পটুয়াখালীর গলাচিপায় ৫০০ বছরের পুরোনো মোগল আমলের মুসলিম ঐতিহ্যের প্রাচীন ও অন্যতম নিদর্শন এক গম্বুজবিশিষ্ট গুরিন্দা জামে মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব স্থাপত্য শিল্পের এক অপরূপ সৌন্দর্যের দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। এখনো ঐতিহ্যের ধারক-বাহক হিসেবে কালের সাক্ষী হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে এই মসজিদ। এটি উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের উলানিয়া সড়কের পূর্ব পাশে গুরিন্দা এলাকায় খালের পাশে অবস্থিত।
স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, বহু শতাব্দী আগে এক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের অনেক আগেই গুরিন্দা জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে।
আবার অনেকের মতে, এ অঞ্চলে মুসলমানদের আগমন ঘটে আনুমানিক ১৪৬৫ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান মোবারক শাহের চন্দ্রদ্বীপ বিজয়ের আগে, তখন হয়তো এটি নির্মাণ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মসজিদটির মূল ভবন প্রায় ৩৬০ বর্গফুট ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট বর্গাকৃতির। এর উচ্চতা প্রায় ১৬ ফুট। এটি একটি একতলা মসজিদ। একটি মাত্র গম্বুজ বলে এটিকে এক গম্বুজ মসজিদও বলা হয়ে থাকে।
মসজিদটি ভূমি থেকে প্রায় চার ফুট উঁচুতে নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদটি এতটাই ছোট, এর ভেতরে ১৮/২০ জন মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদটির ভেতরে ও বাইরের সমস্ত দেয়ালের পলেস্তারা উঠে ইট বেরিয়ে গেছে। মসজিদটির পাশে রয়েছে ছোট একটি পাকা ভবনের বৈঠকখানা। এটি মসজিদটির চেয়ে আকারে ছোট। সেখানে ১০/১২ জন লোক বসতে পারেন। মসজিদটির মতো এ বৈঠকখানাটিরও একই দুরবস্থা। সংশ্লিষ্ট বিভাগ উদ্যোগ নিলে এটাও হতে পারে একটি দর্শনীয় স্থান।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে শত শত বছরের পুরোনো স্মৃতিবিজড়িত এ মসজিদের ঐতিহ্য যেন ক্রমেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
স্থানীয় বাবুল খান বলেন, কে বা কারা নির্মাণ করেছেন, আমরা কেউ জানি না। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে আসে নামাজ পড়েন এবং মানত করেন।
মসজিদটি একদম খালের পাড়ে। বৃষ্টি হলেই মসজিদটির ছাদ দিয়ে পানি পড়ে। মসজিদ যেন দ্রুত সংস্কার করা হয়, সেই দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে রতনদী তালতলী ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা খান জানান, মসজিদটি অনেক পুরোনো এবং জমিদারদের করা। মসজিদটি এখনই সংস্কার করা না হলে এটি একদিন বিলীন হয়ে যাবে। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দর্শনার্থীরা এই মসজিদ দেখতে আসেন। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই এখানে দর্শনার্থীদের আনাগোনা হয়। তাই প্রাচীন ও অন্যতম এই নিদর্শন অতিদ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।
এদিকে প্রাচীন মসজিদটি প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ফিল্ড অফিসার মো. খায়রুল বাশার বলেন, আমরা দেশের শত বছর বা হাজার বছরের স্থাপনাগুলো গুরুত্বসহকারে সংরক্ষণ করে প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছি। বিষয়টি আমাদের খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রত্নতত্ত্বের রিজিওনাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন