অতিরিক্ত তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় চলতি আমন মৌসুমে ধানে বাদামি গাছ ফড়িং (কারেন) পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। গতবারের থেকে এ বছর বিঘাপ্রতি ৫ থেকে ৬ মণ ধান কম উৎপাদন হচ্ছে। ফলে চাষিদের উৎপাদন খরচ উঠছে না।
জানা গেছে, জমি প্রস্তুত, ধানের চারা লাগানো, সেচ, বিষ, কাটা-মাড়াসহ সকল উপকরণের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে গতবারের তুলনায়। ফলে গতবছর বিঘাপ্রতি জমিতে আমন ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছিল ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। এ বছর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা। ফলে ক্রমশ ধানের আবাদে অনীহা হয়ে উঠছে কৃষকরা। কিন্তু নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে তারা ধানের আবাদ ধরে রেখেছেন বলে জানান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার তিন উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ২৬ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। বৃষ্টিপাত কম ও তাপমাত্রা বেশি থাকায় চলতি মৌসুমে বাদামি গাছ ফড়িংয়ের আক্রমণ বেড়েছে। কৃষকদের সচেতনতার মাধ্যমে পোকা দমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলেও ফলন গতবারের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে।
সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের শহিদুল ইসলাম এবার ৫ বিঘা জমিতে ব্রি-৪৯ ধানের আবাদ করেছেন। তিনিও বলেন, গত বছর বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২১ মন করে ধান উৎপাদন হলেও এবার ১৪ মনের বেশি পাননি। এ ছাড়াও কারেন পোকার কারণে এ বছর সার ও বিষ খরচ হয়েছে।
সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া গ্রামের ধানচাষি মইরুদ্দিন বলেন, এক বিঘা জমিতে ব্রি-৭৪ জাতের মোটা ধানের আবাদ করেছি। ভূই (জমি) পাকানো, চারা লাগানো, পানি (সেচ), বিষ, কাটা-মাড়াই দিয়ে প্রায় ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গত বছর একই জমিতে ধান পেয়েছিলাম ২১ মন। এবার ১৫ থেকে ১৬ মনের বেশি হবে না। ধানে শীষ আসার আগে থেকেই কারেন পোকা লাগা শুরু হয়ছে। প্রতি বছর একবার বিষ দিলেই হয়। এবার চারবার বিষ দিতে হয়েছে। যে কারণে গত বছরে থেকে এবার খরচও বেশি হয়েছে।
গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের ফিরোজ আলী বলেন, এবার আড়াই বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছি। বিঘা প্রতি ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সংসারে দুবেলা ভাত জোটানোর জন্য ধানের আবাদ করি। প্রতি বছর সেখান থেকে কিছু বিক্রি করি। কিন্তু এবার কারেন পোকার ক্ষতির কারণে ফলন কম হয়েছে।
আড়ত ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, আমন ধান সবেমাত্র কাটা-মাড়া শুরু হয়েছে। ভালো মানের ধান ১১শ থেকে সাড়ে ১১শ টাকা বেচাকেনা চলছে। তবে কয়েক দিন পর থেকে পুরোপুরি সিজেন শুরু হলে দাম কমবে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, এ বছর বৃষ্টিপাত কম ও অপেক্ষাকৃত তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় বাদামি গাছ ফড়িং পোকার আক্রমণ হয়েছে। এ পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করে চাষিদের সচেতন করা হয়েছে। সার্বক্ষণিক কৃষি কর্মকর্তাদের মনিটরিংয়ের মাধ্যমে পোকা দমন করে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা হয়েছে। তবে পোকা দমন করতে চাষিদের অতিরিক্ত খরচের মধ্যে পড়তে হয়েছে এবং কিছুটা হলেও ফলন কম হয়েছে।
তিনি বলেন, এখন আমন সিজন। কিন্তু অনেক চাষি আছে যারা বোরো সিজনের ধানও আবাদ করেছেন। যার ফলে ওই সকল চাষিদের ফলন কম হতে পারে। তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, অনেক চাষি আমন সিজনে ব্রি-৭৪ ধান চাষ করেছেন। ব্রি-৭৪ মূলত বোরো সিজনের ধান। আমন সিজনের জন্য উপেযাগী ব্রি-৭৫, ব্রি-৮৭, ব্রি-৯০ জাতের ধানের আবাদ করার পরামর্শ দেন।
মন্তব্য করুন