ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় এক রাতে ৩টি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনায় এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ। সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাহজাহান জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে ওই যুবককে গ্রেপ্তারের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তার যুবক সনাতন মালো ওরফে সোনাই আলফাডাঙ্গা পৌর সদরের মৃত নিতাই মালোর ছেলে।
রোববার (১৭ ডিসেম্বর) রাত ২টার দিকে আলফাডাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক বিনয় বাড়ৈ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপজেলার চুয়াল্লিশের মোড় নামক এলাকা থেকে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিজয় দিবসের রাতে আলফাডাঙ্গা পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কেন্দ্রীয় হরি মন্দির, শ্রী বিষ্ণু পাগলের মন্দির এবং ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীশ্রী দামুদর আখড়া মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। ৩টি মন্দিরের মোট ১০টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। প্রতিমা ভাঙচুরের পরের দিন ১৭ ডিসেম্বর আলফাডাঙ্গা থানায় একটি মামলা হয়।
পুলিশ সুপার মো. শাজাহান কালবেলাকে বলেন, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার পরে পুলিশ খুব তৎপর ছিল তারই ধারাবাহিকতায় বিষ্ণু পাগল আস্তানা মন্দিরের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রতিমা ভাঙচুরের রাত ২টা ১৫ মিনিটে এক ব্যক্তি মন্দিরে প্রবেশ করে এবং রাত ২টা ৩৬ মিনিটে বের হয়। পরে স্থানীয়দের কাছে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে তার নাম-পরিচয় বেরিয়ে আসে। এরপর তথ্য অনুযায়ী সোনাই মালোকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, গ্রেপ্তারের পর আসামি সনাতন মালো জিজ্ঞাসাবাদে প্রতিমা ভাঙচুরের কথা স্বীকার করে। সোনাই মালো জানান, সে মনসা পূজা করত, সাপ তাকে দুই বছর যাবত স্বপ্নে বিরক্ত করছে। তাই তিনি বিভিন্ন পূজামণ্ডপে যেসব মূর্তি ও প্রতিমার সঙ্গে শিব বা মহাদেবের মূর্তি আছে সেগুলোর মুখমণ্ডল হাত দিয়ে ভেঙে ফেলেন। কারণ শিব বা মহাদেবের গলায় সাপ জড়ানো থাকে। তাই মূর্তির সঙ্গে যে সাপ থাকে সেগুলোও ভেঙে ফেলেন।
সোনাই আরও জানান , বিষ্ণু পাগলের মন্দিরে রক্ষিত দূর্গা, সরস্বতী, লক্ষ্মীর যে প্রতিমা আছে সেগুলো আসল না এবং তারাও সাপের রূপ ধারণ করে তাকে ভয় দেখায়। এ কারণে ওই মূর্তিগুলোর মুখ ভেঙে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইমদাদ হুসাইন (সদ্য এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) শৈলেন চাকমা (সদ্য এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) শেখ মো. আবদুল্লাহ বিন কালাম (সদ্য এসপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত), সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) মো. মিজানুর রহমান, আলফাডাঙ্গা থানার ওসি সেলিম রেজাসহ পুলিশ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা।
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় প্রতিবাদে শনিবার ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বিক্ষোভ মিছিল এবং রোববার ১৭ ডিসেম্বর আলফাডাঙ্গা চৌরাস্তা এলাকায় মানববন্ধন করে উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদসহ সনাতনী বিভিন্ন সংগঠন।
মন্তব্য করুন