১৪ ডিসেম্বর জয়পুরহাট মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলার অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সংগ্রামী বাঙালি জাতির অনেক রক্তের বিনিময়ে জাতি স্বাধীনতা পেয়েছে। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। ১৪ ডিসেম্বর ভোরে পূর্ব আকাশে লাল সূর্য উঁকি দিয়ে দেখছে মুক্ত জয়পুরহাটের বিজয়ের গৌরবগাথা দিনটিকে। এ দিনটি ছিল জয়পুরহাটের মুক্তিকামী জনতার আনন্দ-বেদনার অশ্রুসিক্ত একটি দিন। এক দিকে স্বজন হারানোর বেদনা, অন্যদিকে হানাদারমুক্ত হওয়ার আনন্দ।
এদিকে আজ ১৪ ডিসেম্বর (বুধবার) শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস উপলক্ষে সদর উপজেলার পাগলা দেওয়ান বধ্যভূমিতে সকাল ৮টায় এবং কড়ই কাদিরপুর বধ্যভূমিতে সকাল সাড়ে ৯টায় পুষ্পস্তক অর্পণ ও আলোচনাসভার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।
১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জয়পুরহাটের সীমান্তবর্তী পাঁচবিবি থানার ভূঁইডোবা গ্রাম হয়ে বাংলাদেশের ভেতরে ঢুকে পড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। লাল সবুজের ভেতরে আঁকা বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা আর অস্ত্র হাতে যোদ্ধার দল। সঙ্গে চলে জয় বাংলা স্লোগান। তারা জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানা চত্বরে প্রবেশ করে, সেখানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন। সেই দিনটিতে পাঁচবিবির হাজারো মুক্তিকামী মানুষ আনন্দে উল্লাসে ফেটে পড়ে। জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত হয় পাঁচবিবি থানা সদর এলাকা। হানাদার বাহিনী পালিয়ে বগুড়ার দিকে যাওয়ায় পাঁচবিবি থেকে মুক্তিযোদ্ধার দলটি পায়ে হেঁটে জয়পুরহাট মহকুমা সদরে বিনা বাধায় প্রবেশ করে। শহরের জয়পুরহাট-পাঁচবিবি সড়কে ডাকবাংলোতে পতাকা উত্তোলন করেন যোদ্ধারা। জয়পুরহাট শহরের মুক্তিকামি মানুষ যখন জানতে পারেন, মুক্তিযোদ্ধার দল পাঁচবিবি থেকে জয়পুরহাটের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে, তখন থেকে শহরের রাস্তা আর অলিগলিতে জয় বাংলা শ্লোগানে শহর যেন পরিণত হয় আনন্দ মিছিলের শহরে। বিকালে ডাকবাংলোতেও স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাঘা বাবলু।
জয়পুরহাটে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নায়ক জয়পুরহাট শহরের খনজনপুর এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার খন্দকার আসাদুজ্জামান বাবলু (প্রয়াত)। মুক্তিযুদ্ধে তার সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন বাঘা বাবলু নামে। তার বড় ভাই খন্দকার ওলিউজ্জামান আলমও (প্রয়াত) ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। উল্লেখ্য, জয়পুরহাট ভারত সীমান্তর্তী এলাকা হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধের সময় সদর উপজেলার পাগলা দেওয়ান সীমানা দিয়ে ভারতে হাজারও নারী-পুরুষ জীবন বাঁচাতে ভারতে প্রবেশ করে। এ গ্রামে হানাদারবাহিনী তাদের ক্যাম্প স্থাপন করে। ভারতে প্রবেশের সময় বিপুল সংখ্যক নারী পুরুষকে হত্যা করে মাটি চাপা দেয় হানাদার বাহিনী। ৭১ এর ২৪ এপ্রিল পালপাড়া (মৃৎশিল্পী) গ্রামে প্রবেশ এ দিন তিন শতাধিক নারী-পুরুষকে হত্যা করে পাশে ডোম পুকুর এলাকায় মাটিচাপা দেয়। এ দুইটি বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। শহরের শহীদ ডা. আবুল কাশেম মাঠে নির্মিত হয়ে ৭১ ফুট বিশিষ্ট স্মৃতিসৌধ।
মন্তব্য করুন