অবরোধকারীদের ছোড়া ককটেলে চোখ হারাতে বসেছেন আবুল বাসার (৩০)। তিনি পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের একজন খালাসী। তার বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায়।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর গৌরহাঙ্গা রেলগেট এলাকায় অটোরিকশা লক্ষ্য করে হামলায় গুরুতর আহত হন তিনি। হামলার সময় ছোড়া ককটেলের স্প্লিন্টারের আঘাতে আবুল বাসারের বাঁ চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরে রেলগেট এলাকায় হরতালের সমর্থনে বিএনপির ২০ থেকে ২৫ জন নেতাকর্মী হঠাৎ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি কিছুদূর গিয়েই শেষ হয়ে যায়। তবে মিছিলের শেষ মুহূর্তে পরপর দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এর একটি ককটেল গিয়ে পড়ে চলন্ত অটোরিকশার সামনে। এতে অটোরিকশাটির সামনের কাচ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। আহত হন চালক আবদুল জলিল (৪৫) ও তার পাশেই বসে থাকা যাত্রী আবুল বাসার। আব্দুল জলিলের পেটে গুরুতর জখম হয়েছে। আর বাসারের বাঁ চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আবুল বাসারের স্ত্রী শাহানাজ পারভীন জানান, তার সামনেই ঘটনাটি ঘটে। তারা মেহেরপুরের গাংনী থেকে ট্রেনে রাজশাহী আসেন। স্টেশনে নামার পর অটোরিকশায় চড়ে একটি বেসরকারি ক্লিনিকে যাচ্ছিলেন। তিনি অটোরিকশার পেছনে বসে ছিলেন। স্বামী বাসার ছিলেন সামনে। তিনি অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলেন। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ শুনে সামনে তাকিয়ে দেখেন, তার স্বামী চোখে হাত দিয়ে পড়ে গেছেন। অটোরিকশার চালকেরও সারা শরীরে কাচ ঢুকে গেছে। পেটে মারাত্মক জখম হয়ে পুরো শরীর রক্তাক্ত হয়ে গেছে।
ককটেল হামলার এ ঘটনার পর আহত দুজনকে স্থানীয়রা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। ভর্তির পর বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবুল বাসারের চোখের অস্ত্রোপচার চলে।
অস্ত্রোপচার শেষে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মাদ জানান, বাসারের বাঁ চোখে ছোট ছোট কাচের টুকরা ঢুকে গিয়েছিল। এতে তার চোখের আইবল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া চোখের বিভিন্ন লেয়ার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অস্ত্রোপচার করে কাচ বের করার পাশাপাশি লেয়ার জোড়া লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছে। রোগীর চোখ এখন বন্ধ। তার এই চোখের দৃষ্টিশক্তি ফেরার সম্ভাবনা খুব কম।
পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার জানান, বাসার রেলওয়ের একজন খালাসী। রামেক হাসপাতালে রেলওয়ের লোকজন তার পাশে আছেন। তারা ককটেল হামলায় আহত বাসারের সর্বোচ্চ চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। ইতোমধ্যে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলে তিনি তাকে দেখতে হাসপাতালে যাবেন বলেও জানান।
এদিকে ঘটনার পর স্থানীয়রা তিনজনকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন। তারা হলো- রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর ভাটাপাড়া এলাকার টিটু (২৭), বিনোদপুর এলাকার মনিরুল (২৭) ও গোদাগাড়ীর শাহাদত (২৭)। সন্ধ্যায় পুলিশ আরও তিনজনকে এ ঘটনায় আটক করেছে।
রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার ওসি মো. সোহরাওয়ার্দী জানান, এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হবে। আর আটক ছয়জনকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে। ককটেল হামলার সঙ্গে জড়িত অন্যদেরও খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান ওসি।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহীর আদালত চত্বরে পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে ককটেল হামলা হয়। ওই ঘটনায় এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে তিনি চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যাননি।
রাজপাড়া থানার ওসি রফিকুল হক জানান, আদালত চত্বরের সীমানা প্রাচীরের বাইরে থেকে দুর্বৃত্তরা পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে একটি ককটেল নিক্ষেপ করে। ককটেলটি পুলিশের গাড়ির পাশে বিস্ফোরিত হয়। এতে কোনো পুলিশ সদস্য আহত না হলেও এক পরিচ্ছন্নতাকর্মী কিছুটা আহত হন। ককটেল হামলা চালিয়েই মোটরসাইকেল নিয়ে পালিয়ে যায় তারা। তাই কাউকে আটক করা যায়নি। দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন