কক্সবাজারের পেকুয়ায় পাহাড়ের চূড়ায় প্রায় দুই হাজারেরও বেশি মানুষ চরম ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করে আসছে। বসবাসের মাত্রা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পাহাড় ধ্বংসসহ নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ওই পরিবারগুলোর জন্য অশনিসংকেত হয়ে দেখা দিতে পারে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের মালিকানাধীন বারবাকিয়া রেঞ্জের আওতায় উপজেলার হাজার হাজার একর বনভূমি ইতোমধ্যে বেহাত হয়েছে। এসব বনভূমিতে অনুপ্রবেশকারীরা রাতারাতি অবৈধ বসতি স্থাপন করে চলেছেন। এদের মধ্যে শুধু সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও রির্জাভ ভূমির সর্বোচ্চ চূড়ায় চরম ঝুঁকি নিয়ে অন্তত ২ হাজারেরও অধিক মানুষ বসবাস করছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বন বিভাগের অধীনে পেকুয়া উপজেলার টইটং, বারবাকিয়া ও শীলখালী ইউনিয়নে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টরেরও বেশি সরকারি পাহাড় রয়েছে। এসব পাহাড় এখন ভূমিদস্যুদের দখলে চলে গেছে। একশ্রেণির পাহাড়খেকোরা বন বিভাগের সরকারি আইন অমান্য করে অল্প দামে বিক্রি করে দিয়েছে বনভূমি। তারা বিভিন্ন সময় ক্ষমতা ও দাপটের সঙ্গে পাহাড় দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। অন্যদিকে এসব পাহাড়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে যে সমস্ত উপকারভোগী হিসেবে সরকারের কাছ থেকে অংশীদারত্ব পেয়েছেন তারা গাছপালা উজাড় করে ওই স্থানটি মানুষের বসতির জন্য বিক্রি করে দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়ার শিলখালী বারবাকিয়া ও টইটং বনাঞ্চলের ভেতরে স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে এখানে বসতি স্থাপন করেছেন অনেকই। আর তাদের সহযোগিতা করছে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। অন্যদিকে বন বিভাগের অসাধু কিছু কর্মচারী টাকা নিয়ে উচ্ছেদ প্রচেষ্টা থেমে রেখেছে। টইটং বটতলীর জুম, বটতলীর মধুখালী, হারখিলারঝিরা, আধার মানিক, পূর্ব ধনিয়াকাটা, বারবাকিয়া আবাদি ঘোনা, পূর্ব পাহাড়িয়াখালী, চাকমার ডুরি, পূর্ব ভারুয়াখালী, ছনখোলার জুম ও শিলখালী ইউনিয়নের জারুলবুনিয়া, সাপের গারা, মাদাবুনিয়া, মাঝের ঘোনা, চিতারঝিরি, নাপিতার ঘোনা, সবুজপাড়া, ঢালার মুখ, পূর্ব শিলখালীসহ সব স্থানে পাহাড়ের জায়গায় মানুষের অবৈধ বসতি। এরা পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসের পাশাপাশি এসব এলাকার পাহাড়ের সর্বোচ্চ চূড়াতেও বসতির জন্য দখল করে নিয়েছে।
গত কয়েক বছরের ব্যবধানে কক্সবাজারের উপকূলবতী মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ও মাতারবাড়ি এবং দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া থেকে শত শত লোকজন পেকুয়ায় পাহাড়ের দিকে বসবাস করার জন্য ঝুঁকে পড়ছে। এ ছাড়াও পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া, মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নের সমুদ্রের করাল গ্রাসে ভাঙনকবলিত নিম্নাঞ্চলের মানুষ অনায়াসে বসবাসের জন্য পাহাড়ের দিকে ছুটছে। এ সুবাদে পাহাড়ের বসতি সবচেয়ে বেড়েছে। এসব বসতির ফলে এদিকে পরিবেশের বিপর্যয় হচ্ছে আবার অন্যদিকে পাহাড়ের জমির শ্রেণির পরিবর্তন হচ্ছে। তবে ঝুঁকির মাত্রা সবচেয়ে বেশি। গত বর্ষা মৌসুমে একাধিক পাহাড় ধসে পেকুয়ায় বেশ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। অধিক ঝুঁকিতে এসব পরিবার বসবাস করলেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। তবে এলাকাবাসী ও সচেতনমহল জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে পাহাড়ের চূড়ায় বসবাসকারী এসব পরিবারকে সরিয়ে নেওয়া হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে বারবাকিয়া রেঞ্জ অফিসার হাবিবুর রহমান জানিয়েছেন বন বিভাগ ইতোপূর্বে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি বসতঘর ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।
এ ব্যাপারে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পাহাড়ের চূড়ায় ঝুঁকিতে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে শিগগিরই সরিয়ে নিতে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
মন্তব্য করুন