকের সময় তো আমাদের এখানে অনেকেই উপস্থিত ছিল, তাদের কেনো সাক্ষী করা হলো না। এতেই প্রমাণিত হয় আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে।

এদিকে মামলাটির বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকা (ক-সার্কেল) উপপরিদর্শক আকবর আলীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বর্তমানে সেখানে কর্মরত নেই আমি খুলনায় বদলী হয়ে গেছি। তবে সেদিনের সেই অভিযানে আমরা নুসরাত ম্যাডামের নেতৃত্বে সেখানে গিয়েছিলাম আমার সঙ্গে আরও ছিল সহকারী উপপরিদর্শক জিয়া, সোর্স নয়নসহ কয়েকজন। আমাদের বিরুদ্ধে যেই অভিযোগ করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিষয়টি নিয়ে আপনারা নুসরাত ম্যাডামের সাথে কথা বলেন।

আশুলিয়ার ঘটনায় সাক্ষী হিসেবে লালবাগের দুজন ব্যক্তির নাম দেওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।

এ ব্যাপারে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা (ক-সার্কেল) পরিদর্শক নুসরাত জাহান বলেন, টাকা চাওয়া বা ঘর থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। যদি আমার টিমের কেউ এমন কিছু করে থাকে আর সেটি যদি প্রমাণ হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজকে মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানানো হলে তিনি প্রতিবেদককে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, আপনি একটি ভালো কাজ করেছেন, আমরা চাই আপনারা এ ধরনের অন্যায়ের বিষয়গুলো আমাদের জানান। এখন আপনাদের কাছে যারা বিষয়টি জানিয়েছেন তাদেরকে একটু কষ্ট করে আমার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন, আমি বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইউআইইউতে রিয়েল লাইফ এআই ব্যবহার বিষয়ক প্রশিক্ষণ

বিসিবি নির্বাচনে পরিচালক পদে জয়ী হলেন যারা

উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকদের সম্মাননা

ফ্লোটিলার যাত্রীদের যেভাবে নির্যাতন করেছে ইসরায়েলি সেনারা

আরও দুটি জাতীয় দিবস চালু করল সরকার

বিসিবি নির্বাচনের ফাঁস হওয়া ফলাফলে সভাপতি বুলবুল

কখন গিলে নেয় ভিটেমাটি, ভাঙনের শঙ্কায় তিস্তাপাড়ের মানুষ

অভিনব সাজে রাকসু নির্বাচনের প্রচারে প্রার্থী

সাধারণ কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশ-সৌদি চুক্তি

এক মাস না যেতেই ফ্রান্সের নতুন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ

১০

ত্বকে যেসব পরিবর্তন দেখলে সতর্ক হওয়া জরুরি, হতে পারে হার্টের সমস্যা!

১১

রোহিঙ্গা যুবকের যাবজ্জীবন

১২

নিজ বাড়িতে বৃদ্ধার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ

১৩

৪ হাজার এএসআই নিয়োগে স্বরাষ্ট্রকে চিঠি, আছে অনেক শর্ত

১৪

‘সি’ ক্যাটাগরি থেকে বিসিবির পরিচালক পাইলট

১৫

সাধারণ কর্মী নিয়োগে বাংলাদেশ-সৌদি আরব প্রথমবারের মতো চুক্তি

১৬

সরকারি অনুষ্ঠানে মুজিব শতবর্ষের লোগো সংবলিত লিফলেট বিতরণ

১৭

ইসলামী ব্যাংকে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের দাবি

১৮

ফুটবলের সঙ্গে আবেগ-ভালোবাসা মিশে আছে : বাসস চেয়ারম্যান

১৯

আন্দোলনের মুখে শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে নতুন প্রস্তাব

২০
X