দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার উপকারাগারটি ৪০ বছর ধরে অযত্ম অবহেলায় ধ্বংস হতে চলেছে। ঝোপঝাড়ে ছেয়ে রূপ পেয়েছে ভূতের বাড়িতে। সন্ধ্যা নামলেই বখাটে ও মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়। চুরি হয়ে গেছে দরজা-জানালা, সঙ্গে খুলে নিয়ে যাচ্ছে ইট।
১৯৮৪ সালে এরশাদ সরকারের আমলে দিনাজপুরের ৫টি উপজেলায় বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর, ঘোড়াঘাট ও ফুলবাড়ী নিয়ে উপকারাগারটি ৩ দশমিক ১৫ একর জমির ওপর নির্মিত হয়। জেলা শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে জেলার দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের বিরামপুরসহ ৫টি উপজেলার বিচারাধীন আসামিদের সঠিক সময়ে উপজেলা আদালতে হাজিরা দেওয়ার সুবিধার্থে এটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার উপজেলার আদালতগুলো জেলা শহরে স্থানান্তর করে উপকারাগারের জনবল প্রত্যাহার করে নেয়। এতে দেশের অন্য উপকারাগারের মতো বিরামপুর উপকারাগারটিও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। সরকারিভাবে পাহারার ব্যবস্থা না থাকায় অবকাঠামো ক্ষয় হতে চলেছে। ৪০ বছরের পরিত্যক্ত উপকারাগারটি এখন মাদকসেবী ও বখাটেদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। অযত্ন, অবহেলা ও তদারকির অভাবে কারাগারটির দরজা, জানালা এমনকি প্রাচীরের ইট পর্যন্ত চুরি হয়ে গেছে।
অনেক বছর ধরে পরিত্যক্ত থাকায় উপকারাগারের ভেতরের অংশে বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ জন্মে জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিত্যক্ত জেলখানার ভেতরে বসে অবাধে চলছে মাদকসেবন ও বিক্রি। বাধা দেওয়ার কেউ নেই ।
বিরামপুর পৌরসভার মেয়র অধ্যক্ষ আলী দৈনিক কালবেলাকে বলেন, শুনেছি পরিত্যক্ত উপকারাগারটির ভেতরে গাছ জন্মে ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে সেখানে মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য পরিণত হয়েছে। সরকারের এখানে শিশু শোধনাগার নির্মাণ করার কথা ছিল। তবে তা এখন পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি।
স্থানীয় নরেশ মার্ডি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুবসমাজ রক্ষার্থে পুরোনো জেলখানাটি সংস্কার করে শিশু শোধনাগার হিসেবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। উঠতি বয়সের অনেক তরুণ-যুবক মাদক সেবন করতে পরিত্যক্ত কারাগারের ভেতরে আসা-যাওয়া করে।
উপকারাগারের দায়িত্বে থাকা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আবদুল আওয়াল দৈনিক কালবেলাকে বলেন, উপকারাগারটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ২০০৪ সালে। এ রকম সারা দেশে আরও ২৫টি উপকারাগার রয়েছে। তার মধ্যে ২৩টি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও দুটি মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখানে শিশু-কিশোর পুনর্বাসন কেন্দ্র হবে কি না, এখনো সে রকম দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তবে শুনেছি শেখ রাসেল শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন ২০১৪ সালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসক বরাবর হাইটেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি করার প্রস্তাবনার চিঠি পাঠানো হয়েছে। ২০১৮ সালে বেদখল হওয়া থেকে রক্ষার জন্য উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার বরাবর একটি প্রস্তাবনা চিঠি দেওয়া হয়েছিল।
বিরামপুর থানার ওসি সুমন কুমার মহন্ত বলেন, আগে এই পরিত্যক্ত উপকারাগারে জুয়া খেলা ও মাদক সেবন করা হতো বলে শুনেছি। এখন এর ভেতরে কোনোরকম জুয়া ও মাদক ব্যবসা চলে না।
উপজেলা চেয়ারম্যান খায়রুল আলম রাজু কালবেলাকে বলেন, পরিত্যক্ত উপকারাগারটি ভূতের বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এটি সংস্কার করে শেখ রাসেল শিশু ও কিশোর পুনর্বাসন শোধনাগার করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুজহার নাসনিম আওন দৈনিক কালবেলাকে বলেন, এই উপকারাগারটি ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত থেকে খাস খতিয়ানের জন্য বিরামপুর উপজেলা পরিষদকে হস্তান্তর করা হয়েছে। অতি শীঘ্রই উপ কারাগারের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে।
উপকারাগার পাহারাদার ইসলামপাড়া গ্রামের নরেন চন্দ্র দাশ বলেন, ২০ বছর ধরে এই পরিত্যক্ত উপকারাগারটি দেখা-শোনার দায়িত্বে আছি। যতটুকু সম্ভব দেখাশোনা করি, আমার অগোচরে অনেকেই এখানে নেশা সেবন করতে আসে। আমি নিষেধ করলে চলে যায়।
মন্তব্য করুন