মৃদু শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে গত কয়েক দিন ধরে কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। এই শীতের প্রকোপে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগ। এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও রোগনির্ণয় কেন্দ্র ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা বলছেন, শীত মৌসুমে হিমশীতল আবহাওয়াজনিত কারণে নানা বয়সের মানুষ ঠান্ডাজনিত অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়। তবে বেশিভাগ শিশু ও বয়স্করাই আক্রান্ত হয় ঠান্ডাজনিত রোগে। শীতের এই সময়টাতে কাশি, গলাব্যথা, সর্দি, চামড়ায় অ্যালার্জি, এজমার প্রকোপ, হালকা বা তীব্র জ্বর, কোল্ড অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় ঠান্ডাজনিত রোগী নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে যাতায়াতের সময় মাস্ক পরিধান করা ও শীত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল বা হাতমুখ ধোয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
সরেজমিনে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে খোঁজ নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু হুমাইরার (৩) মা খাদিজা আক্তার কালবেলাকে জানান, গত তিন দিন আগে তার মেয়ে হুমাইরার হালকা জ্বর, কাশি ও ঠান্ডা দেখা দেয়। বাড়ির পাশের ফার্মেসি থেকে ওষুধ নিয়ে খাওয়ানো হয় তাকে। সকাল থেকে হাঠাৎ করে কাশি বেড়ে যাওয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এসেছেন।
দেড় মাস বয়সী শিশু সাইফ শ্বাসকষ্টে ভুগছে। গত কয়েক দিন ধরে ঠান্ডাজনিত সমস্যায় ভুগছিল সে। হঠাৎ করেই শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখার পরামর্শ দেন। চিকিৎসকের ভাষ্যমতে শিশুটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। ঠান্ডাজনিত কারণে শিশুটি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
আলী আহাম্মদ ( ৬৬) নামের এক রোগীর স্বজনরা জানান, তিনি একজন এজমার রোগী। গত কয়েক দিন ধরে শুরু হওয়া কনকনে শীতের কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে তার। চিকিৎসক তাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠান। তবে তাকে শীতের তীব্রতা থেকে সুরক্ষিত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু হাসনাত মো. মহিউদ্দিন মুবিন কালবেলাকে জানান, শৈত্যপ্রবাহের কারণে গত কয়েক দিন ধরে এই জনপদে কুয়াশা বেড়েছে। সঙ্গে হিমেল বাতাসের কারণে নেমেছে কনকনে শীত। এতে শীতজনিত অসুখ-বিসুখ বেড়েছে।শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এ সময়টাতে কুয়াশা ও ধুলাবালি শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। যার ফলে মানুষ ঠান্ডাজনিত ও অ্যালার্জিজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এই সময়টাতে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরিধান করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। মাস্ক পরিধান করতে হবে। বিশেষ করে যাতায়াতের সময় মাস্ক পরিধান করতে হবে। ঠান্ডাজাতীয় খাবার পরিত্যাগ করতে হবে। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত ব্যায়াম ও ভিটামিন সি জাতীয় ফলমূল খেতে হবে। কুসুম গরম পানি গোসল ও হাতমুখ ধোয়ার কাজে ব্যবহার করতে হবে। তীব্র শীত এড়াতে হাত ও পা মোজা এবং কানটুপি বা মাফলার ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে বাচ্চা ও বয়স্কদের প্রতি বিশেষ নজরদারি রাখা জরুরি। এ ছাড়া এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতি শনি থেকে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বহির্বিভাগে এবং রাত দিন ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগে চিকিৎসকরা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
এ সময় ঠান্ডাজনিত রোগীকে পল্লী চিকিৎসক থেকে ভুল চিকিৎসা না নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মন্তব্য করুন