গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ফাঁদ পেতে কালেম পাখি শিকার করেছেন শরীফ মন্ডল নামে এক যুবক। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে কালিয়াকৈর পৌরসভার পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার একটি জলাশয় থেকে পাখিটি শিকার করেন তিনি। পরে পাখিটির পায়ে রশি বেঁধে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন শরীফ।
অভিযুক্ত শরীফ মন্ডল পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার বাসিন্দা এবং কালিয়াকৈর পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক। তিনি ইকো গেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেও জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, কালেম পাখি এক সময় দেশের জলাশয়গুলোতে অবাধ বিচরণ করত। তবে আবাসস্থল কমে যাওয়া, শিকার, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি নানামুখী কারণে নীল রঙের এই পাখিটি হারিয়ে যেতে বসেছে।
এ ব্যাপারে বন বিভাগের গাজীপুরের কালিয়াকৈর রেঞ্জের কর্মকর্তা মনিরুল করিম জানান, বন্যপ্রাণী শিকার ও আটকে রাখা আইনগতভাবে অপরাধ। বিষয়টি তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা এবং তরুণ বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলা বলেন, পাখিটির পুরো নাম বেগুনি কালেম (Purple Swamphen)। তবে এটি কালিম বা কায়িম পাখি নামেও পরিচিত। এটি হাওর, বিল বা জলাশয়ের পাখি। পদ্ম, শাপলা বা বড় ঘাসপূর্ণ জলাভূমিতে এদেরকে বেশি দেখা যায়। এরা খুবই সামাজিক পাখি, দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। পাখিটি খাবার হিসেবে ধান, গম, চাল, ঘাস, মাছ, শামুক ইত্যাদি খেলেও কচুরিপানা এদের প্রিয় খাদ্য। বছরে ৭ থেকে ১০টি ডিম দেয় এবং প্রাকৃতিকভাবেই বাচ্চা উৎপাদন করে পাখিটি।
জোহরা মিলা বলেন, পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই কালিমের দেখা পাওয়া যায়। বিগত কয়েকদশক ধরে সারা পৃথিবীতে কালিমের সংখ্যা স্থির থাকলেও বাংলাদেশে জলাভূমি কমে যাওয়া এবং যত্রতত্র ফাঁদ পেতে শিকার করার ফলে পাখিটি ও তাদের আবাসস্থল হুমকির সম্মুখীন। আইইউসিএন এই প্রজাতিটিকে ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইন-২০১২ অনুযায়ী পাখিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার বা এর কোনো ক্ষতি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
মন্তব্য করুন