ব্রিটিশ আমলে নির্মিত হলেও দীর্ঘদিনেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি নাটোরের নলডাঙ্গার মাধনগর রেলস্টেশনে-প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধ দোকানপাট নির্মাণ, গোপনে রেলওয়ের পজিশন বিক্রি, ব্যবসায়ী ও যাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতা, স্টাফ কোয়ার্টারগুলো হয়ে উঠেছে নেশাখোরদের আস্তানা, বৃষ্টি হলে প্ল্যাটফর্মজুড়ে পানি পড়া, মেঝের ইট উঠে খানাখন্দের সৃষ্টির বিড়ম্বনাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত মাধনগর রেলওয়ে স্টেশন।
নাটোর জেলার মধ্যে রয়েছে ১২টি রেলওয়ে স্টেশন। এর মধ্যে মাধনগর রেলওয়ে স্টেশনটি ঐতিহ্যবাহী একটি স্টেশন। এই স্টেশনে ঢাকাগামী ১টি রাজশাহী ২টি আন্তনগর-খুলনা ১টি ও রাজশাহীগামী ১টি লোকাল ট্রেন যাত্রাবিরতি রয়েছে।
উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিপুলসংখ্যক যাত্রী প্রতিদিন এই স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাতায়াত করলেও স্টেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ট্রেন যেন থেমে আছে একই প্ল্যাটফর্মে। আলাদা বুকিং অফিস না থাকায় স্টেশন মাস্টারকে অফিসের ভেতরেই টিকিট বিক্রি করতে হয়, যা সুষ্ঠু ক্যাশ সংরক্ষণের পক্ষে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে উধাও হয়ে গেছে ইন্দিরা ও রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টারগুলো হয়ে উঠেছে নেশাখোরদের আস্তানা। আর রেলের জায়গা বিক্রি হচ্ছে লাখ লাখ টাকায়।
স্টেশন ও প্ল্যাটফর্মে বাউন্ডারি ওয়াল না থাকায় স্টেশনের প্রায় সব দিকেই দখল হয়ে, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবৈধ দোকানপাট গড়ে উঠেছে। গোপনে রেলওয়ের পজিশন বিক্রি ও দখল নিয়ে প্রায় উত্তপ্ত হয়ে উঠে স্টেশন এলাকা। যার ফলে নিরাপত্তাসহ ট্রেনে ওঠানামার সময় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে মহিলা যাত্রীদের শিশুসন্তান নিয়ে বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এদিকে এ স্টেশন থেকে মাসে প্রায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হলেও যাত্রীদের সেবার মান শূন্যের কোঠায় রয়েছে।
ট্রেন যাত্রী ও স্থানীয় এলাকাবাসী মুক্তা সরদার, মন্তাজ হোসেনসহ অনেকে জানান, আমরা মাধনগরের উন্নয়নবঞ্চিত রেলওয়ে স্টেশনটি আধুনিকায়নের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে স্টেশনের প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজ না করায় এখানে যাত্রীসেবা শূন্যের কোঠায় এসে পৌঁছেছে। দেশের অনেক স্টেশনের উন্নয়ন হলেও এই স্টেশন দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নবঞ্চিত। এই স্টেশনের আধুনিকায়ন জরুরি। সেই সঙ্গে সেবার মান বাড়ানো প্রয়োজন। স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে শেড থাকলেও চারিদিক দিয়ে পানি পরে। ট্রেন থেকে নেমে যাত্রীদের অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয়। এ ছাড়া অপরিচ্ছন্ন টয়লেট যাত্রীদের বিশ্রামের জন্য কোনো সুব্যবস্থা নেই।
উপজেলা ৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার যাত্রীরা এই স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করেন। তা ছাড়া চিকিৎসার জন্য ঢাকা এবং রাজশাহী নিয়মিত মানুষের যেতে হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনেও অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হয় যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এই রেলওয়ে স্টেশনের ওপর দিনে প্রায় ১৮ থেকে ২০টি ট্রেন যাতায়াত করে। এদিকে এ স্টেশন থেকে মাসে প্রায় সাড়ে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হলেও যাত্রীদের সেবার মান শূন্যের কোঠায় রয়েছে। ট্রেন যাত্রী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবি ঢাকা ও খুলনাগামী আরও আন্তনগর ট্রেন স্টোপেজ দিলে রাজস্ব আয় দ্বিগুণ হবে। মাধনগর রেলওয়ে স্টেশন ১৯২৭ সাথে স্থাপিত হয়।
মাধনগর রেলস্টেশনের কর্তব্যরত স্টেশন মাস্টার মো. মমিন উদ্দিন প্রামানিক বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।
মন্তব্য করুন