পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৩:৫৮ পিএম
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:৩৬ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

দুচোখই অন্ধ, পরীক্ষার হলে তাহমিনা

পরীক্ষা দেওয়া শেষে তাহমিনা তাবাসসুম মুনিরা (বামে) ও শ্রুতি লেখক মাহমুদা আক্তার (ডানে)। ছবি : কালবেলা
পরীক্ষা দেওয়া শেষে তাহমিনা তাবাসসুম মুনিরা (বামে) ও শ্রুতি লেখক মাহমুদা আক্তার (ডানে)। ছবি : কালবেলা

জন্মের পর থেকে পৃথিবীর আলো দেখেননি। তবুও থেমে নেই তাহমিনা তাবাসসুম মুনিরা। অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও দৃঢ় সংকল্পের বলে এবার দাখিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন তিনি।

তাহমিনা তাবাসসুম মুনিরা রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সুখানপুকুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ও নূরজাহান বেগম দম্পতির একমাত্র মেয়ে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসি সমমান পরীক্ষায় পীরগাছা হাজি ছফের উদ্দিন আলিম মাদ্রাসা থেকে শ্রুতি লেখকের সাহায্যে পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।

রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টায় ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, আলাদা একটি কক্ষে একই মাদ্রাসার নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাহমুদা আক্তার আরবি ১ম পত্রের প্রশ্নপত্র থেকে একটি একটি করে প্রশ্ন বলছেন মুনিরাকে। মুনিরা তা শুনে মুখ দিয়ে সেই প্রশ্নের উত্তর বলছেন, আর মাহমুদা আক্তার তা উত্তরপত্রে লিখছেন। এ সময় পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষারত মুনিরার পিতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। দুজনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। ছেলেটা বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে পড়ছে। মেয়ে মুনিরা জন্মগত দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। কিন্তু তার শ্রবণশক্তি ও স্মরণশক্তি প্রখর। তার পড়াশোনার প্রতি ছোটবেলা থেকে প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। যার ফলে তার অদম্য ইচ্ছা ও শিক্ষকগণের সহযোগিতায় এবার সে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছে।

মুনিরার মা নূরজাহান বেগম বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে গৃহশিক্ষক রেখে মুনিরাকে পড়াশোনা করিয়েছি। শিক্ষকরা মুখে বলত আর মুনিরা তা শুনে মুখস্থ করতে। আর এভাবেই সে পড়াশোনা করে আজ এ পর্যন্ত এসেছে।

মুনিরার মাদ্রাসার শিক্ষক আবু তালেব বলেন, মুনিরা অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। সে মাদ্রাসার প্রতিটি পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছে। সে তার প্রতিবন্ধকতা জয় করে এতদূর এসেছেন। তার মতো যারা প্রতিবন্ধী রয়েছে তারা মুনিরাকে দেখে অনুপ্রাণিত হবে বলে আমি মনে করি।

পীরগাছা হাজি ছফের উদ্দিন সিনিয়র আলিম মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কেন্দ্র সচিব আব্দুস সাত্তার বলেন, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী তাহমিনা আমার মাদ্রাসা থেকে বোর্ডের অনুমতি নিয়ে একজন শ্রুতি লেখকের সাহায্যে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমি তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

পরীক্ষা শেষে তাহমিনা বলেন, পরীক্ষা খুব ভালো হয়েছে। আমার বাবা-মা, সহপাঠী ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় আমি এতদূর এসেছি। আরও বহুদূর যেতে চাই। মা-বাবার স্বপ্নপূরণ করে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে চাই। আমরা যারা প্রতিবন্ধী তারা যে সমাজের বোঝা না, চাকরি করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সেই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে চাই।

তিনি আরও বলেন, আমি এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের বৃত্তি বা সরকারি সহযোগিতা পাইনি। যদি এগুলো পেতাম তাহলে আরও উৎসাহ বোধ করতাম।

শ্রুতি লেখক মাহমুদা আক্তার বলেন, আপু সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তাকে সাহায্য করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।

উপজেলা অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার ফারুকুজ্জামান ডাকুয়া বলেন, মুনিরার বিষয়টি শিক্ষা বিভাগ বা উপজেলা প্রশাসনকে এর আগে অবগত করা হয়নি। সম্প্রতি জানার পর তার বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি। উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য তো আবেদন করতে হয়। হয়তো সে আবেদন করেনি এ জন্য উপবৃত্তি পায়নি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ট্যাব ক্লাসের ১ম, ২য় ও ৩য় স্থান অর্জনকারীদের দেওয়া হয়েছে। হয়তো সে তার মধ্যে ছিল না। তারপরও দাখিল পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর তাকে সহযোগিতা করার ইচ্ছা আছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এমপি প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা / ৬ দফা দাবিতে ২৪ দিনের কর্মসূচি খেলাফত মজলিসের

রোহিতকে সরিয়ে নতুন ওয়ানডে অধিনায়কের নাম ঘোষণা করল ভারত

স্ত্রী-শাশুড়ি মিলে যুবককে হত্যাচেষ্টা, ঘরের বারান্দায় খোঁড়া হয়েছিল কবর

যে ৩ সময়ে আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে বেশি উপকার মিলে

হরাইজন মডেল ইউনাইটেড নেশনস সেশন-১ : এক অনন্য সফলতা

ছেলে হত্যার বিচার ঠেকাতে ষড়যন্ত্রমূলক নতুন মামলা, ক্ষোভে শহীদ ছায়াদের পরিবার

সেপ্টেম্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪১৭ মৃত্যু

সাধারণ যে ৬ ভুলের কারণে পারফিউমের ঘ্রাণ দ্রুত চলে যায়

বেনাপোল বন্দরে ৫ দিন পর আমদানি-রপ্তানি শুরু

হবিগঞ্জে নদী থেকে মাদ্রাসাছাত্রের মরদেহ উদ্ধার

১০

আমরা একটা ঐক্যবদ্ধ জাতি দেখতে চাই: জামায়াত আমির

১১

কিয়ামতের দিন যে ৫ প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কেউ রেহাই পাবে না

১২

গাজা নিয়ে ট্রাম্পের ২০ দফায় কী আছে, কেন তুমুল আলোচনা

১৩

ট্রলার সাজিয়ে নেচে-গেয়ে ঘরে ফিরলেন জেলেরা

১৪

ম্যাচসেরার পুরস্কার নিয়ে শরিফুলের মানবিক উদ্যোগ

১৫

ড. ইউনূসের মুখাকৃতি দিয়ে অসুর বানানোর বিষয়ে যা বললেন রিজভী

১৬

ভোটের পরিবেশ ফিরিয়ে আনবে বিএনপি : সেলিম ভূঁইয়া

১৭

ওড়িশায় ভারী বৃষ্টি, ভূমিধসে নিহত ২

১৮

আইফোন কিনতে কিডনি বিক্রি করা সেই তরুণ কেমন আছেন?

১৯

বিতর্কিত বিচারে সাতজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করল ইরান

২০
X