বরিশাল বিভাগে বছরের প্রথম মাসের ১৮ দিনে ১০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ঠান্ডাজনিত রোগে এসব শিশু মারা যায়। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য জানা গেছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ঠান্ডার কারণে বাড়ছে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী। এদের মধ্যে শিশুদের অবস্থা অল্পতেই নাজুক হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, বরিশাল বিভাগের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১ জানুয়ারি থেকে আজ ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ঠান্ডাজনিত রোগে সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া ভোলা সদর হাসপাতালে ও ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন স্থানে অন্য শিশুরা মারা যায়।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৩০ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে বর্তমানে দেড় শতাধিক শিশু রোগী ভর্তি আছে। আর বহির্বিভাগে গড়ে প্রতিদিন চার শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে সিংহভাগ শিশু।
এ ছাড়া আরও জানানো হয়েছে, ১২ জানুয়ারি শিশু ওয়ার্ডে ৩১ শিশু ভর্তি হয়েছিল, একজনের মৃত্যু হয়। ১৩ জানুয়ারি ভর্তি হয়েছিল ৩০ শিশু, মারা যায় এক শিশু। ১৪ জানুয়ারি ৩১ শিশু ভর্তি হয়েছিল, মারা গিয়েছিল এক শিশু। ১৫ জানুয়ারি ৩০ শিশু ভর্তি হয়েছিল। ১৬ জানুয়ারি ৩১ শিশু ভর্তি হয়েছিল, মারা গিয়েছিল এক শিশু। ১৭ জানুয়ারি ৩০ শিশু ভর্তি হয়, মারা গেছে এক শিশু। ১২ জানুয়ারির আগে আরও দুই শিশুর মৃত্যু হয়।
সরেজমিনে শেবাচিম হাসপাতালে দেখা গেছে, মেডিসিন ও শিশুসহ সব ওয়ার্ড রোগীতে পরিপূর্ণ। শয্যা না পেয়ে অধিকাংশ রোগী মেঝেতে বিছানা পেতে নিয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তি। জ্বর-সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
হাসপাতালে ভর্তি শিশু রাফসানের মা ইয়াসমিন পারভীন বলেন, আমার সন্তানের বয়স আড়াই বছর। হঠাৎ করে তিন দিন আগে অসুস্থ হয়ে পড়ে। শ্বাসকষ্ট হতে দেখে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন নিউমোনিয়া আক্রান্ত। অনেক চেষ্টা করেছি একটি বেডের জন্য। কিন্তু ব্যবস্থা করতে পারিনি। মেঝেতেই আছি।
চার দিন ধরে হাসপাতালের মেঝেতে আছে কলেজ এভিনিউর বাসিন্দা জেসমিন বেগম। তার সন্তান ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। জেসমিন জানান, হাসপাতালে কোনো বেড খালি নেই। প্রতিদিন প্রচুর রোগী আসছে। মেঝেতে রেখে চিকিৎসা করিয়ে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান ডা. উত্তম কুমার সাহা বলেন, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ১২ জানুয়ারি থেকে জ্বর-সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ৩০ জনের বেশি শিশু ভর্তি হচ্ছে।
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ঠান্ডাজনিত কারণে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি রোগী আসছে প্রতিদিন। জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত বেশিরভাগই শিশু। শিশু ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা অপ্রতুল। এ জন্য অনেককে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আমাদের অপ্রতুলতা রয়েছে। তারপরও চিকিৎসকদের আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। চিকিৎসকরা সীমাবদ্ধতার মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন