মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার আশীদ্রোন ইউনিয়নের শংকরসনা গ্রামের হেদায়েত উল্লার ছেলে রুবেল মিয়া কাছ থেকে ওমানের পাঠানোর প্রলোভন দেখিয়ে তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে একই উপজেলার সিন্দুরখান ইউপির কামারগাঁও গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার ছেলে হারুন মিয়া, মাসুক ও তার সহযোগীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় আরও অনেক ভুক্তভোগী রয়েছেন তাদের মতো। তারা মানুষকে বিদেশের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে গেছে। মাসুক, হারুন, ববি পলাতক থাকায় তাদের আরেক ভাই আশিকুর রহমান সুজনকে মামলায় জড়িয়ে ভুক্তভোগীরা প্রতারণা মামলার আসামি করে। সেই মামলায় মৌলভীবাজার আদালতে সুজন গেলে তাকে গত ৩০ নভেম্বর আটক করে জেলে পাঠিয়েছে আদালত।
ভুক্তভোগী রুবেল মিয়া বলেন, আমাদের পাশের বাড়ির আছকির মিয়ার ছেলে বাছির মিয়ার কথা মতো কলেজ রোড শাহ মোস্তফা ট্রাভেলসের মালিক মাসুকের সঙ্গে কথা বলি। মাসুক মিয়া আমাকে জানায় তিন মাসের মধ্যে ওমান পাঠাবেন। সেখানে আমার চাকরি হবে কফিশপে, প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা ডিউটি করতে হবে। তার বিনিময়ে দিতে হবে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আমি জমিজমা বিক্রি করে টাকা জোগাড় করি। জুন মাসের শেষের দিকে এক লাখ টাকা, জুলাই মাসের ১ তারিখে ৫০ হাজার টাকা, জুলাই মাসের ২৬ তারিখ ১ লাখ টাকা এবং আগস্ট মাসের ৩০ তারিখ আরও ৫০ হাজার টাকাসহ মোট চার কিস্তিতে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা আমি পরিশোধ করি। আমার কাছে মাসুক মিয়ার লিখিত ডকুমেন্টস রয়েছে। তিন মাসের কথা বলে সেখানে ছয় মাস অতিক্রম হলেও সে আমাকে বিদেশ পাঠায়নি। তার পর আমি ও আমার পরিবার চাপ দিলে শাহ মোস্তফা ট্রাভেলসের মালিক মাসুক মিয়া বাছির মিয়ার মাধ্যমে আমাকে একটি জাল ভিসা প্রদান করে।
এদিকে একই উপজেলার সিন্দুরখাঁন ইউনিয়নের মন্দিরগাঁও গ্রামের ফারুক মিয়ার ও স্ত্রী ইয়াছমিন আক্তারের ছেলে জুবায়ের মিয়াকে বিদেশে নেন হারুন মিয়া।
জুবায়েরের মা বলেন, আমাকে দীর্ঘ দিন ধরে মাসুক মিয়া ও তার ভাইয়ের স্ত্রী ববি বেগম বলে আসছেন আমাদের কাছে ভালো ভিসা আছে। আপনাদের কোন চিন্তার কারণ নাই, ওমানে আমার স্বামীর কোম্পানির পাশেই একটি কপি শপে তার চাকরি হবে তার জন্য আপনাদেরকে ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা দিতে হবে, সেখানে বেতন হবে বাংলাদেশি টাকায় ৩০ হাজার। তাকে দেখা শুনার জন্য তো আমার স্বামী রয়েছেন।
জুবায়েরের মা আরও বলেন, ববি ও মাসুকের পাতা ফাঁদে পা দিয়েই আজ সর্বহারা আমরা। তাদের কথা মতো আমরা মাসুক ও ববির কাছে মোট ছয় বারে ২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা দেই এবং বাকি ২০ হাজার টাকা বিদেশ গিয়ে দেব বলে কথা দেই। আমার ছেলে জুবায়েরকে বিদেশ যাত্রার ১০ দিনের মধ্যেই মেডিকেল ও বতাখা করে দিবেন কিন্তু আমার ছেলে আজ ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে ওমানে অবস্থান করছে, তার মেডিকেল ও বতাখার লাগিয়ে দেয়নি। সে ঠিক মতো খাবার পাচ্ছেনা। তার সঙ্গে কথা ছিলো বিদেশ যাওয়ার পরে খাওয়া-থাকা সব কিছু হারুন বহন করবে। তিনি আরও বলেন, এই বিষয়গুলো আমার ছেলে আমাদের সঙ্গে শেয়ার করলে আমি বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করি। সেখানে হারুন মাসুক সুজন ও হারুনের স্ত্রী ববিকে আসামি করে শ্রীমঙ্গল থানায় একটি মামলা করা করি। থানার এসআই সজীব চৌধুরী মাসুক হারুনের স্ত্রী ববি ও সুজনকে থানায় ডেকে আনলে তারা তিন জন মিলে স্ট্যাম্পে একটি লিখিত দিয়ে যায়। তারা ২০ দিনের মধ্যে জুবায়েরের বিষয়টি সমাধান করে দিবেন। কিন্তু ২০ দিন পার হয়ে গেলেও তারা আমার ছেলের বতাখা মেডিকেল করে দেয়নি। হারুন এবং মাসুকের বাড়িঘরের অংশ বিক্রি করে পালিয়ে যায়। এছাড়াও মানুষের টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে। মাসুক বর্তমানে পলাতক রয়েছে। আমার ছেলের বতাখা না থাকার কারণে সে দেশে ও আসতে পারতেছে না খুবই কষ্টের জীবনযাপন করছে।
আরে ভুক্তভোগী কামারগাঁও গ্রামের জুনায়েদ মিয়া বলেন, আমার ভাই আব্দুল মুমিনকে প্রায় ৮ মাস আগে মাসুকের মাধ্যমে উমান পাঠাই। ভিসা বাবদ আমি ৩ লাখ টাকা তাদেরকে দেই। একটি কোম্পানির ক্লিনার হিসাবে আমার ভাই কাজ করবে কথা ছিলো কিন্তু আমার ভাই এখনো কাজ পায়নি। হারুন ও মাসুক বিভিন্ন দেশে বেশির ভাগ অবৈধভাবে লোক পাঠিয়ে প্রচুর টাকা লোপাট করছে। এ ছাড়াও সে অনেক লোকের কাছ থেকে বিদেশের যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অনেক টাকা আত্মসাৎ করছে তার কাছ থেকে বহুলোক প্রতারণার শিকার। তাদেরকে শাস্তির আওতায় নেওয়া হোক, আমার সঙ্গে যেরকম হয়েছে আর কারও সঙ্গে যেন এমন না হয় এবং আর কোনো সাধারণ মানুষ যেন তার ফাঁদে পা দিতে না পরে। তাকে সঠিক বিচারের আওতায় নেওয়া হোক ও দ্রুত শাস্তির জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
শাহ মোস্তফা ট্রাভেলসের মালিক মাসুকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে জানায়, আমার ওপর আনিত অভিযোগ সবগুলো সত্য নয়। আমি এখানে মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছি। আমার বড় ভাই ওমানে প্রবাসী হারুন মিয়া আমাকে দিয়ে মানুষের সঙ্গে বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে কথাবার্তা বলাতো এবং সে বিদেশে থেকে কাস্টমারের সঙ্গে কথা বলতো, টাকা পয়সা মানুষ যে আমাকে দিতো সব আমি উনার একাউন্টে পাঠিয়ে দিতাম। অনেকেই টাকা দিয়েছেন কিন্তু তাদেরকে বিদেশ নেয়া হয়নি। আমার ভাই হারুনকে জিজ্ঞাস করলে সে বলে হবে আজ, কাল, পরশু। বিদেশ যাওয়ার পরে মানুষ বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে পড়ে এবং আমাকে তাদের পরিবার সমস্যার কথা অবগত করলে আমি আমার ব্যক্তিগতভাবে এক দুই মাসের বেতন প্রদান করি। পরিশেষে মানুষের চাপে ও ভয়ে ট্রাভেলস ছেড়ে বাড়িঘর বিক্রি করে দিয়েছি।
মন্তব্য করুন