ভোটের আগের দিন রাতে অর্ধেক ভোট সংগ্রহ (কাস্টিং) হওয়া নিয়ে যেসব অভিযোগ ছিল তা এবার আর হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেছেন, আমরা ৯৯ শতাংশ নয়, শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি, এরকম কোনো অবস্থাতেই হবে না। এজন্য অনেক কেন্দ্রে ব্যালট পেপার সকালে যাবে।
মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর এলজিইডি ভবনের মিলনায়নের দ্বাদশ নির্বাচনের প্রার্থী ও টিপিআই মিলনায়তনে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা একটি অ্যাপস তৈরি করেছি, যেখানে দুই ঘণ্টা পরপর প্রতিটি কেন্দ্রে কত শতাংশ ভোট পড়ল তা সেখানে ইনপুট দেওয়া হবে। মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাপস ডাউনলোড করে সেটি সবাই জানতে পারবেন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে ১০টার সময় দেখা গেল ১০ শতাংশ ভোট পড়ল। কিন্তু ১২টার দিকে গিয়ে হঠাৎ ৮০ শতাংশ হয়ে গেল। এটি বিশ্বাসযোগ্য হবে না। এজন্য আমরা বিভিন্ন পরিমাপক নিয়েছি, যাতে ভোটগ্রহণের সত্যতা মানুষের মাঝে ফুটে ওঠে।’
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘ব্যালট পেপার সকালে না গিয়ে ১০ দিন আগে অথবা ১০ মাস আগেও যদিও যায়, তাহলেও প্রার্থীরা তাদের পোলিং এজেন্ট দিয়ে সকালে ভোটকেন্দ্রে স্বচ্ছ বাক্সগুলো খালি কি না সেটি দেখে তারপর বাক্স বন্ধ করবেন। সেক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্রে অবৈধ কোনো ব্যালট বাক্স ঢোকার সুযোগ নেই। তারপরও আমরা বিশ্বাস এবং আস্থা অর্জনের জন্য বলেছি ব্যালট পেপার সকালে পাঠাব।’
তিনি বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টরা অবশ্যই দাঁড়িয়ে থেকে দেখে নেবেন ব্যালট বাক্সগুলো খালি আছে কি না। তারা ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ গণনা ও ফল ঘোষণা পর্যন্ত কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। সবকিছু সঠিকভাবে হয়েছে কি না জানবেন। যদি গণনা যথাযথভাবে শেষ হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়ে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আর মাঝখানে যদি কোনো পেশিশক্তির উদ্ভব ঘটে, তাহলে প্রিসাইডিং অফিসারকে বলা হয়েছে তিনি ভোট বন্ধ করে দেবেন। তিনি যদি বন্ধ না করেন রিটার্নিং অফিসার অবহিত হলে তিনি বন্ধ করে দেবেন। তিনিও যদি বন্ধ না করেন, আমরা ঢাকা থেকে অবহিত হলে বন্ধ করে দেব। কথাগুলো বললাম কারণ আমাদের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া নিয়ে একটা অনাস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেটি যাতে দূর হয়। আমরা নির্বাহী প্রশাসন ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। এখানে ওসি, ইউএনও, ডিসি ও এসপিদের বক্তব্য শুনেছি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ ভালো।
কেন্দ্রে যাতে কোনো অননুমোদিত ব্যক্তি প্রবেশ না করে তার জন্য প্রিসাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে বলে জানান কাজী হাবিবুল আউয়াল। সিইসি বলেন, যদি অননুমোদিত ব্যক্তি ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে, তাহলে বুঝতে হবে তিনি কুমতলব নিয়ে প্রবেশ করেছেন। তাহলে ভোটগ্রহণ প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। আমরা কঠিন বার্তা দিয়েছি, এ ধরনের কোনো কিছু যাতে না হয়।’
সিইসি আরও বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছি। তাদের বক্তব্য শুনেছি। আমরাও যথাযথ নির্দেশনা দিয়েছি। তারা আমাদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের কথা বলেছেন। পোস্টার ছেঁড়া ও দুয়েক ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। কিন্তু সার্বিকভাবে যারা প্রার্থী হয়েছেন, তারা আমাদের জানিয়েছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের আচরণে তারা সন্তুষ্ট।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনের সংস্কৃতিতে অনেকে কালো টাকার বিনিময় পেশাদার কিছু সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেন। তারা যাতে ভোটকে প্রভাবিত না করতে পারে সে বিষয়ে কঠোর নজরদারি রাখতে হবে। সবমিলিয়ে আমরা এটুকুই বার্তা দিয়েছি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যে কোনো মূল্যে যে কোনোভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।’
এ সময় নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার কৃষ্ণপদ রায়, রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নুরে আলম মিনা ও জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন