মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছিলেন নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের পারকোল গ্রামের ১৮ জন নারী-পুরুষ। গুলিবিদ্ধ হন কানু সরকার ও ওসমান সরকার নামে দুই চাচা-ভাতিজা। কিন্তু বিজয়ের দীর্ঘ ৫৩ বছরে এসব পরিবারের কেউ রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি। দুই যুদ্ধাহতসহ শহীদদের স্বজনরাও পাননি কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা। ১৮ শহীদের গণকবরও পড়ে রয়েছে অযত্ন-অবহেলায়। এসব শহীদ ও যুদ্ধাহতদের সুযোগ-সুবিধাসহ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও স্বজনরা।
জানা যায়, ১৯৭১ এর ১১ এপ্রিল পাক হানাদারদের আসার খবর পেয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের ধানাইদহ ব্রিজ এলাকায় তৎকালীন ইপিআর, পুলিশ-আনসার সদস্যসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এই দিন পাকবাহিনীর অতর্কিত গুলি বর্ষণে শহীদ শুকুর আলী সরকারের পরিবারের ১০ সদস্যসহ মোট ১৮ জন শহীদ হন। গুলিবিদ্ধ কানু সরকার জানান, চোখের সামনে বাবা শুকুর আলী, ভাই জান মোহাম্মদ সরকার, দাদি বাগুনী বেগম, বড় আব্বা ছবির উদ্দিন সরকার, বড়মা গোলাপী বেগম, তাদের মেয়ে জালেমা খাতুন, চাচা আছের উদ্দিন সরকার, চাচি জোসনা বেগম, চাচাত ভাই জাহাঙ্গীর ও ফুপাত ভাই মজেত আলী মোল্লাকে প্রকাশ্যে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে পাক সেনারা। একই সঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তাছের আলী সরকার, সাজেদার মোল্লা ও আবু তালেব, ইলিম সাহা, আদরী বিবি, জহুরা খাতুন, আছিয়া খাতুন ও আনজেরা খাতুন।
তিনি আরও বলেন, আমি ও আমার চাচা ওসমান আলী সরকার এ সময় গুলিবিদ্ধ হই। পাক সেনাদের ছোড়া গুলি এসে আমার বাম পায়ের হাঁটুতে এবং চাচা ওসমান আলীর কোমরে লেগে বেরিয়ে যায়। পরে শহীদদের বাড়ির পাশে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়। স্বাধীনতার পর চিহ্নিত করে স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস ওই গণকবরটি পাকা করে দেন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুস সাত্তার জানান, সেদিন সড়ক পথে পাকিস্তানি বাহিনী রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিল। পথে ধানাইদহ ব্রিজের কাছে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিরোধ করে। সেখানে পাকিস্তানিদের গুলিতে দুই আনসার সদস্যসহ ২০ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। পরে পাক সেনারা ঘুরে গ্রামের রাস্তা দিয়ে পার হওয়ার সময় পারকোলে ঢুকে বাড়ি ঘরে আগুন দেয়। এ সময় প্রতিরোধের চেষ্টা করলে শুকুর আলী সরকার ও তার পরিবারের ১০ জনসহ ওই গ্রামের আরো ১৮ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
পারকোল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম জানান, সেদিনের শহীদ পরিবারগুলি পায়নি সরকারি সাহায্যসহ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। গুলিবিদ্ধ কানু সরকার ও ওসমান আলী সরকার পঙ্গু জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু তাদের খোঁজও নেয় না কেউ। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার শামছুল হক জানান, এসব শহীদের ওই পরিবারকে শহীদ পরিবারের মর্যাদা দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকবার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলে আবেদন করা হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। বর্তমানে গণকবরটিও অযত্ন-অবহেলায় পড়ে রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
ইউএনও আবু রাসেল জানান, দীর্ঘদিনেও তারা তালিকাভুক্তিসহ সরকারি সুযোগ সুবিধার আওতায় কেন আসেননি সে ব্যাপারে আমি খোঁজ খবর নেব।
মন্তব্য করুন