ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় নিয়মনীতি উপেক্ষা করে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অকটেন-ডিজেল, মবিল, এলপি গ্যাস সিলিন্ডার ও পেট্রোল। এ উপজেলায় ২টি ফিলিং স্টেশন ও ৩টি এলপিজি গ্যাস স্টেশন থাকলেও বিভিন্ন মুদি দোকান, হার্ডওয়্যার, ক্রোকারিজ দোকান, সার দোকান থেকে শুরু করে সড়কের মোড়ে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল, মবিল ও এলপি গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। তাদের অধিকাংশের নেই কোনো লাইসেন্স বা অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র। অথচ নিয়ম অনুযায়ী দাহ্য পদার্থ বিপণন ও বাজারজাত করতে হলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ীকে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র নিতে হয়। সোনাগাজী উপজেলার ছোট-বড় হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অর্ধশতাধিক দোকানে বিক্রি হচ্ছে এ জ্বালানি পদার্থ। বিভিন্ন দোকানে দুই লিটার, এক লিটার অথবা আধা লিটার ওজনের প্লাস্টিকের বোতলে অকটেন ভরে পসরা সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যে কেউ ইচ্ছা করলেই বোতলভর্তি অকটেন কিনতে পারেন। এতে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়।
জ্বালানি তেল বিক্রির জন্য কমপক্ষে পাকা মেঝেসহ আধাপাকা ঘর, ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপক সক্ষমতা-সংক্রান্ত লাইসেন্সসহ অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার এবং মজবুত ও ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকার সরকারি নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু সে নির্দেশনা উপেক্ষা করে সোনাগাজীতে যত্রতত্র বিক্রি হচ্ছে জ্বালানি তেল। যার ফলে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। একজন ব্যবসায়ী এসব শর্ত পূরণ করলেই কেবল জ্বালানি তেল বিক্রির নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন। লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে জ্বালানি তেল বিক্রি করা যাবে না। অথচ সরকারি এসব নীতিমালার তোয়াক্কা না করেই সোনাগাজীর ছোট-বড় সব বাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে দাহ্য পদার্থ। আর এভাবে জ্বালানি তেল বিক্রিতে সাধারণ মানুষ থাকে প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠায়।
বিস্ফোরক পরিদপ্তর সূত্র জানায়, খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে একজন বিক্রেতা সর্বোচ্চ ১২ কেজির ১০টি পর্যন্ত এলপিজি সিলিন্ডার মজুদ রাখতে পারবেন। পেট্রোল বা ডিজেল বিক্রির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দুই হাজার লিটার পর্যন্ত মজুদ করতে পারবেন। তবে আবাসিক এলাকায় এ ব্যবসা নিষিদ্ধ।
সোনাগাজী উপজেলার ছোটবড় হাট বাজারগুলো ঘুরে অনুসন্ধানে দেখা গেছে, অর্ধশতাধিক মুদি, হার্ডওয়্যার, ক্রোকারিজ, মোটরসসাইকেল গ্যারেজ, বাই সাইকেল গ্যারেজ, সার দোকানে অবাধে বিক্রি করছে অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল, মবিল, গ্যাস। সোনাগাজী বাজারের জননী ট্রেডার্স, মুজাহিদ স্টোর, কাশেম স্টোর, দুলাল স্টোর, মতিগঞ্জ বাজারের শাহ আলম স্টোর, জামাল স্টোর, ডাকবাংলা বাজারের ওবায়দুল হক ট্রেডার্স, বখতারমুন্সী বাজারের দেলোয়ার স্টোর, কাজীর হাট বাজারের নাঈম ব্রাদার্স, বিসমিল্লাহ ক্রোকারিজ, শ্রী লোকনাথ ওয়ার্কশপ, রাকিব হার্ডওয়ার, কেরামতিয়া বাজারের আলম এন্টারপ্রাইজ, মামুন এন্টারপ্রাইজ, জমাদার বাজারের জিয়া এন্টারপ্রাইজ, করিম স্টোর, সওদাগরহাট বাজারের রুবেল স্টোর, তাকিয়া বাজারের জাকির এন্টারপ্রাইজ, রিনা ট্রেডার্স, জিহাদ এন্টারপ্রাইজ, মেলেটারি এন্টারপ্রাইজ, ভোর বাজারের খান ট্রেডার্স, নবাবপুর বাজারের সিদ্দিক স্টোর, ভাই ভাই স্টোর, সোনাপুর বাজারের হোসেন ট্রেডার্স, মদিনা বাজারে নুর নবী এন্টারপ্রাইজ, ভুইয়া বাজারে কালাম সাইকেল মার্ট, সাহেবের হাট বাজারে নুর উদ্দিন ইলেক্ট্রনিক্স অ্যান্ড হার্ডওয়্যার, কুদ্দুস মিয়ার হাট বাজারের বেলাল ব্রাদার্স, আদর্শগ্রাম বাজারে কাদের সওদাগরের দোকানসহ অর্ধশতাধিক দোকানে অবাধে বিক্রি করছে দাহ্য পদার্থ।
নবাবপুর ইউনিয়নের ভোর বাজারের এক জ্বালানি তেল বিক্রেতা বলেন, আমরা ছোট ব্যবসায়ী। সারা দিনে অল্প কয়েক লিটার তেল বিক্রি করি। বিস্ফোরক আইন সম্পর্কে আমাদের কোনো ধারণা নেই। লোকজনের চাহিদা থাকায় এজেন্টদের কাছ থেকে দৈনিক ১০লিটার করে তেল নিয়ে এসে বিক্রি করি।
সোনাগাজী বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল ওহাব বলেন, হাতের নাগালে অকটেন-পেট্রোল মুদি দোকানসহ যত্রতত্র বিক্রি করায় সন্ত্রাসীরা নাশকতার কাজে পেট্রোল ব্যবহার করতে পারে। প্রশাসনের কাছে দাবি এ দাহ্য পদার্থ যেখানে সেখানে বিক্রি বন্ধ করা হোক।
সোনাগাজী বাজারের জননী ট্রেডার্সের মালিক নিবারন নাথ জানান, সোনাগাজীতে একমাত্র বিস্ফোরক অধিদপ্তরের নিবন্ধন আছে আমাদের প্রতিষ্ঠানের। আমরা কেরোসিন তেল বিক্রির জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তরের নিবন্ধন পেয়েছি।
ডাকবাংলা ফিলিং স্টেশন ও ডাকবাংলা ওবায়দুল হক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ফারুক জানান, আমাদের ওবায়দুল হক ট্রেডার্স বিস্ফোরক অধিদপ্তরের লাইসেন্স নিয়ে দীর্ঘ ২০বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা করে আসছি।
সোনাগাজী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের স্টেশন অফিসার মো. জামিল আহমেদ জানান, সোনাগাজীর খুচরা মার্কেটে যত্রতত্র যেভাবে গ্যাস সিলিন্ডার, পেট্রোল-অকটেন ও ডিজেল বিক্রি হচ্ছে তার ৯৫ শতাংশই অবৈধ। এতে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তবে গ্যাস সরবরাহের আগে বিস্ফোরক লাইসেন্স আছে কিনা তা দেখে নেওয়া উচিত। বিনা লাইসেন্সে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন এলপিজি বা দাহ্যপদার্থ বিক্রি করতে না পারে তার জন্য উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ যদি সহযোগিতা করে তাহলে কাজটা আমাদের জন্য সহজ হয়। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের নিবন্ধন পেতে ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। সোনাগাজীতে আমরা ৭টি দোকানকে ছাড়পত্র দিয়েছি। বিস্ফোরক অধিদপ্তরের নিবন্ধন ছাড়া কোনো দোকানে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল বিক্রি করার সুযোগ নেই।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি সুদ্বীপ রায় পলাশ জানান, লাইসেন্স ছাড়া কোনো দোকানে অকটেন, ডিজেল, মবিল, পেট্রোল বিক্রি করার সুযোগ নেই। মুদি দোকানে জ্বালানি তেল বিক্রি ঝুঁকিপূর্ণ। উপজেলা প্রশাসন বা এসব দোকান তদারকির দায়িত্বে থাকা সরকারি সংস্থা যদি আমাদের সহযোগিতা চায় পুলিশ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, খোলাবাজারে অকটেন, ডিজেল, পেট্রোল, মবিল বিক্রি করা যাবে না। দাহ্য পদার্থ বিক্রির সুনির্দিষ্ট বিধিমালা আছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত লাইসেন্স ছাড়া যত্রতত্র বিক্রির কোনো সুযোগ নেই। অবৈধভাবে এসব বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন