ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও অলিতে-গলিতে বেপরোয়াভাবে চলাচল করছে নিষিদ্ধ ট্রলি ও ট্রাক্টর। উপজেলার ছোটবড় সব সড়কে সকাল থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত বেপরোয়াভাবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব যানবাহন।
লাইসেন্স, সিগনাল লাইট ও হর্ণ ছাড়াই এগুলো রাস্তায় চলাচল করছে। এ সুযোগে অনেক অদক্ষ ও কিশোর বয়সের ছেলেরা চালাচ্ছে এসব গাড়ি। যার ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনাসহ রাস্তায় যানজট, কালো ধোঁয়া ও শব্দ দূষণ হচ্ছে। এ ছাড়াও এসব যানবাহনের কারণে গ্রামগঞ্জের কাঁচা-পাকা রাস্তা নষ্ট হচ্ছে। ট্রাক্টর চলাচলের কারণে বছর না ঘুরতেই পাকা রাস্তাগুলোই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি।
অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণে যানজটের পাশাপাশি প্রায় সময় ঘটছে দুর্ঘটনা। ট্রাক্টর শুধুমাত্র চাষাবাদের জন্য বৈধ থাকলেও এখন অবৈধভাবে পণ্য পরিবহন কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বল্প খরচে ভারী কাজ করানোর জন্য মাটি খেকুরা এসব যান ব্যবহার করেন।
এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধা না থাকায় উপজেলায় রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা চলছে এ অবৈধ পরিবহন। এসবের বেপরোয়া গতির কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এ ছাড়া এসব পরিবহনের বিকট শব্দের কারণে ঘটছে শব্দদূষণও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব যান তৈরি হয় মূলত হালচাষের জন্য। দেশে অসাধু লোকজন হালচাষের ট্রাক্টরে বডি লাগিয়ে পরিবহন হিসেবে ব্যবহার করছে। অথচ বাংলাদেশ মোটরযান আইনে পাকা রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের তালিকায় এসব পরিবহনের কোনো অস্তিত্ব নেই। সরকার শুধু কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য এসব যান আমদানির অনুমতি দিয়ে থাকে।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বিশেষ করে বিভিন্ন ইটভাটার মালিক এবং মাটি ও বালু বিক্রয়ের সিন্ডিকেটরা হাল চাষের ট্রাক্টরগুলোতে অবৈধ ট্রলি লাগিয়ে সড়কের উপর ছেড়ে দেয়। তাদের ইট, বালু ও মাটি পরিবহন করে এ ট্রাক্টরে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলায় প্রতিদিন প্রায় চারশ অবৈধ ট্রাক্টর বিভিন্ন ধরনের মালামাল নিয়ে অবাধে চলাচল করছে। বিকট শব্দে রাতের বেলাও ঘুমানো দায়। ফলে পথচারীসহ জনসাধারণকে সার্বক্ষণিক আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হচ্ছে। সড়কে চলাচলের অনুপযোগী এসব পরিবহনের কারণে কমছে রাস্তার স্থায়িত্ব।
অপর দিকে সামান্য বৃষ্টি হলেই ট্রাক্টর থেকে পড়ে যাওয়া মাটি পিচ্ছিল হয়ে রাস্তা মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। বালু পরিবহনের সময় ওপর দিকটা খোলা থাকায় বালু উড়ে এসে পথচারীদের চোখে পড়ে সমস্যার সৃষ্টি করছে।
এদিকে সরকার প্রায় এক দশক আগে সারা দেশে রাস্তায় চলাচলকারী পরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত সব ধরনের ট্রলি বা ট্রাক্টরকে অবৈধ ঘোষণা করে। এসব যান আটক করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সরকারের এ নির্দেশনার বাস্তবায়ন চান এলাকাবাসী। এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের দাবি, উপজেলা প্রশাসন যেন রাস্তাঘাট ও জনস্বার্থে ট্রাক্টর দিয়ে তৈরি অবৈধ এসব পরিবহন বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, এসব পরিবহন বেপরোয়া চলাচলের কারণে রাস্তায় প্রচণ্ড ধুলাবালি ওড়ে। স্কুলগামী শিশুসহ বয়স্ক মানুষের নিউমোনিয়াসহ শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশি আশঙ্কা থাকে।
মেহারী ইউনিয়নের শিমরাইল গ্রামের বাসিন্দা নাজির আহমেদ জানান, এসব ট্রাক্টরের চলাচলে আমরা খুব অসুবিধায় আছি। ট্রাক্টরের বিকট শব্দে চলাচলের ফলে রাতেও ঘুমাতে কষ্ট হয়। আমরা চাই প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এগুলো বন্ধ হোক।
সচেতন মহল মনে করেন এসব নিষিদ্ধ গাড়ি নিয়ন্ত্রণে আনা প্রয়োজন। তা না হলে দিনদিন এসব যানবাহনের প্রভাবে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা ইউএনও মুহাম্মদ শাহরিয়ার মুক্তার কালবেলাকে জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী এসব যানের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এসব যান চলাচল বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অচিরেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন