ভূমি অফিসের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী পিতা-মাতাকে ভূমিহীন দেখিয়ে ৩ কোটি টাকার সরকারি জমি দখল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ ৭ জনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে ঝালকাঠির কাঠালিয়া উপজেলার ২ নং পাটিখালঘাটা ইউনিয়নে।
জানা যায়, ভূমি অফিসের ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী মো. ইলিয়াছ মিয়া কচুয়া বাজারের প্রায় ৩ কোটি টাকার সরকারি জমি নিজ পিতা ও মাতাকে মিথ্যা ভূমিহীন দেখিয়ে ভোগ করছে। বিষয়টি নিয়ে ৫ নং শৌলজালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামের একেএম মোস্তফা কামাল জনস্বার্থে ঝালকাঠির সহকারী জজ আদালতে জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও সহকারী কমিশনার ভূমি কাঠালিয়াসহ ৭ জনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, কাঠালিয়া সহকারী কমিশনার ভূমি অফিসের অধীন পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক মো. ইলিয়াছ খান, তার পিতা মো. আবুল কালাম খান ও মাতা মোসা. আনোয়ারা বেগমকে ভূমিহীন দেখিয়ে শৌলজালিয়া ইউনিয়নের কচুয়া বাজার সংলগ্ন সরকারি খালের জেল ৩৯ কচুয়া মৌজার এস এ ১ নং খতিয়ানের ১৬১৫ নং দাগের ভরাটকৃত অংশের ১৬ শতাংশ জমি নিয়ম বহির্ভূতভাবে ১৩ জুলাই ২০২০ সালে বন্দবস্ত নেন। বিষয়টি দীর্ঘদিন গোপন রেখে ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর জমি ভোগ দখলে যান।
বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় লোকজন ও কচুয়া বাজার কমিটির সদস্যরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে এ অনিয়মের কথা অভিহিত করে বন্দবস্ত বাতিল করার অনুরোধ জানান।
জেলা প্রশাসক বিষয়টি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ২ জানুয়ারি বাজার কমিটির সভাপতি একেএম মোস্তফা কামাল, সাধারণ সম্পাদক এস এম মনিরুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য এইচ এম নাসির উদ্দিনসহ ৯ জন বাদী হয়ে মোকাম কাঠালিয়া সহকারী জজ আদালতে মো. আবুল কালাম খান তার স্ত্রী মোসা. আনোয়ারা বেগম, মো. ইলিয়াছ খান, জেলা প্রশাসক ঝালকাঠি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব ঝালকাঠি, সহকারী কমিশনার (ভূমি) কাঠালিয়া ও ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা শৌলজালিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ১৬ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করেন। মামলার বাদীগণ জনস্বার্থে এ বেআইনি বন্দবস্ত বাতিল করে উক্ত জমি বাজারের অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নে অবমুক্ত করার জন্য জোর দাবি জানান। কেননা পাটিখালঘাটা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (পিওন) এর ভূমি অফিসে চাকরি করার সুবাদে তার পিতা আবুল কালাম ও মা আনোয়ারা বেগম ভূমিহীন না হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে ভূমিহীন দেখিয়ে মিথ্যা ভূমিহীনের কাগজপত্র তৈরি করে তৎকালীন কাঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীনকে ম্যানেজ করে কোটি কোটি টাকার এ সম্পত্তি বন্দবস্ত নিয়েছেন।
কচুয়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. ফিরোজ আলম জানান, কচুয়া বাজারটি অনেক পুরোনো, কিন্তু সরকারি জমি না থাকার কারণে বাজারের উন্নয় বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। অথচ, মো. ইলিয়াছ মিয়া সরকারি চাকরি করে তার বাবা ধনী লোক হওয়া সত্ত্বেও বাজারের সরকারি জমি ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে দখল করায় আমরা ক্ষুদ্ধ। আমরা এর বিচার চাই।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত পাটিখালঘাটা ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক (পিওন) মো. ইলিয়াছ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাবা-মায়ের কোনো জমি নেই, সে ভূমিহীন।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ফারাহ্ গুল নিঝুম জানান, এ ব্যাপারে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
কাঠালিয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা ববি মিতু জানান, মামলার বিষয়টি আমি অবগত। এখন পর্যন্ত আদালতের কোনো কাগজপত্র পাইনি, পাওয়ার পরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন