ফরিদপুরে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের উদ্যোগে কালো পতাকা মিছিল নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে দেয়নি পুলিশ। মাঝ পথে মুজিব সড়কে সমাবেশ করলেও পুলিশের বাধার কারণে তা সম্পূর্ণ করা যায়নি। শুক্রবার (২৬ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে শহরের ব্রাহ্ম সমাজ সড়ক, জেনারেল হাসপাতালের মোড়, মুজিব সড়ক ও ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে।
‘দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন উর্ধগতি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দ্রীদের মুক্তি, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অবৈধ সংসদ বাতিলসহ এক দফা দাবিতে’ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি পালন করে ফরিদপুর বিএনপি। বেলা ১১টার দিকে জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা কালো পতাকা, ব্যানার নিয়ে শহরের ব্রাহ্ম সমাজ সড়কে জেনারেল হাসপাতালে মোড় এলাকায় সমবেত হয়। এ সময় জেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ পরস্পরের প্রতি কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে স্ব স্ব ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টা ৪০ এর দিকে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল শুরু হয়। প্রথমে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যানার নিয়ে এগিয়ে যায়। স্ব স্ব ব্যানার নিয়ে তাদের অনুসরণ করে সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল থেকে বিক্ষোভকারীরা, ‘অবৈধ নির্বাচন মানি না বাতিল কর’, ‘ডামি নির্বাচন মানি না মানবো না’, ‘ডামি সরকার চাই না পদত্যাগ কর’ বিভিন্ন শ্লোগানের পাশাপাশি খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীদের মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে শ্লোগান দেয়।
১১টা ৪৫ এর দিকে মিছিলটি মুজিব সড়ক ধরে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে গেলে পুলিশ সেখানে মিছিলের গতি রোধ করে। মিছিলকারীরা প্রেসক্লাব পার হয়ে সামনে জনতা ব্যাংকের মোড়ের দিকে এগুতে থাকলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সাথে বিএনপির নেতাদের কথা কাটাকাটি হয়। তবে পুলিশের বাধা ডিঙ্গিয়ে মিছিলটি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলে পুলিশ পুনরায় বাধা দেয়। ফলে মিছিলটি আর বেশিদূর এগুতে পারেনি। তখন বিএনপির নেতারা প্রেসক্লাবের পশ্চিম পাশে ধানসিঁড়ি খাবার হোটেলের সামনে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করে।
বক্তারা বলেন, এ সরকার গণ বিরোধী সরকার সিন্দাবাদের দৈত্যের মতো জাতির ঘাড়ে চেপে বসেছে। ২০১৪ সালে বিনা ভোটে নির্বাচন করেছে, ২০১৮ সালে রাতের আঁধারে ভোট করেছে আর এ বছর ডামি, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নিয়ে জগাখিচুড়ি মার্কা নির্বাচন করেছে। এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত জাতির মুক্তি নেই।
বক্তারা বলেন, এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না বিএনপি। আন্দোলন সংগ্রাম করে এ সরকারের পতন ঘটাতে হবে।
ওই সময় মুজিব সড়কের পূর্বপাশে জেনারেল হাসপাতাল ফরিদপুর পৌরসভা পর্যন্ত যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে পুলিশ সমাবেশের পরও সীমিত পর্যায়ে সড়কে যানবাহন চলাচল অক্ষুন্ন রাখে।
১০ মিনিট বক্তব্য রাখার পর অতিরিক্ত পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ এসে বিএনপি নেতাদের সমাবেশ সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য করেন।
ওই সময় পুলিশের দুটি গাড়ি ঘটনাস্থলে এলে সমাবেশে অংশ নেওয়া বিএনপির কর্মীরা দৌড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করে। পরে নেতৃবৃন্দ তাদের সভাস্থলে ডেকে আনে। এর কিছুক্ষণ পর পুলিশের কর্মকর্তারা এসে হুমকি ধমকি দিয়ে সমাবেশটি দ্রুত শেষ করায়। এ কাজে নেতৃত্ব দেন ফরিদপুর কোতয়ালী থানার ওসি মো. হাসানুজ্জামান।
সমাবেশ শেষ হওয়ার আগে এবং ব্রাহ্মসমাজ সড়কে মিছিল শুরুর আগে জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব আফজাল হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন, জেলা যুবদলের সভাপতি রাজীব হাসান, মহা নগর যুবদলের সভাপতি বেনজীর আহমেদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হোসেন প্রমুখ।
মিছিলে বাধা ও সমাবেশ সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য করার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর কোতয়ালী থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. আব্দুল গফফার বলেন, বিএনপি মিছিল ও সমাবেশ করার জন্য কোন অনুমতি নেয়নি। আকস্মিকভাবে তারা এ কর্মসূচি করেছে। তিনি বলেন, শহরের আইন শৃখলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে মিছিলটি জনতা ব্যাংকের মোড় পর্যন্ত যেতে দেওয়া হয়নি।
‘সমাবেশ সংক্ষিপ্ত করতে পুলিশ বাধ্য করেনি’ -দাবি করে মো. আব্দুল গফফার বলেন, তারা (বিএনপি) নিজেরাই সমাবেশ শেষ করে যার যার গন্তব্যে চলে গেছে।
মন্তব্য করুন