মহান ভাষা আন্দোলনের ৭২ বছর পার হলেও সোনাগাজীর অধিকাংশ স্কুল-মাদ্রাসা, কলেজে গড়ে ওঠেনি শহীদ মিনার। সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই স্থায়ী শহীদ মিনার। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিছু প্রতিষ্ঠানে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ফুল দিতে যায় দূরের কোনো শহীদ মিনারে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেটিও হয় না। আবার যেসব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে, সেগুলো সারা বছর পড়ে থাকে অযত্ন-অবহেলায়।
শহীদ মিনার নেই এরকম কিছু প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ, কাপড় ও বাঁশের কঞ্চি দিয়ে অস্থায়ী শহীদ মিনার বানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করে।
স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মধ্যম সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী ২০২২ সালে কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার তৈরি করে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১১০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯৪টিতে স্থায়ী শহীদ মিনার নেই। এ ছাড়া ৪২টি কিন্ডারগার্টেন ও শতাধিক ইবেতাদায়ি-কাওমি মাদ্রাসাগুলোর একটিতেও নেই শহীদ মিনার।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ২৩টির মধ্যে ৫টিতে শহীদ মিনার নেই। ৪টি কলেজের মধ্যে ১টিতে শহীদ মিনার নেই। ১৬টি এমপিওভুক্ত মাদ্রাসার মধ্যে ১টিতেও শহীদ মিনার নেই। এ ছাড়া নন এমপিও অর্ধশত বিদ্যালয়-মাদ্রাসাগুলোর একটিতেও শহীদ মিনার নেই।
উপজেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে দেখা যায়, যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে, সেগুলিতে শিক্ষার্থীরা জুতা পায়ে বসে আছে। বেশিরভাগ শহীদ মিনার অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। অনেক শহীদ মিনারে লতা-পাতা, গাছ জন্ম নিয়েছে। শহীদ মিনারগুলোতে নিরাপত্তা বেষ্টনী নেই।
এনায়েত উল্লাহ মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ইসমত জেরিন ফারিহা বলেন, আমাদের কলেজে শহীদ মিনার নেই। আমরা উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গনে গিয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই। দুঃখের বিষয় আমাদের কলেজে শহীদ মিনার নেই। আমাদের কলেজে একটি শহীদ মিনার তৈরির দাবি জানাই।
বখতারমুন্সী ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নুরুল আবসার ফারুকী বলেন, আমাদের মাদ্রাসায় জায়গার সমস্যার কারণে শহীদ মিনার স্থাপন করা হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার নাছির উদ্দিন বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ গঠনে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার জন্য শহীদ মিনার বাঙালি জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। একুশের চেতনা নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে শহীদ মিনারের বিকল্প নেই। স্থানীয়ভাবেই এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার নুরুল আমিন বলেন, প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য অনেকবার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জায়গা, আর্থিক সমস্যার কারণে অনেকেই শহীদ মিনার স্থাপন করতে পারেনি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকা উচিত। আমি উপজেলার প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের অনুরোধ করব, যারা শহীদ মিনার তৈরি করেননি তারা অচিরেই তৈরি করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে এ ব্যপারে কথা বলব। শহীদ মিনার তৈরিতে আমরা সহযোগিতা করব।
মন্তব্য করুন