ইউটিউব দেখে দুই বছর আগে বাড়ির পাশে পরিত্যক্ত ১০০ শতাংশ জায়গায় বরই চাষ শুরু করেন রাসেল মিয়া। একশ শতাংশ জমিতে একশটি কুল বরই, আপেল কুল ও বলসুন্দরী জাতের বরইয়ের চারা রোপন করেন তিনি। এ বছর তার প্রতিটি গাছে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ কেজি করে বরই ধরেছে। বিক্রেতারা ৬০ টাকা কেজি দরে এ বরই কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
রাসেল মিয়ার বাড়ি বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিম অংকুজান পাড়া গ্রামে। এবছর প্রায় দুলাখ টাকার বরই বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন তিনি।
কৃষক রাসেল জানান, তার বাড়ির ঐ জায়গাটুকু পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। একদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ইউটিউবে বিভিন্ন সফল মানুষের ভিডিও দেখেন, ভাবতে থাকেন কীভাবে সফল হওয়া যায়। তারপর বরই চাষের উদ্যোগ নিয়ে এই বাগান করেন।
তিনি বলেন, কৃষিতে সবচেয়ে লাভজনক চাষাবাদ হলো ফল বাগান করা। কিন্তু এই এলাকা তুলনামূলক নিচু হওয়ায় সেভাবে ফল বাগান করা যায় না। তবে রাসেল মিয়ার বাড়িটি তুলনামূলক বড় হওয়ায় তিনি এই ফল বাগান করার উদ্যোগ নেন। ব্যবসার পাশাপাশি বরই বিক্রি করে তিনি এখন ভালো অবস্থানে আছেন।
পশ্চিম অংকুজান পাড়া গ্রামের মো. হাসিব বলেন, অনেকদিন ধরেই শুনছি এই এলাকাতে বরইয়ের (কুল) চাষ হচ্ছে। ফলনও নাকি খুব ভালো হয়েছে। যে গাছগুলোতে ফল ধরেছে, সেই গাছগুলো নাকি অনেক ছোট। তাই আগ্রহ থেকে দেখতে চলে আসলাম। তবে আসার পর আমি অবাক হয়েছি। বরই (কুল) গাছ অনেক ছোট, কিন্তু বরইয়ের (কুল) ভারে গাছের ডাল মাটিতে নুয়ে পড়েছে। বরইগুলোও (কুল) হয়েছে বেশ বড় বড়। এর আগে এমন গাছ দেখিনি। তা ছাড়া, বরইগুলোও (কুল) খেতে খুব সুস্বাদু।
স্থানীয়রা বলেন, ছোটবেলা থেকে রাসেল খুবই কর্মঠ ছিলেন। চাষাবাদের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করতেন। যতদূর জানি, তিনি ইউটিউব দেখে বরইয়ের বাগান করেছেন। আমার বাড়ির খুব কাছে, তাই এই বাগানের পাশ দিয়ে আমাকে যাতায়াত করতে হয়। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসে তার বাগান দেখতে। বরইয়ের (কুল) জাত ও ফলন ভালো হওয়ায় আশা করা যায় তিনি বেশ লাভবান হবেন।
কৃষক রাসেল মিয়ার বাবা বলেন, আমার ছেলে প্রথমে যখন বরই গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেই, তখন আমি নিষেধ করেছি। আমি এতে রাজি ছিলাম না আমি বলেছিলাম এই ছোট্ট ছোট্ট চারা দিয়ে কি হবে? এখন দেখছি চারা লাগানোর প্রথম বছরেই সুন্দর বরই হয়েছে এবং অনেক মিষ্টি। এলাকার মানুষ বরই খেয়ে অনেক প্রশংসা করেন। আমার ছেলে চারা লাগিয়ে ভালো ফল পেয়েছে এতে আয় ভালো হওয়ায় আমি খুব খুঁশি। এখন পর্যন্ত ৫০হাজার টাকার বরই বিক্রি করেছে। এখনো গাছে দেড়লাখ টাকার মত বরই রয়েছে।
এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুমন হাওলাদার বলেন, কৃষক রাসেল মিয়া একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি কোনো পরামর্শের জন্য কৃষি অফিসে আসেননি। তিনি প্রয়োজন মনে করলে স্থানীয় কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
মন্তব্য করুন