কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়ায় মাঘের ঘন কুয়াশা ও হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে ইরি - বোরো ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। মাঠের পর মাঠজুড়ে কেউ বীজতলা থেকে ধানের চারা তুলছেন, কেউ জমি তৈরি করছেন, আবার কেউ কেউ জমিতে দিনভর পানিতে দাঁড়িয়ে চারা রোপণ করছেন। সময়ের কাজ সময়ে করার নিমিত্তে ফসলি মাঠে এ ব্যস্ততা। কারণ, কাঙ্ক্ষিত ফলন পেতে চারা রোপণে মোটেই দেরি করা যাবে না।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, এ বছর এই উপজেলায় ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর। এরই মধ্যে ৩ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান রোপণ করা হয়েছে। উপজেলার সদর ইউনিয়নসহ শশীদল, শিদলাই, দুলালপুর, চান্দলা, মাধবপুর, সাহেবাবাদ ও মালাপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন বোরো মাঠে ইরি-বোরো চাষের ধুম পড়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের নাগাইশ, দুলালপুর ইউনিয়নের বেজুরা ও সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মাঠে মাঠে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ইরি-বোরো চাষিরা। সেচের মাধ্যমে জমি প্রস্তুত, বীজতলা থেকে ধানের চারা তোলা ও প্রস্তুতকৃত জমিতে ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রান্তিক চাষিরা। মাঘের তীব্র শীত উপেক্ষা করেই বোরো চাষিরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলি জমিতে কাজ করছেন। ভালো ফলনের আশায় উপজেলা কৃষি অফিসের দিকনির্দেশনা মেনেই ইরি-বোরো ধান আবাদ করেছেন চাষিরা। এসব কাজে পিছিয়ে নেই নারীরাও। বীজতলা থেকে চারা তোলা ও এগিয়ে দেওয়ার কাজে নারীরাও অংশগ্রহণ করেছেন। এতে ইরি-বোরো লাগানোর ধুম পড়ে গেছে। দম ফেলার ফুরসত নেই যেনো স্থানীয়দের।
উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের বেজুরা এলাকার কৃষক রেহান উদ্দিন কালবেলাকে জানান, চলতি বোরো মৌসুমে তিনি ৮৪ শতক জমিতে ইরি-বোরো চাষ করতে জমি প্রস্তুত করছেন। অবশ্য এরই মধ্যে কিছু কিছু জমিতে ধান রোপণ করা হয়ে গেছে। নিজের তৈরি করা বীজতলা থেকে চারা তোলার কাজ করছেন তিনি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি।
উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের উত্তর নাগাইশ এলাকার কৃষক শাহ আলম কালবেলাকে বলেন, এ মৌসুমে আমি ১ একর জমিতে ইরি-বোরো আবাদ করছি। অধিকাংশ জমিতে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে। সেচের পানি পর্যায়ক্রমে পাওয়ার কারণে এখনো অবশিষ্ট জমি প্রস্তুত করতে পারিনি। আশা করছি দু-একদিনের মধ্যেই বাকি জমিতে বোরো ধান রোপণ করতে পারব। তীব্র শীতের কারণে বোরো আবাদ কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের দীর্ঘভূমি এলাকার কৃষক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ কালবেলাকে বলেন, মাঘের তীব্র শীতের কারণে বোরো আবাদ কিছুটা ব্যাহত হলেও যথাসময়ে ইরি-বোরো আবাদে জমি প্রস্তুতের কাজে আমরা এখন ব্যস্ত। দুই সেচ পাম্পের আওতায় এ বছর আমি ৫৭ শতক জমিতে ইরি-বোরো আবাদ করছি। কৃষি অফিস থেকে ধানের বীজ ও সার পেয়েছি। আশা করছি এ বছর ভালো ফলন পাব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. মাসুদ রানা কালবেলাকে বলেন, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে এই উপজেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর। বোরোধান চাষে উপজেলার কৃষকদের আগ্রহী করার জন্য ইতিমধ্যে আমরা ২৬ শ প্রান্তিক কৃষককে হাইব্রিড ধানের বীজ এবং ২৫ শ প্রান্তিক কৃষককে উচ্চ ফলনশীল ধানের বীজ ও সার প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন মাঠে ইরি-বোরো আবাদে কৃষকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। বোরো লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রতিনিয়ত মাঠে কৃষকদের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি না হলে এ বছর আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব বলে আশা করছি।
মন্তব্য করুন